রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

একতারার একটি তারে / নির্মল হালদার






একতারার একটি তারে
---------------------------------

বেলা ফুরোয়
--------------------

যদি কাছে আসবেই দ্রুত এসো

বেলা ফুরোয়।

সূর্যাস্ত রঙের বিষণ্ণতায় কী কথা বলবো?

রাস্তা যদি দীর্ঘ হয়ে থাকে, আমাকে বলো,
আমি কাছে যাই, আমি সংক্ষিপ্ত হয়ে
নিজেকে গড়ালেই তোমার পায়ের কাছে

তোমার পায়ের তলার ঘাস বীজ চাই।


দু হাতে দাও
------------------

আবার কবে আসবে?

মুখটা যে মনে পড়ছে না

ভুলে যাওয়া দোষে আমি দোষী
আমাকে ক্ষমা করে, তোমার মুখ
আমার দু হাতে দাও

কেননা, তোমার মুখের ঘামও মনে রাখতে চাই।

-------৬ পৌষ ১৪২৮
------২২-----১২----২০২১



জমি
--------

পায়ের শব্দে কি আশ মেটে?
সামনে এসে দাঁড়াও।

আকাশ নাইবা হলে মাটিতো হবে

আমার দাঁড়াবার জায়গা।


সুবাস
----------

যেন ভুলে না যাই
এ কারণেই, আজও রোদ্দুর এসেছে।

আজও রোদের তাপ আমার গায়ে।

যেন ভুলে না যাই
এ কারণেই, তোকেও তো আসতে হবে রোজ।

তোর গায়ের গন্ধে ফুটবে,

চন্দ্রমল্লিকার সুবাস।


ভয়
------

হারাবার ভয় কেন যে আসে?
কাকেই বা হারাবো? কে আছে আমার?

একটা নদী মুঠোতে পেলে
মাটিতে নামাতে হয়।
একটা পাহাড় কাঁধে পেলে
মাটিতে নামাতে হয়।

কিছুই যে আমার নয়, কেউ নয় আমার।
কাকেই বা হারাবো? কী আছে আমার?


-------৭ পৌষ ১৪২৮
-----২৩----১২----২০২১



মন ভোজন//

আমি বনভোজনে নেই মন ভোজনে আছি।

নুন হলুদ তেল লাগে না, শুধু মন
একাকী নির্জনে মন ভোজন করি

মুহূর্তের পর মুহূর্ত

আমি সাজাই এক পাত মন, আমি সাজাই
আমার আনন্দ-বেদনা,

চোখের জলের হাসি।



চুম্বন//

ভালোবাসলেই ভোর আসে

পাখিদের কিচিরমিচর

গাছপালার ডাক

ভালোবাসলেই শিশির জলে তোর মুখ
আমার পায়ে তোর চুম্বন।



কাব্যের দিকে//

শুধু কি মন লেখে? শরীরও লেখে শরীরের কবিতা।

আমি শরীরের দিকে যাই।

ঘাম রক্ত ছড়িয়ে তুমি এসে সামনে দাঁড়াও

তুমি নগ্ন প্রতিভা।

আমার শরীর মন নগ্ন করে আমাকে কাঙাল করো,

আমি কাব্যের দিকে যাই।

------৮ পৌষ ১৪২৮
------২৪----১২----২০২১


ছায়া
-------

ছায়াটা পাঠাও।

যতদূরেই থাকো ছায়াটা পাঠাও।

তোমার ছায়া জড়িয়ে তোমারই ওম
আমার যে শীত করছে।

আমার শীতে আবেগ নেই
তোমার আবেগের ছায়াটা দাও।

যদি ছায়া কাঁপেও আমাকে দাও।

আমি হৃদপিন্ডে স্থাপন করবো।


সম্পর্ক
------------

সম্পর্ক করতেই এই জন্ম

সম্পর্ক করতেই আকাশ মাটি জল

সম্পর্ক করতেই ফসলের ডাক।


সম্পর্ক করতেই, এই যে তুমি
আমাকে ইশারা করলে,
আড়াল হয়েও গেলে,
এই জন্ম ব্যর্থতার দিকে যায় না,

তোমার দিকেই যায়।

------৯ পৌষ১৪২৮
-----২৫----১২----২০২১


প্রণাম
----------

আমাকে প্রণাম পাঠালি তুই

আমার যে অস্তিত্ব নেই

প্রণামটি তুলে নিয়ে অথবা
তোর প্রেম তুলে নিয়ে পাখির কাছে রাখলে
পাখির পাখায় আসবে পাহাড়

পাহাড়ের কাছে প্রণাম রাখবি তুই।

মুখ
-------

কুয়াশা নামছে ধীরে ধীরে

অস্পষ্ট মুখ।

কার মুখ?

কার মুখ খুঁজতে খুঁজতে নিজেরই মুখ?
ফুঁ দিয়ে ওড়াই মুখের ধুলো

রোদ্দুর ওঠে।

-----------------------
-----১০ পৌষ ১৪২৮
-----২৬-----১২----২০২১
-----নির্মল হালদার




একতারার একটি তারে / নির্মল হালদার



একতারার একটি তারে//


ব্যর্থতার পরেও//

সকল ব্যর্থতার পরেও প্রেম থাকে, শুধু
একটি প্রদীপ জ্বালিয়ো।

প্রদীপের শিখাই তো চাঁদের শিখা

সূর্যের কিরণ

নিঃশব্দে--নীরবে।




আঁচল//

আঁচলে লেগে থাকা আলো অন্ধকার,
দু হাত পাতলেই।

আঁচল উড়ছে।

আঁচল উড়ছে আকাশ জুড়ে
হাওয়ায় হাওয়ায়।

আঁচল উড়ছে।

আঁচলে লেগে থাকা ধুলো, দু হাত পাতলেই।




রাঙা ফল//

রাঙা ফল কাছে না এলেও কাছে

আমি যে চেয়ে আছি
আমি নিকটেই আছি

না--চাইলেও রাঙা ফল আমার

আমার অনুভবে
আমার প্রার্থনায়

না---চাইলেও রাঙা ফল আমার শুভকামনা।

-------২৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-------১৪------১২----২০২১



জোনাকি//

রাত্রির অন্ধকারে জোনাকিরা স্বপ্ন ছড়ায়

যে পারে কুড়ায়
যে পারে বুকের ভিতরে লুকায়
যে পারে প্রদীপ জ্বালায়

মেয়েরা চুলে গুঁজে গরব করে।

একটি শিশু--জোনাকি আমার কাঁধে

আমি ডানা ঝাপটাই।




দারিদ্র রেখা//

দারিদ্র রেখা একটি রেখা
বাতাসেও আঁকা থাকে, শুধু
আমাকে চিনতে হবে, দারিদ্র্য রেখার নিচেও
কারা থাকে। কারা খুদকুঁড়োর স্বপ্নে
রাত্রি জাগে।

