বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

হরিতকীর গর্ভের আলোয়




কিরাত
----------

কিরাত
তুমি পাখির প্রেমিক হলে
তিরের ডগায় লটকে যাবে বৃষ্টির বিন্দু।
কিরাত
তুমি তো জানো,
যেকোনো পায়ের তলায় থাকে পথ
তুমি পথের প্রেমিক হলে

ঘরে ফেরার পথ পাবে সবাই।

কিরাত
তুমি সামনে না থাকলেও
তোমাকে দেখতে পাই
তোমাকে একটুও ভয় না করে বলতে পারি,
লাঙ্গল টা ধরো অথবা আজকেইতো

ধানের চারা ফেলবো দুজনে।



হরিতকী
-----------

তুই জেগে উঠলেই,
পাখিরা ডেকে উঠবে।
তুইতো কিরাত না, তুই কল্যাণ।

তোর সঙ্গেই ছোটবেলা থেকে
জঙ্গলের ডাক শুনছি।
তোর সঙ্গেই ছোটবেলা থেকে,

পশুপাখিদের পায়ের ছাপ চিনেছি।

তুই জেগে উঠলেই, শিকড়ের ডাক।

আমি দেখতে পাবো, হরিতকী ফল।


-------১ আষাঢ় ১৪২৯
------১৬----৬-----২০২২




তিন কন্যা
-------------

তোর বাবা বলেছিল,
হরিতকী বহেড়া আমলকি
তিন কন্যার মতো।
তিনজনকেই একসঙ্গে ঘরে রাখলে
জ্বালাতন করবে না।

আমিও তোর সঙ্গে গাছ চিনতে চিনতে
এই জঙ্গল থেকে ওই জঙ্গল
একটি কন্যাকেও কাছে পেলাম না।


তোর বাবা বলেছিল,
হরিতকী বহেড়া আমলকি নিরাময় করে



আমলকি
-------------

পাহাড়ে উঠতে উঠতে
আমার জলতেষ্টা পেয়েছিল।
গাছ থেকে আমলকি পেড়ে
তুই আমাকে দিয়েছিলি।

আর তুই আমলকির ছায়া কুড়িয়ে
সারা রাস্তায় ছায়া ছড়াতে ছড়াতে
পাহাড়ে ওঠা।
রোদ লাগছিলনা গায়ে।

কবেকার সেই কথা
আমলকি মুখেই আছে, আরেকটা আমলকি 
আমার মুঠোয়

আমি হাঁটছি।




ডিম
------

গাছে উঠেছি।

পাখির বাসায় দেখতে পেলাম
ভাই বোনের মত দুটি ডিম।

তোর ইচ্ছে হলো ঘরে নিয়ে যাবি।

এইতো এদের ঘর, আমি বলেছি।
এখানে এসেই দেখে যাবো,
ফুটে উঠছে ভাইবোনের ভালোবাসা।




শাল গাছ
-------------

জঙ্গল শেষ হয়ে গেলেও
তুই শালগাছ হয়ে উঠবি।
তোর কাঁধে উঠে  ভানু পাড়তে গিয়ে
কানু পাড়বো।


--------২ আষাঢ় ১৪২৯
-------১৭----৬----২০২২



স্বর
-----

বাথানে এক ঠাকুমা আছে।

তোদের গ্রামে কে কে আছে?

তোদের উঠোনে সজনে গাছ থাকলে
আমাকে কি দিবি শুঁয়োপোকা  না প্রজাপতি?
পায়রার নাচ অনেকদিন দেখিনাই
আমাকে দেখাবি?

বাথানের পাহাড় আমাকে শোনায় গাছপালার স্বর।

তোর কণ্ঠস্বরে কে আছে আমাকে দেখাবি?




তেঁতুল কেঁদ অর্জুন
-------------------------

পাথরাবেড়া পানিপাথর লুশাবেড়া
আমাকে দেবে না কেউ।
বাদুড় ঝোলা তেঁতুল গাছ আমার কি জুটবে?

বাদুড় ও এক অন্ধকার কে বলেছিল?

