মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২

আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া



মাছের জাল
-----------------

নদীর ধারে মাছের জাল শুকায়

রাতের বেলা ধরা পড়েছিল মাছ

দিনের বেলা ধরা পড়ে ও পালিয়েছে,

আলো-বাতাস।



তেজপাতা
--------------

তেল হলুদ নুন লঙ্কা বাদে
আর কী নেই?

তেজপাতার মতো উড়ে এলো একটি মেয়ে

রান্নাঘরে।




ইঁটভাটা
-----------

গাছ তলায় ইঁট পেতে
আকাশে রেখেছে মাথা,

হলধর বাউরী।

তার পায়ের কাছে এসে পড়েছে
ঘাস পোকা।
তার মাথার চুলে বিলি কাটছে
সন্ধের শুকতারা।

ইঁটভাটায় জ্বলবে আগুন।


------২৬ চৈত্র ১৪২৮
-----১০----৪----২০২২




জবা ফুল
-------------

পোড়ো বাড়িতে জবা ফুলের গাছ।

ফুলের রেণু উড়ে উড়ে বেড়ায়।

জবা ফুল উড়ছেও।

মাটিতে কার পা?




মহুল
-------

গাছে মহুল

ঘুঙুর বাজায়।

ও ঘুঙুর পায়ে বাজবেনা।
পথে-পথেও বাজবে না।
শুধু
হরিমতির ঝুড়িতে,

ঝম ঝম করে বেজে উঠবে।




অসুখ
--------

গরুটা আজও পালে গেল না।

না--খড়  না--মাড়
মুখে দেয় না কিছুই

অবলা প্রাণী।

গোয়ালের এক কোণে মাকড়সা
জাল বুনছে না আর।


------২৭ চৈত্র ১৪২৮
-----১১---৪----২০২২



কুঁচ ফল
-----------

গলায় পরবে বিছা হার
কোমরে পরবে বিছা---
মনের সাধ রয়ে গেল মনে

বনের দিকে ছুটে যায় মেয়ে

বুনোলতে পেকেছে কুঁচ ফল

রাঙা কুঁচ ফল গলায় গাঁথবে মেয়ে।




চুড়ি
------

এক গাছা চুড়ি শীর্ণ হাতে ঢলঢল করে

আরেক গাছা চুড়ি
ঘরের দেয়ালে পেরেকে টাঙানো।

সোনালি চুড়ির আভা সরল হয়ে ওঠে

রৌদ্র কিরণে।


-----২৮ চৈত্র ১৪২৮
-----১২----৪-----২০২২



ছিরি
-------
আকাশ যেন দোমড়ানো মোচড়ানো
ধোঁয়াটে ধোঁয়াটে
হাঁড়িতে ঢোকানো জামা কাপড়ের মত
ছিরি ছাঁদ নেই

চেয়ে থাকা মাটিও চিনতে পারছে না।



দণ্ডবৎ
---------

গরুর ক্ষুরে ধুলো এসে
পার হয়ে যায় রাস্তা।

একদিন গরুর লেজ ধরে
বৈতরণী পার, তাই

রাস্তার ধুলো
ক্ষুরে ক্ষুরে জানায় দণ্ডবৎ।




স্মৃতি
-------

বাক্স খুলতেই ন্যাপথলিনের গন্ধ।

স্মৃতি উঠে এলো।

শাশুড়ি বলেছিল, বেনারসিতে যেন
পোকা না লাগে, দেখো
বন্ধন যেন পোকায় না কাটে।


------২৯ চৈত্র ১৪২৮
-----১৩----৪----২০২২



ওল
-----

মাটি খুঁড়ে পেয়েছে একটি-দুটি ওল

যা ছিল পিঠের ভার

নামিয়ে চলে গেছে কেউ।




কাকতাড়ুয়া
----------------

সারাদিন পাহারা দিয়েও
তাড়াতে পারে না রোদ।
পুড়ে যায় শসার খেত, করলার পাতা

ছাগল এসেও মুখে টানে কচি ঝিঙা।

নীরব হয়ে থাকে হাঁড়ি মুখো কাকতাড়ুয়া।


-----৩০ চৈত্র ১৪২৮
-----১৪----৪----২০২২




ঠাঁই
------

রাত্রিবেলা
মেঠো ইঁদুরের দৌড়োদৌড়িতে
চাঁদ ও দৌড়োদৌড়ি করে।
চাঁদ ও খোঁজে  ইঁদুরের গর্ত।
যদি কখনো গর্তে থাকা যায়,

আহারের অভাব হবে না।




আল
--------

শাড়ির পাড় ছিঁড়ে  যেতে
ছুঁচ--সূতো খোঁজে প্রভাসের বউ।
যেন জমির আল ভেঙ্গে গেছে
বয়ে যাচ্ছে জল।

ফুল--ফলের রসদে টান পড়বে।




কল
------

যে দু একটা ঢেঁকি আছে
তার নিঃশ্বাসের শব্দ
ঘরের লোকের কাছে নেই

একা একা হাঁপিয়ে ওঠে ঢেঁকি

ধান ভানার শব্দ ওঠে কলে।


-----৩ বোশেখ ১৪২৯
-----১৭----৩----২০২২




পিঁড়ি
-------

আসনতো আছেই

তবে কুটুম এলে উঁচু আসন

পিঁড়ি পাততে হয়।




মাথার ছাদ
---------------

দেয়াল ফেটেছে

ঘরের মেঝে ফেটেছে

পা-ও ফেটেছে কাম কাজ করতে করতে

সূর্যকে আগলে রেখেও
আকাশ ফাটে নাই।
গরিবের এইটুকু ভরসা
মাথার ছাদ ফাটে নাই।


-----৪ বৈশাখ ১৪২৯
----১৮----৪----২০২২




পদ্ম
------

কাঠের পাটায় চড়ে
পুকুরে ঘুরতে ঘুরতে,

পদ্ম কাড়ছে ভরত কালিন্দী

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের রুদ্র রূপ।




দিনযাপন
-------------

শুকনো পাত  গুঁজে গুঁজে
কত আর জ্বালাবে উনুন!

উপর থেকে পাড়ে জ্বলন্ত কয়লা।


------৫ বৈশাখ ১৪২৯
-----১৯----৪----২০২২
-----নির্মল হালদার













কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