রাত্রি এক সময় যখন মাথা গুঁজতে হয়।
যখন মাথায় রাখতে হয় ইঁট।



হেমন্তের শেষ বেলা//


মেঠো ইঁদুর ধান নিয়ে গেল।

ক্ষেতে পড়ে আছে কাটা ধান, শিশিরে ভিজছে।

কুয়াশা নামছে ধীরে ধীরে।

হেমন্তের শেষ বেলায় ঘরে ফিরছে পাখিরা।

আমিও ওদের সঙ্গে আকাশ থেকে নামি।

যদি একটা বাসা পাই।



-----২৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----১৫-----১২-----২০২১



গাছ//

শালিখের সঙ্গে উড়লে একটা গাছ।

ফুল-ফলের সংসার।

পাতার আড়ালে কান্না।

লুকানো কান্নার অভিমানে গাছ হয়ে ওঠে সরল।


প্রকৃতি//

তুমি আর কী দেবে?

প্রকৃতি ছড়িয়ে রেখেছে তোমার সামগ্রী,
তুমি যা ইচ্ছে তুলে নাও।
আমি আমার রঙ তুলে সেজে উঠেছি।

আমার কাঁধের পিছনেই সূর্য উঠেছে।

সূর্যোদয়ের রঙ বুকে নিয়ে তুমিও হেঁটে যাও
ওই খরগোশের দিকে।

ওই প্রাণ, ওই উল্লাস।

তোমার কোলে উঠবে।


প্রাণ//

আলো তো আছেই,
শুধু একটু ঘাম মেশাও।
অন্ধকার তো আছেই,
শুধু একটু ঘাম মেশাও।

আলোর গায়ে গা লাগিয়ে
আত্মীয়তা এগিয়ে যাবে।
অন্ধকারের গায়ে গা লাগিয়ে
আত্মীয়তা এগিয়ে যাবে।

শুধু একটু প্রাণ মেশাও।

------২৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------১৬----১২----২০২১


যদি ভালবাসবে//

যদি ভালবাসবে কাছে এসো,
আজ সকালে ফুটেছে চন্দ্রমল্লিকা।
প্রকৃতির দান দুহাত ভরে
যদি ভালবাসবে ভালবাসো।

আমার যে কেউ নেই।

তুমি আলো হয়ে আমার সর্বস্ব হও।
তুমি অন্ধকার হয়ে আমার সর্বস্ব হও।

যদি ভালবাসবে দেরি করো না।

আমার সময় যে
আমার মুঠির ফাঁকে ঝরে ঝরে যায়।


সীমা//


কে খুঁজছে কাকে পাতার শিরা-উপশিরায়?

ধূলাতে খুঁজে নাও ধূলার মুখ

তুচ্ছ করো অসীমের কাছে।

সীমায় সীমায় সংকীর্ণতা আমাকে দোষী করে।


------৪ পৌষ ১৪২৮
-----২০----১২----২০২১
-----নির্মল হালদার



সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

একতারার একটি তারে / নির্মল হালদার

একতারার একটি তারে //



পাথর//

পাথরের মন থেকে লতাগুল্ম

পাথরের মন থেকে পাথরের সজীবতা

পাথরই ছিল একদিন রক্ত-মাংস

পাথরই ছিল একদিন আনন্দ বিষাদ।



কলস//

লাঙ্গলের ফলায় উঠে এসেছে একটি সোনার কলস

কলসিতে সোনাদানা নেই আছে শুধু জল

প্রাচীনকালের জল।

এক কলসি জল পুঁতে দিয়ে গেছলো মাটির তলায়

এক মেঘবতী কন্যা।



আগুন চাই//

ফুঁ দিলেই সূর্যের আঁচ বাড়ে

আগুন চাই।

অনেক রান্না বাকি।

অনেক খিদে বাকি।

ফুঁ দিলেই হু--হু করে আগুন।

আগুন চাই।

আগুনের আলোয় দেখা যাবে,

বিধ্বস্ত মুখ।


-------২১ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৮----১২----২০২১



পাথর//

পাথর ছোঁড়ার আগে পাথরের মনকে দেখো
সে কি আর অস্ত্র হতে চাইছে!
সেতো চাইছে কুশল সংলাপ।

কুমারী--টটকোর ছায়া রচনা করবে শয্যা।

সৃষ্টির ভূমি।



তীর ধনুক//

ব্যাধের কাঁধ থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে
আমাদের হরিণ আমাদের পাখি।
তীর-ধনুকটা ঝুলছে তাই হরিণের শিঙে। পাখির ল্যাজে।

কাঁধ থেকে টাঙিও পড়ে গেছে

আর রক্তমাংসের উল্লাস নেই।



নাকছাবি//

আকাশ থেকে পেড়ে দেবো তোর নাকছাবিটি।

তোর ফুর্তি তোকেই দেবো।

আমার মনের ভার তোকেই দেবো।

বহন করতে না পারলে
গাধার পিঠে উঠিয়ে দিস।



------২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৯----১২----২০২১



প্রকৃতি
----------

প্রকৃতিতে যা আছে
সকলেই আমার পিতৃ-পিতামহ।
প্রকৃতিতে যা আছে
সকলেই আমার মাতৃ--মাতামহ।

প্রকৃতিতে ঝড় এলে আমি কাঁধে তুলে নিই।
প্রকৃতিতে বৃষ্টি এলে আমি কাঁধে তুলে নিই।

সকাল সন্ধে
প্রকৃতির কাছে আমার প্রণতি।



ছন্দ
--------

রাস্তা অকেজো হলে মেরামত করতে হয়।

যেমন ঢোল--ধামসা ছিঁড়ে গেলে
মেরামত করতে হয়, ঢোল---ধামসার তালে তালে
নাচতে হবে যে

তেমনি রাস্তার ছন্দে চলতে হবে যে।

অথবা,
পায়ের ছন্দে রাস্তাকে চলতে হবে যে।



সূর্য
-------

সূর্য নিভে গেলে অজস্র চোখ আলো জ্বালাবে।

আলো ফুরানোর কথা নেই।

হৃদয়ের কথাও ফুরোবে না।

হৃদয়ে হৃদয় যোগ করে
এক একটা সূর্য।
আমাকে স্নেহ করে, আমি হেঁটে যাই
সূর্যের দিকে।

সূর্য আমার অগ্রজ।



২৩ অগ্রহায়ণ১৪২৮
১০----১২----২০২১


পিঁপড়ে//

হাতির পিঠ থেকে নেমে পিঁপড়ে চলে যায়
নিজের বাসাতে। পিঁপড়ের ডিম
পিঁপড়ের পায়ের কাছে আসে।

