শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

পূর্ব জন্মের স্মৃতি / তালধ্বজ

তালধ্বজ//

চৈত্র দিন।

রোদে রোদে তেতে উঠছে মাটি।
গাছে গাছে নতুন পাতা এলেও
রোদ জ্বলছে।
হঠাৎ হঠাৎ হাওয়া এসে উড়িয়ে দেয় লাল ধুলো।

মিলন আর অসিত ক্লাস শেষে
এখন আর হোস্টেল যাবেনা। তাদের শখ হয়েছে , তারা যাবে
কোনো সায়রের দিকে।

স্নান।

মিলন আর অসিত দুজনেই
এসেছে গ্রাম থেকে। পুকুরে স্নান
তাদের অভ্যাস।
হোস্টেলে তো আর কেউ পুকুর
খুঁড়ে দেবেনা।
আর আজ মঙ্গলবার। কাল বুধবার ক্লাস ছুটি। পড়াশোনার
কোনো চাপ নেই। সায়রে গেলে
মজা করে স্নান করবে অনেকটা সময়।

মিলন অসিতের কাছে জানতে চায়------হ্যাঁরে তেল সাবান
সঙ্গে নিবি না? একটা গামছাওতো
লাগবে।
অসিত বলে-----ধুর ধুর কিচ্ছু লাগবেনা। প্যান্ট শার্ট পরেই জলে
ঝাঁপাবো। যা রোদ হোস্টেল ফিরতে ফিরতে গায়ে শুকিয়ে যাবে জামাকাপড়।

অনেকটা দূরে এসে তাদের খিদে পায়। দুজন একই কথা বলে-----
খিদে পেয়েছে।
পকেটতো পয়সা নেই। পয়সা থাকেও না। তারা দেখতে পায়
রাস্তার ধারে কয়েকটা গাছে আমের বোল।
অসিত গাছে উঠে পড়ে। পাড়তে
থাকে কচি আম। এবং গাছে বসেই চিবোতে থাকে । মিলন
তার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে।
অসিত একটিও আম মিলনকে দেয় না।

মিলনের পেট ছটফট করে।
সে অসিতের উদ্দেশ্যে বলে,
দেরি হয়ে যাচ্ছে রে। খাবার ঘন্টা পড়ে যাবে। আমি আর সায়রের
দিকে যাবো না। আমি হোস্টেল চললাম-------

অসিত মিলনের কথা শুনে
গাছ থেকে ঝুপ করে নামে।


খাওয়া দাওয়ার পরে ছেলেরা প্রায় সবাই ঘুমিয়ে গেছে। জেগে আছে যারা তাদের মধ্যে কেউ কেউ অঙ্ক কষছে। একটি ছেলে
ছবি আঁকছে খাতার পাতায়।

হোস্টেল ঘরের চালার ফাঁক দিয়ে
রোদ ঢুকছে। টিনের চালা। তেতে
উঠেছে খুব।

গরম করছে।

ঘরের কোণের একটা চৌকিতে
একটি ছেলে ঘুরিয়ে চলেছে হাতপাখা।

মিলন চুপচাপ হোস্টেল থেকে বেরিয়ে পড়ে।

কেউ কোথাও নেই। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে কোকিলের ডাক।

চারদিকটা ঘুরতে ঘুরতে তার চোখে পড়ে তাল গাছ ঘেরা
ঘরটি। আগেও দেখেছে সে।
আজ যেন আবার নতুন করে
চোখে পড়লো।

ঘরের ভিতরে তালগাছ।

এ কেমন ঘর?

এই ঘরে কে থাকে?

প্রথম যেদিন এই ঘরটা দেখেছিল সে, তার সঙ্গে ছিল তার চেয়ে উঁচু
ক্লাসে পড়া রামানুজ দা। সে বলেছিল ----এই ঘরে থাকে কবি।
একজন কবি।
বাকি ঘর গুলিতে থাকে মানুষ।

মিলনের মনে কথা এলেও 
বলতে পারেনি, কবি কি মানুষ নয়? 

সে আজ ঘরটির সামনে এসে দাঁড়ায়। মনে মনে দেখে ঘরের ভিতরে অনেক ছায়া। অনেক শীতলতা।

একবার ঢুকে দেখবে কেউ আছে নাকি?

সব সময় দরজা বন্ধ থাকে। আজ
দরজা ঠেলে সে যদি ঢুকে পড়ে?

------১৩ চৈত্র ১৪২৮
-----২৮-----৩---২০২২
-----নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