পিঁপড়ে--মায়ের কাছে আসে।

শব্দ হয় শব্দ হতে থাকে স্নেহ ভালবাসার।



ব্যক্তিগত//

সবারই একটা গোপন নদী আছে। যে নদীতে
সুখ-দুঃখ ভাসে। যে নদীতে প্রজাপতি পাল তুলেছে। যে নদী সাগরে যায় না।
যে নদী ব্যক্তিগত।

যে নদীর জলে মুখ দেখা যায়।



------২৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------১১----১২---২০২১



একমুঠি//

সফলতা রাস্তায় নামলে
রাস্তা মসৃন হয়ে ওঠে, সহজ হয়ে ওঠে।
সঙ্গি হয়ে ওঠে।

সফলতা এসো, খালডোব রাস্তায়

সফলতা এসো, ভাঙ্গা থালায়

দিনের শেষে আমারও একমুঠি জুটবে।



সৌন্দর্য//

ব্যর্থতা নেই সফলতা নেই

ব্যথা আছে।

অনেক দূরের ব্যথা অনেক কাছের ব্যথা
মেঘের মতো থরে থরে সাজানো
প্লেটে প্লেটে সাজিয়ে দিলেও চমৎকার।

সুগন্ধ ছড়ায়।

সৌন্দর্য ছড়ায়।

স্পর্শ করার আকাঙ্ক্ষা থেকে আনন্দ আসে,
আরেক ব্যথা।
টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো লাল।



স্বপ্ন//

স্বপ্ন তো একরকম বাঘ
হাঁ করবেই।
আমিও বাঘের মুখে ছটফট করি।

স্বপ্নেরা শুধুই বাঘ হলে
রামধনু আঁকবোনা আর।
আমার ললাট থেকেও মুছে ফেলবো
স্বপ্নের আঁকি-বুকি

স্বপ্নের ঘাম।


-----২৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----১২----১২---২০২১



দুঃখের বীজ//

দুঃখের মতো ছোট-বড় বীজগুলি
একলা রেখোনা।
ওর দুঃখ তার দুঃখ
তোমারই সঙ্গে রাখো।

তুমিও দুঃখের স্পর্শে বীজের গভীরে যাবে।

দেখবে, মানুষ একা একা কাঁদছে।



সুন্দরতা//

সুন্দরতা, এই দিকে এসো-------
ওই গাছে মুকুল আসেনি।
সুন্দরতা, পথে নামো
ন্যাংটো শিশুর হাত ধরো।

অপমানের পাশে দাঁড়াও।

সুন্দরতা,
তুমিই তো বুকের হাওয়া
লাঙ্গলের ফলায় শত শত জন্ম
বিরহীর নিঃসঙ্গতা,

সৃষ্টি।



বাঁশি//

বাঁশির সুরে মাঠের সবুজ
সবাইকে সবুজ করে
সবাইকে প্রশস্ত করে।

বাঁশির সুরে মাটির গান
সবাইকে কোমল করে
সবাইকে আলো করে।

বাঁশির সুরে বীজের কথা।

আকাশও গর্ভিনী হয়ে ওঠে
নতুন তারার জন্ম দেবে বলে।


-------২৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------১৩----১২----২০২১
------নির্মল হালদার





মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১

একতারার একটি তারে / নির্মল হালদার


একতারার একটি তারে//

অন্ধের আঙুল//


সোনার কাঠি রুপোর কাঠি নেই
অন্ধের আঙুল ছুঁয়ে যাবে ধুলামাটিশিকড়

জেগে উঠবে অন্ধকার।


চোখ//


ঘোড়ার পিঠে হাওয়া আসছে।

হাওয়া,
কোন্ রাজকন্যার মুছিয়ে দেবে চোখ?
কোন্ ঘুঁটে কুড়ানির মুছিয়ে দেবে চোখ?

হাওয়া এসে দাঁড়ালো তুলসী তলায়

প্রদীপ জ্বলছে।

দু হাত আড়াল করা প্রদীপের আলো
আমার দুখিয়ার চোখ।


------১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----৫----১২----২০২১



ভার//


গাছের কাঁধে আকাশের ভার

আর কী কাঁধ নেই একটাও?

নামাও নামাও এই ভার
পাতার ফাঁকে আকাশের রঙ দেখতে হবে না

নামাও নামাও এই ভার
গা--ঝাড়া দিয়ে উঠবে গাছ।


হাতিয়ার//


ছুঁচটা ভেঙ্গে গেছে

রাজার বেটা রাজা ধার দেবে ছুঁচ


কাঁথা কানি কি সেলাই করা যাবে?

রাজার ছুঁচে যদি মরচে থাকে?

রাজার ছুঁচ যদি আঙুলে ফুটে যায়?

দশটা আঙুলই তো আমার হাতিয়ার।


ভয়//


আলো নিভে গেলে জোনাকিরা যায় চন্দ্র সূর্যের কাছে।

চন্দ্র-সূর্য নেই, শুধু ভয়।

ভালোবাসা নেই, শুধু ভয়।

হাওয়া ছুঁতে গেলেও ভয়, শুধু ভয়।

শিশিরের ঝলকে আগুন ওঠে।


------১৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৬----১২----২০২১


থালা
----------

শূন্য থালা বাজতে বাজতে উঠে গেল উপরে

কার থালা? কোন্ ভিখারির থালা?

যদি এক থালা তারা আসে, সুগন্ধ ছড়ায়?
কার মুঠিতে উঠবে? কার মুখে?

চারদিকেই তো ভিখারি

আমারও ভিখারি জীবন।


আলোবাসা
------------------

পায়রার টংয়ে কে খুঁজছে হাওয়া?

কে খুঁজছে পায়রার পাখার হাওয়া?

আছে তো আরো কোকিলের হাওয়া

আছে তো আরো কাকের হাওয়া

আরো এক ঠাঁই আছে আঁচলের হাওয়ায়

আরো এক ঠাঁই আছে আলোবাসায়।


শিকড়
-------------

মাটির অনেক দুয়ার আকাশে অনেক জানলা

দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়জন
জানলায় প্রিয় মুখ।

সকলের হাসি লতিয়ে লতিয়ে সবাইকে বাঁধে

সবাইকে বাঁধে শিকড়ের প্রবাহে।


-------২০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৭-----১২-----২০২১
-------নির্মল হালদার







একতারার একটি তারে / নির্মল হালদার


একতারার একটি তারে//


অন্ধের আঙুল//


সোনার কাঠি রুপোর কাঠি নেই
অন্ধের আঙুল ছুঁয়ে যাবে ধুলামাটিশিকড়

জেগে উঠবে অন্ধকার।


চোখ//


ঘোড়ার পিঠে হাওয়া আসছে।

হাওয়া,
কোন্ রাজকন্যার মুছিয়ে দেবে চোখ?
কোন্ ঘুঁটে কুড়ানির মুছিয়ে দেবে চোখ?

হাওয়া এসে দাঁড়ালো তুলসী তলায়

প্রদীপ জ্বলছে।

দু হাত আড়াল করা প্রদীপের আলো
আমার দুখিয়ার চোখ।


------১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----৫----১২----২০২১



ভার//


গাছের কাঁধে আকাশের ভার

আর কী কাঁধ নেই একটাও?

নামাও নামাও এই ভার
পাতার ফাঁকে আকাশের রঙ দেখতে হবে না

নামাও নামাও এই ভার
গা--ঝাড়া দিয়ে উঠবে গাছ।


হাতিয়ার//


ছুঁচটা ভেঙ্গে গেছে

রাজার বেটা রাজা ধার দেবে ছুঁচ


কাঁথা কানি কি সেলাই করা যাবে?

রাজার ছুঁচে যদি মরচে থাকে?

রাজার ছুঁচ যদি আঙুলে ফুটে যায়?

দশটা আঙুলই তো আমার হাতিয়ার।


ভয়//


আলো নিভে গেলে জোনাকিরা যায় চন্দ্র সূর্যের কাছে।

চন্দ্র-সূর্য নেই, শুধু ভয়।

ভালোবাসা নেই, শুধু ভয়।

হাওয়া ছুঁতে গেলেও ভয়, শুধু ভয়।

শিশিরের ঝলকে আগুন ওঠে।


------১৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৬----১২----২০২১


থালা
----------

শূন্য থালা বাজতে বাজতে উঠে গেল উপরে

কার থালা? কোন্ ভিখারির থালা?

যদি এক থালা তারা আসে, সুগন্ধ ছড়ায়?
কার মুঠিতে উঠবে? কার মুখে?

চারদিকেই তো ভিখারি

আমারও ভিখারি জীবন।


আলোবাসা
------------------

পায়রার টংয়ে কে খুঁজছে হাওয়া?

কে খুঁজছে পায়রার পাখার হাওয়া?

আছে তো আরো কোকিলের হাওয়া

আছে তো আরো কাকের হাওয়া

আরো এক ঠাঁই আছে আঁচলের হাওয়ায়

আরো এক ঠাঁই আছে আলোবাসায়।


শিকড়
-------------

মাটির অনেক দুয়ার আকাশে অনেক জানলা

দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়জন
জানলায় প্রিয় মুখ।

সকলের হাসি লতিয়ে লতিয়ে সবাইকে বাঁধে

সবাইকে বাঁধে শিকড়ের প্রবাহে।


-------২০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৭-----১২-----২০২১
-------নির্মল হালদার






সান্ধ্য পাঠ / নির্মল হালদার



সান্ধ্য পাঠ / নির্মল হালদার


দুপুর থাকতে থাকতে আমার লম্বা-চওড়া বিছানা হয়ে গেছে। শীত করছে।
মেঘ থাকলে শীত বোধ প্রখর হয়ে থাকে। কাল রাত থেকেই মেঘ করেছে। সকাল থেকে টুপটাপ। তখন থেকেই শীতের ভয়।
যদিও সকাল সাড়ে সাতটার আগেই
আমার স্নান হয়ে গেছে। স্নান করলে
শরীরের জড়তা কেটে যায়।

দুপুরের পর শীতটা আসে।
মনে হয়, লেপ জড়িয়ে শুয়ে পড়ি।
একা একা।
প্রতিদিন একাই শুয়ে পড়ি। যদিও
বিছানার এক প্রান্তে আরেকজন শুয়ে থাকে। বিছানার মাঝের জায়গাটা যেনবা কোনো মাঠ।
যেদিন থাকে না সে, আমি সম্পুর্ন একা একটা মাঠের একদিকে। মনে হয় আমার।

আজও বিছানা করে শুয়ে পড়েছি একদিকে। অন্যদিকে একটা বালিশ আছে শুধুমাত্র।

সে বাড়ি গেছে।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে। লেখাপড়া করছি না। মনে মনে মেঘ আকাশে তারা খোঁজার চেষ্টা করছি।

একটা তারা মানে একটা মুখ।

অসংখ্য মুখতো আকাশে জ্বলজ্বল করে। আমাকে শুধু চিনে নিতে হয়
কোন্ মুখটা কার।

একটু আগে চা বিস্কুট।

টিভি খুলেছি। প্রতিদিনের মতো
বস্তা পচা সিরিয়াল ও অশ্লীল খবর।
আমার ভাল্লাগে না।

পড়াশোনাও করি না।

কী করি?

মনে মনে হাৎড়াই মনের কোন্।
যদি খুঁজে পাই, কোনো ধনরত্ন।
দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, রঞ্জন।
দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, অনিকেত।
দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য।
এসে দাঁড়িয়েছে, মিলন। অসিত।
দুলিয়া। এবং আমার বন্ধ দরজা খুলে
উঁকি দিয়ে যায় আমার ব্যর্থতা।

ব্যর্থতা কাকে বলে?

সফলতা কাকে বলে?

আমাকে আমি শুধাই। উত্তর পাই না।

রঞ্জন কম বয়সেই চাকরি পেয়ে গেছে।
আমার চাকরি?

প্রতিদিন একেকটা ঘরে এক একটা চাকরি যদি পাই, কেমন হবে?
ওর ঘরে জুতা পরিষ্কার করে দেবো।
তার ঘরে, জামা কাপড় ইস্ত্রি করে দেবো। আরও একটা ঘরের বাজার করে দেবো। আরও আরও ঘরের
দরজা-জানলা মুছে দেবো।

কারোর ঘর থেকেই কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। কেবল কারুর ঘরে
জলখাবার। কারো ঘরে দুপুরের আহার। কারো ঘরে রাত্রের রুটি। কেউ কেউ টাকা দিতে চাইলেও "না"করবো।

টাকা বললেই, ভয় করে আমার।
গুনতে পারিনা।

টাকা উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে খুব।

এই অবধি তো এলাম, চেয়ে দেখি
বিছানাটা হাঁ করে চেয়ে আছে আমার দিকে।
আমারও ঘুম আসছে।

ঘুমোবো না।

-------৪----১২---২০২১


সান্ধ্য পাঠ-------২

দুপুরের বিরক্তি পার হয়ে টুপটাপ সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছি।
বৃষ্টি।

ওদিকে মাঠে পড়ে আছে কাটা ধান।
চাষীদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
ক্ষতিপূরণ করার মত কোনো সরকার নেই। চাষীদের গলায় শুধু হাহাকার।

নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
একটা শাকের আঁটির দাম দশ টাকা।
কোথায় যাবে মানুষ?

আমি তো ঘরে থাকি। আমাকে দিন মজুরির কাজ খুঁজতে হয়না। 
আমি কেবল ঘরে থেকে মনের কাজ খুঁজি। সব সময় পাইনা। কখনো কখনো স্নায়ু বিকল হয়ে থাকে। অথবা
কখনো কখনো স্নায়ু চাপ নিতে পারে না একেবারেই।
মনের দুয়ার বা মনের ঘর বন্ধ হয়ে থাকে। কী লিখবো? কাকেই বা লিখবো আমার কবিতা?

আমি শব্দশ্রমিক।
আমাকে খুঁজতে হয় কবিতা কোথায় আছে। যদি পাই, কাজে যে লাগবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিফলতা
এসে দাঁড়ায়।
তখন ছটফট করি। অস্থির হই। তখন
এ প্রান্ত ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াই। একটিও
ময়ূর কিংবা কাক ধরতে পারিনা।

কাক সব সময় কবিতায় এসেছে।

কাক আমাদের সঙ্গী।

যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি, সেই মাটির কথা আমি কি বলতে পারি সহজ ভাষায়?

বর্তমানে মাটির দাম সবচেয়ে বেশি।

ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না আর।

মন ফাঁকা থাকলেও জায়গা ফাঁকা নেই। জমির দাম হু হু করে বাড়ছে।
আগামী কোনো দিন পাহাড় ভেঙ্গে
মানুষ বসতি করবে।

কার কোলে ছায়া খুঁজবে নোলক ও তার প্রেমিক?


------১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৫-----১২----২০২১



সান্ধ্য পাঠ--------৩

শীত এলেও আমার জানালাটা খোলা থাকে। যদি কাক এসে বসে? যদি একটা পায়রা এসে বসে?
পায়রার মুখ থেকে একটা চিঠি পড়বে ঘরের ভিতরে।

বহুযুগের ওপারে পায়রাইতো আমাকে চিঠি দিয়ে গেছে প্রতিদিন।

পায়রা, প্রতিদিনের সঙ্গি।
অথচ আমার কবিতায় একটি চরিত্র হয়ে উঠল না পায়রা।

কাক বরং কবিতার চরিত্র।
কাক অনেক ইঙ্গিত বহন করে।

তো পায়রার জন্য আমি অপেক্ষা করি। কখন আসবে সে? যদি আসে
আমাকে চিঠি দিয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
সেই চিঠিতে আমার ই অনুভূতি লেখা থাকবে।

অনেকের সঙ্গেই আজ আর কোনো সম্পর্কের অনুভূতি কাজ করে না। কেবল অভ্যাসবশত  কোনো কোনো সম্পর্কের সঙ্গে ভালো--মন্দে থাকি।
এটুকুই।

একদিন যাকে ছাড়া আমার দিন কাটতো না, আজ তাকে দেখেও
আমার অনুভূতিরা স্তব্ধ হয়ে থাকে।

একদিন যাকে ছাড়া এক দন্ড চলতো না, আজ তাকে দেখেও আমার আবেগ কাজ করে না।

যদি দুজনের দুটো হাত কাছাকাছি আসতে চায়, তবে দেখবো কেউ কাউকে ছুঁতেই পারিনা।

স্পর্শ সম্পর্কের আরেকদিক।
অথচ কেউ কাউকে স্পর্শ করছি না আর। এখানেই বলতে হয়, মনের স্পর্শ নেই। আগে তো মন ছোঁবে আর এক মন। তারপর তো হাতের উপরে হাত।
উষ্ণতা।

না, কোনো তাপ উত্তাপ নেই।
শুধু সম্পর্কের সেতুতে আসা যাওয়া।
এই আসা-যাওয়ার মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় শুধু ‌। হৃদয়ের বিনিময় নেই ‌।

হৃদয় দিয়েই তো হৃদয় চিনতে চাই।

------২০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৭-----১২----২০২১









ঘুম অথবা ঘুম তাড়ানো / নির্মল হালদার




ঘুম অথবা ঘুম তাড়ানো / নির্মল হালদার


ঘুম আসছে। ঘুমোবো না।

ঘুম তো আর গরু ছাগল নয় তাড়িয়ে দিলেই চলে যাবে।

ঘুম আসবেই।

ঘুম তাড়ানোর জন্য একটার পর একটা বিড়ি ধরাই।

কি আশ্চর্য, ঘুম আসছেই।

চারদিক থেকে ঘুম আমাকে ঘিরে ধরছে। মুদে আসছে চোখের পাতা।
আমি চেষ্টা করছি, দূরে থাকা স্মৃতিকে জড়ো করা। যদি রোমন্থন করতে করতে ঘুম কেটে যায়!

প্রথমে আমার স্মৃতি আমার বন্ধুরা।
যারা দূরে চলে গেছে। কেউ কেউ অকালপ্রয়াত। অকালপ্রয়াতদের মধ্যে
লালটু একজন। যে গতকাল এসেছিল আমার কাছে রাত্রিবেলায়।
আমি তাকে আজ প্রথমেই বললাম,
তোর সঙ্গে কথা বলবো না। সে হাসলো। যে হাসি তার জীবিত অবস্থায় দেখিনি। আমার ভয় হলো।
এই হাসি যদি আমাকে জড়িয়ে ধরে?
ঘুম হয় তো কেটে যাবে, তারপর?
হাসি যদি আমাকে না ছাড়ে?

আমি মাকে কাছে ডেকে বসাই।
আক্ষেপের সুরে বললাম, এত তাড়াতাড়ি তুই না গেলেই পারতিস।
কার কাছে রেখে গেলি আমাকে?
মা বললো, মায়েরা কি চিরকাল থাকে? এইতো বেশ আছিস তুই।
আমি রেগে গেলাম।

দেখি সাড়ে তিনটে বেজে গেছে।
চলে গেছে ঘুমের অনেকটা সময়।
আরও এক ঘন্টা লাগবে। ঝিলমকে
ডাকি। সে হাসি হাসি মুখ করে আমার সামনে দাঁড়ায়। বলে--------এইতো একা থাকতে পারছো তুমি। কোনো কষ্ট নেই আর। 

কষ্ট নেই?

ঝিলম আমার কষ্টের তুই কিছু বুঝবিনা। তুই তো চলে গেছিস আমাকে ছেড়ে। একবারও ভাবলিনা,
কাকা কার কাছে থাকবে কার সঙ্গে থাকবে? কাকা খাবে কোথায়? কে দেখবে কাকাকে?
একবারও ভাবলি না তুই। তুই থাকলে
আমার এতটা কষ্ট ভোগ করতে হতো না। সেই ভোর থেকে রাত অব্দি আমি একা। ভাত খেয়ে থালা-বাটি ধুতেও আমার শাস্তি মনে হয়। জল শেষ হলে
আবার জল আনতে পরিশ্রম হয়।
সেইসঙ্গে দিন রাত আমি একা।
তুইতো একবারও চিন্তা করিস নি, কী ভাবে কাকার দিন কাটবে!

ঝিলম হাসে। সে বলে, আরতো ফেরার উপায় নেই।
আমি এবার দুরছাই বলে, উঠে দাঁড়াই। গাছে গাছে জল দিতে হবে।

তাতেও কেটে যাবে অনেকটা সময়।
ঘুম ও চলে যাবে।
যাবে কী?

দিদিদের সঙ্গে কথা বললে হয়।

আজকাল মেজদি জিজ্ঞেস করেনা,
কী দিয়ে ভাত খেলাম। আজকাল জিজ্ঞেস করেনা, ভাই গেঞ্জি আছে তো? যদি ছিঁড়ে গেছে আমি শৈলেনের হাতে পাঠিয়ে দেবো।
সেজদিও তুলিন যেতে বলছে না।
ছোড়দি যেতে বলছে না ধানবাদ।
আর বড়দি?
আমার কাছে দিনের পর দিন থেকেও
সেই যে চলে গেল আর আসে না।
ডাকলেও আসেনা।
ঘুম তাড়ানোর জন্য বড়দির সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। সাড়া পাইনা।
কেমন আছে কে জানে!

আমার চার দিদির ছায়া কোন্ ঈশ্বর
নির্মূল করে দিয়েছেন জানি না।
আমি যে আশ্রয় চাইছি।

নিভৃত নির্জন ছায়ার মতো আশ্রয়।

ফোন করে সময় কাটানো যায় না।
কেননা, ফোন করার কেউ নেই আমার।
দু'একজন থাকলেও ব্যস্ত খুব। সংসারী খুব। মনে মনে তাই, তালগাছকে ডাকি। তালগাছের মাথার দিকে চেয়ে থাকলে সময় কাটে।

আমি তো লেখাপড়া করি না।

লেখাপড়া করলে সময় কাটানোটা
কোনো ব্যাপার ছিল না। আর সত্যি কথা বলতে কি, দুপাতা পড়তে পড়তে
আমার ঘুম এসে যায়।

আমি শরীর ও মনে দুর্বল। আমার দ্বারা কোনো কাজ হলো না কোনো দিন।আমি নখ কাটতেও ভয় করি।

নানা রকম দ্বিধা ও সংশয়ে আমার দিন কাটে।

যখন কথা আসে আমার ভেতর থেকে
তখন সামনে কাউকে পাইনা। যদি বা পাই, কথা বলা যায়না।

কল্পনারও একটা সীমা আছে।
কত আর স্বপ্নে ও কল্পনায় দিন কাটাবো!

সারাক্ষণ মনে হয়, আকাশ আমার লেখার জায়গা। আমি লিখবো আমার ইচ্ছে মত--------হিজবিজবিজ।


------১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৭-----১১----২০২১
-----নির্মল হালদার





মিছে কলরব / নির্মল হালদার



মিছে কলরব / নির্মল হালদার


গান শুনছি।
আবেগী হয়ে উঠলাম।
গানে গানে মনে হলো, একটা প্রেম করা দরকার। ছল ছল করে উঠলো বুক। সামনে এসে দাঁড়ালো অজস্র মুখ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিয়ে গেল সবাই। আমার আবেগ উধাও।

একটা বই পড়ছিলাম। কোনো প্রেমের গল্প নয় উপন্যাস নয়। সাধারণ লেখা।
পড়তে পড়তে ভেসে উঠলো একটা মুখ। মনে হলো, নিকটে যাওয়ার প্রয়োজন খুব। চিক চিক করে উঠলো
চোখের কোনা।

মুহুর্তের মধ্যে এসে পড়লাম আবার
বইয়ের ভেতরে।

আজ সকালবেলা সবজি বাজারে
টাটকা পালংশাক দেখে দাড়িয়ে পড়লাম। মনে হলো, কোথাও যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু কোথায়?

খুঁজে পাচ্ছিনা সেই ঠিকানা।

মন খারাপ হয়ে গেল।

এখানে একটা কথা বলতে চাই,
পালং শাকের টাটকা রঙ কি আমাকে আবেগী করে তুলেছিল?

বাবার হাত ধরে ছেলেটি কোথাও যাচ্ছে। আমি এই ছেলেটির মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। মনে হলো,ওর
বয়সটা আমি আর পাবো না।

চিনচিন করে উঠলো বুক।

হেমন্তেই আবছা শীত পড়তে শুরু করে। এবছর ও তাই। মহারাজকে মনে পড়লো। সে হেমন্ত থেকেই
স্নান করা বন্ধ করতো। সে একেবারেই
ঠান্ডা সহ্য করতে পারতো না।
সেই তো আমাকে বলেছিল, একলা থাকার অভ্যেস করুন। সে যে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে আমি কখনও কল্পনাও করিনি।

কল্পনা আর বাস্তবে অনেক ফারাক।

মহারাজ চলে গেল একদিন অন্য রাজ্যে কাজের জন্য। আমি একা হয়ে গেলাম।তার কথামতো একলা থাকার অভ্যেস করতে পারিনি।

প্রেম করতেও পারিনি।

প্রেম করতে করতে যদি একলা হয়ে যেতাম? তাহলে বুঝতাম, প্রেমের একাকীত্ব। প্রেমের যন্ত্রণা।

প্রেম কই?

শুধু চেয়ে থাকা। কেবলই স্মৃতির কাছে যাওয়া। শুধু বুক চাপা কান্না।

একটা প্রেম করলেই নিজের ছেঁড়া জায়গাগুলো সেলাই করতে পারতাম।
একটা প্রেম করলেই নিজের ফুটোফাটা জায়গাগুলো রিফু করতে পারতাম।

অথচ প্রেম নেই।

পাখিদের সঙ্গে প্রেম করতে পারলাম কই? সকালবেলা পায়রাকে মুড়ি দিয়েই আমার প্রেম শেষ। সকালবেলা
কুকুরকে বিস্কুট দিয়েই আমার প্রেম শেষ।

নৈকট্য চাই। অথবা বলতে পারি, ঘনত্ব চাই। কার সঙ্গে?
সেতো আর আসেনা। সেই যে সেই আর আসে না।
নতুন করে প্রেমের অনুভবে প্রতিদিন নাস্তানাবুদ হই। বিধ্বস্ত হই।

বুক ঠেলে গলা খেলে কান্নাটাও মে আমার সামনে আসে না। কেবলই
গাইছে গান একলা ছেলে
গাইছে ঘর দুয়ার ফেলে।

------৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৫----১১---২০২১
------নির্মল হালদার



ছবি : সন্দীপ কুমার





পাহাড়তলির মাঠ / নির্মল হালদার

পাহাড়তলির মাঠ / নির্মল হালদার



৯৬.
আর কতদিন বাকি আকাশ আসতে

বেলা বয়ে যায়।

আর কতদিন বাকি পাখি আসতে

বেলা বয়ে যায়।

আর কতদিন বাকি প্রাণ আসতে

বেলা ডুবে যায়।



৯৭.
নদী পারে বালি অজস্র বালি
ঝুরঝুর করে

নদী বয়ে যায় কালো জল বয়ে যায়

নদী পারে বালি অজস্র বালি
ঝুরঝুর করে

আলোর কণা ঝুরঝুর করে।



৯৮.
ঘরামি ঘর ছাইছে

এক আঁটি খড় দু আঁটি খড় তিন আঁটি খড়
চার আঁটি খড়ে,

ঘরামি ঘর ছাইছে।

এক আঁটি খড় দু আঁটি খড় তিন আঁটি খড়
চার আঁটি খড়ে পাঁচ আঁটি খড়ে,

ঘরামি ঘর ছাইছে।

ঘরামির মুখে হাসি ,খড়ে খড়ে বাঁধছে।


--------১২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------২৯-----১১----২০২১


৯৯.
পুকুরে যায় হাঁসের দল

একটি হাঁস দুটি হাঁস তিনটি হাঁস

পুকুরে যায়।


হাঁসের পায়ের ধুলো ছাপ রাস্তায় রাস্তায়

পুকুরে যায় হাঁসের দল।

পুকুরের জলে বীণা বাজে।

গেঁড়ি--গুগলির কান্নার সুর।



১০০.
দেয়ালে মাটি লেপছে পাঁচটি আঙুল।

দেয়ালে গোবর লেপছে পাঁচটি আঙুল।

দেয়াল চিনলেও আঙুল চিনবো না।

দেয়ালে মাটি লেপছে পাঁচটি আঙুল।

দেয়ালে গোবর লেপছে পাঁচটি আঙুল।

দেয়াল চিনলেও আঙুলের রেখা চিনবোনা।

হাতের ছাপ চিনবোনা।


-------১৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৩০----১১----২০২১


১০১.
চাষী বাঁধছে আল

জমি তৈরি হবে।

চাষী বাঁধছে আল

জমিতে ফসল হবে।

আলপথও তৈরি হবে।

অনেক দূরের পথ
অনেক কাছে আসবে।
অনেক দূরের শব্দ
অনেক কাছে আসবে।

পায়ে পায়ে ঠিকানাও আসবে।



১০২.
বক জানে কোন্ জলাশয়ে মাছ আছে।

মাছ জানে কবে আসবে কখন আসবে বক।

জলাশয় জানে, মাছের সাঁতার।

হাওয়া সব জানে, সে তলে উপরে ঘুরে বেড়ায়।



১০৩.
চাঁদের গায়ে চাঁদ না লাগলেও
জলের গায়ে জল লেগেছে।
চাঁদের গায়ে চাঁদ না লাগলেও
হাওয়ার গায়ে হাওয়া লেগেছে।

চাঁদের গায়ে চাঁদ না লাগলেও,

মাটির গায়ে মাটি লেগেছে।

মনের পরশ লেগেছে।


------১৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----১----১২----২০২১



১০৪.
দেয়াল বেয়ে উঠছে পুঁইলতা

পুঁই পাতার সবুজ থেকে কথা

কার কথা যে বলছে?
কাদের কথা যে বলছে?

দেয়াল বেয়ে উঠছে পুঁই লতা

লতায় পাতায় জড়াবে কার সংসার?



১০৫.
শূন্য হাঁড়ি

কালি লাগা শূন্য হাঁড়ি

কবে ফুটেছিল জল?

কবে উথলে উঠেছিল হৃদয়?

কে শুনেছিল হৃদয়ের কথা?

কে শুনবে হৃদয়ের কথা?

হাঁড়ির ভিতরে হাঁড়ির ব্যথা

একা।



১০৬.
দেয়ালে বটচারা

ইশারা করছে।

কাকে ইশারা করছে?

দেয়ালে বট চারা।

ইশারা করছে।

আকাশ অনেক দূরে
মাটি নিকটেই।
কাকে ইশারা করছে?
কে আসবে?

দেয়ালে বট চারা

একমুঠো।


-----১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-------২-----১২-----২০২১


১০৭.
জলে জলে শ্যাওলা জমেছে,

উঠোনে।

কে দাঁড়াবে উঠোনে?

জলে জলে শ্যাওলা জমেছে,

উঠোনে।

কে তুলবে শ্যাওলা?

পিছলে পড়তে পারে
হাত না পেতেই পারে
বুক না পেতেই পারে

জলে জলে শ্যাওলা জমেছে,

সবুজ শ্যাওলা।



১০৮.
নিজেকে মেলে দিয়েছে রোদের দিকে,

জবা ফুলের পাপড়ি।

স্বপ্ন নেই আকাঙ্ক্ষা নেই, শুধু

নিজেকে মেলে দিয়েছে রোদের দিকে,

জবা ফুলের পাপড়ি।

কথা নেই শব্দ নেই, শুধু

নিজেকে মেলে দিয়েছে রোদের দিকে,

নীরবতার দিকে।


-----১৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----৩----১২----২০২১


১০৯.
প্রদীপ জ্বলছে।

হাওয়া এলে, কেঁপে কেঁপে ওঠে।

প্রদীপ জ্বলছে।

হাওয়া এলে, কেঁপে কেঁপে ওঠে,

প্রদীপ শিখার মায়া।



১১০.
গাছের গায়ে হেলে পড়েছে গাছ

গাছ জানে না, কে কেঁদ কে পিয়াল


নদীর গায়ে হেলে পড়েছে নদী

নদী জানে না, কে কাঁসাই কে শিলাই।

গাছের গায়ে হেলে পড়েছে গাছ

গাছ জানেনা,কে প্রেম কে পরিণয়।

নদীর গায়ে হেলে পড়েছে নদী

নদী জানেনা, কে প্রেম কে পরিণয়।



১১১.
ধানের আঁটি বাঁধছো
কে গো তুমি,আমাকেও বাঁধছো?

কে গো তুমি,আমাকেও বাঁধছো?

বন্ধনে মুক্তি আছে জানি
আমারও মুক্তি আছে জানি

কে গো তুমি, সকল ব্যথা বাঁধছো?


-------১৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-------৪------১২-----২০২১
------নির্মল হালদার





পাহাড়তলির মাঠ / নির্মল হালদার

পাহাড়তলির মাঠ / নির্মল হালদার



৮০.
পাড়ের গাছ ছুঁয়ে ফেলছে জল

পুকুর নীরব।

গাছের নীরবতা ছুঁয়ে ফেলছে জল

পুকুর নীরব।

আমাকেও ছুঁয়ে ফেলছে নীরবতা

আমিও নীরব।


৮১.
ধুলো বাজে

ধূলার ধ্বনি ধূলায় ধূলায়।

ললাটে কে এঁকেছে ধুলো?

ধূলার উজ্জ্বলতায় উজ্জ্বল তুমি

আমাকে দাও ধূলার পরশ।


৮২.
খালি পা চলে যায় শূন্য রাস্তায়

খালি পায়ে কে পরাবে নুপুর?

সোনার নুপুর নাইবা পরালে
ফুলের নুপুর কে পরাবে?

খালি পা চলে যায় শূন্য রাস্তায়

খালি পায়ে কে পরাবে নুপুর?

সোনার নুপুর নাইবা পরালে
পাতার নুপুর কে পরাবে?

শব্দ নৈঃশব্দ কে পরাবে?


--------৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-------২৩-----১১---২০২১


৮৩.
কুকুরের গা ঘেঁষে শুয়ে আছে কুকুর

সম্পর্কের হাওয়া গায়ে এসে লাগছে

সম্পর্কে ছায়াও পড়ছে গায়ে

কুকুরের গা ঘেঁষে ঘুমিয়ে আছে কুকুর

স্বপ্নের সম্পর্ক গড়ে উঠছে ঘুমের ভেতরে।


৮৪.
একগুচ্ছ শালিক একগুচ্ছ আকাশ
কে ছোঁবে কাকে?

এক ঝাঁক মানুষ এক ঝাঁক রাস্তা
কে ছোঁবে কাকে?

একগুচ্ছ শালিক রাস্তায় নেমেছে

একগুচ্ছ আকাশ রাস্তায় নেমেছে।


৮৫.
সারাদিন সজনে গাছ সারাদিন সজনে পাতা

ডালে ডালে শুঁয়োপোকা

কী রঙের স্বপ্ন শোনে?
কী রঙের স্বপ্ন বোনে?

ডালে ডালে শুঁয়োপোকা

সারাদিন সজনে গাছ সারাদিন স্থির।


------৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৪-----১১----২০২১


৮৬.
ফণি মনসার ছায়া পড়ছে মাটিতে ।

ফণি মনসার কাঁটার ছায়া ধূলায় ধূলায়।

ফণি মনসার মাথায় একটি হলুদ ফুল।

মৌমাছি এসেছে। উড়ছে তার ছায়া।

মৌমাছি এসেছে। উড়ছে তার জাগরণ।



৮৭.
কাকে গড়ছে কুমোর? কী গড়ছে কুমোর?

মাটি কম পড়লে কী করবে কুমোর?

কলসি ছেঁদা হলে কী করবে কুমোর?

হৃদয় কী গড়বে কুমোর?

চাকা ঘুরছে।



৮৮.
হাপর টানছে তো টানছেই

পিটছেতো পিটছেই গরম লোহা

আগুন জ্বলছে

তৈরি হবে হাতা খুন্তি কড়াই

তৈরি হবে বঁটি ছুরি কাঁচি

হাপর টানছেতো টানছেই

আবছা লাগছে মুখ।


------৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৫----১১----২০২১


৮৯.
ধান কাটছে

হাঁসুয়ার শব্দ ওঠে

হাঁসুয়ার শব্দে শব্দে ছিটকে পড়ে আলো।

ধান কাটছে

পাকা ধানের গন্ধ ওঠে

নতুন খড়ের হাসিতে ছিটকে পড়ে আলো।


৯০.
আতা চেনেনা পেয়ারার গরব
পেয়ারাও চেনেনা আতার গরব
পাশাপাশি শুধু দুলতে থাকে
সকালে সন্ধ্যায়।

সকালে সন্ধ্যায় পেকে উঠছে আতা
সকালে সন্ধ্যায় পেকে উঠছে পেয়ারা
সকালে সন্ধ্যায় পেকে উঠছে নক্ষত্রের রঙ
আমারই মাথায়।

আমি চিনিনা।


------৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৬----১১----২০২১


৯১.
হেমন্তের হাওয়া শিরশিরে শীত
পাখির পালকে হিম
হেমন্তের হাওয়া সকালবেলা।

পুবের আকাশ লাল।

হেমন্তের হাওয়া শিরশিরে শীত
পাখির পালকে হিম
হেমন্তের হাওয়া ধূসরতা।

পুবের হৃদয় লাল।


৯২.
ধান বোঝাই গরুর গাড়ি

গাড়োয়ানের মুখ দেখতে পাইনা

গাড়োয়ান কে গো?

কত রাস্তা পার হলে দেখতে পাবো মুখ?

কত রাস্তা পার হলে এক আঁজলা জল?

গাড়োয়ান কে গো? কেমন আছো?



৯৩.
পাহাড়ে উঠে গেল হরিণ
পিছনে পিছনে গাছপালা।
পাহাড়ে উঠে গেল হরিণ
পিছনে পিছনে হরিণ ছানা।

পাহাড়ের চূড়ায় সূর্যের ঘর।

পাহাড়ের চূড়ায় সকলের ঘর।


------১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৭----১১----২০২১


৯৪.
রাস্তায় রাস্তায় পায়ের ছাপ

কার পায়ের ছাপ? কাদের পায়ের ছাপ?

রাস্তায় রাস্তায় পায়ের ছাপ

আলোকিত হয়ে অন্ধকার হয়ে
ধুলো হয়ে মাটি হয়ে
রাস্তায় রাস্তায় পায়ের ছাপ

কার পায়ের ছাপ? কাদের পায়ের ছাপ?

দুঃখ হয়ে সুখ হয়ে
আনন্দ-বেদনা হয়ে
রাস্তায় রাস্তায় পায়ের ছাপ

খালি পায়ের ছাপ।


৯৫.
জবা ফুলের রেণু উড়ছেতো উড়ছেই

সূর্যের রেণু উড়ছেতো উড়ছেই

হৃদয়ের রেণু উড়ছেতো উড়ছেই

মাটি প্রশস্ত ধারণ করবে।


-------১১ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------২৮----১১----২০২১
------নির্মল হালদার




কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