শুকনো অর্জুন ফল ঝুমঝুমি হয়ে বাজে
এক সকালে শুনেছি, আরেক  সকালে
ব্যাঙ এসেছিল।

আমি বলেছিলাম, ছাতা লাগবে না আমার।

আমি চাই জঙ্গলের পথ

গাধাকে ফিরিয়ে দেবো জঙ্গলের আলো ছায়ায়

গাছে গাছে কেঁদ পেকেছে।




কাঁটা
-------

কইরে কিরাত
তোদের গাঁ নিয়ে যাবিনা?
কত কত গাঁ গেলাম
পিঁড়রা চাকিরবন সুজানডি।


তোদের গাঁ নিয়ে যাবিনা?

তোদের গাঁ কতদূর?

বাস চলে? হেঁটে যেতে হয়?

রাস্তায় বট গাছের ছায়া আছে তো?
বাবলা গাছের ছায়া থাকলে
কাঁটা কাঁটা ছায়া

কিরাতরে ,দাঁত দিয়ে তুলতে পারবি কাঁটা?


--------৩ আষাঢ় ১৪২৯
---------১৮----৬----২০২২



হরিতকীর গর্ভের আলোতে
------------------------------------

বুনো তুলসিও শান্ত খুব
আমার ঘরে গেলে ঝিমিয়ে  পড়বে।
যেমন আছে থাক
যজ্ঞি ডুমুরের পাশে থাক।

মেঘে রোদে  থাকতে থাকতে
ফেটে পড়া ডুমুরের বীজ কোলে টেনে
আদর করবে।
আদরে আদরে ঝলমল করবে ডুমুরের পাতা।

আমি আর আদর করবো কাকে?

পাকা ডুমুর গিলে ফেলছে বাঁদর।

তুইও তুলসির পাতা ছিঁড়ে মুখে পুরলি।

আমার বুকে ঢুকে পড়লো বনের হাওয়া।




জনার
--------

কাল রাতের জনার সেদ্ধ আজ সকালে।

জনার পোড়াতে চুলা জ্বলেনি
আজ সকালে ।

জনারের মাথার চুল টেনে ধরলেও
জনারের কান্না শুনতে পাবো না, শুধু
জনারের পুরুষ্ট রসে মুখ ডুবিয়ে চলে যাবে রোদ।

তুই ছাগল তাড়াবি।


-------৪ আষাঢ় ১৪২৯
-------১৯-----৬-----২০২২




ডাকাকেঁদু
--------------

একটা গাছ ছুঁতে যতটুকু সময় লাগে
ততটুকু সময় লাগবে ডাকাকেঁদু যেতে।
কোনো রাস্তা নেই শুধু আলপথ।

আর একটা বন আছে মাটি খুঁড়লেই বুনো ওল
কন্দ মূল, শিকড়ের আত্মীয়তা আর আছে
ঝরা পালক শুকনো পাতা

ভাঙ্গা ডিমের হাহাকার।

গভীর না হলেও বনের লতা পাতা
জড়িয়ে পড়ে গায়ে, পায়ে লাগে সাপের খোলস
গাছের ছালের মত।

গাছে বেদনাও ঝুলে থাকে লাল লাল

নাম জানিনা।




ব্যথা বেদনা
----------------

পুঁটি মাছের চচ্চড়ি
সজনে শাক
ডাল থাকবে না

তোর গায়ের গন্ধটা মেখেই এক থালা ভাত

ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত কার ঘরে?

একদিন তো ঢেঁকির গর্ত থেকে উঠে এসেছিল
গুমরে ওঠা ব্যথা

সেই ব্যথা কি তোর মায়ের কাছে?

আমি দেখতে চাইবো।


-------৫ আষাঢ় ১৪২৯
------২০----৬----২০২২




আলপথ
------------

একটা আলপথ চাইবো?

আলপথ থেকে আলপথ
ফসলের হাওয়া
পায়ে লাগবে কাদা

একটা আলপথ দেবেনা?

ধন তো অনেক আছে
দুই সন্তানের পিতা
একটা গ্রাম

সরু হাসির মতই,

আমাকে একটা আলপথ দেবেনা?



দারুচিনি
------------

লবঙ্গ চিনতে হলে কার কাছে যাবো?
এলাচ চিনতে হলে কার কাছে যাবো?
গোলমরিচ চিনতে হলে কার কাছে যাবো?

চাঁদ সওদাগর অনেক দূর

অনেক কাছে তুই, তুই আমাকে জড়িয়ে ধরলেই,

দারুচিনি গাছ।


-------৬ আষাঢ় ১৪২৯
-------২১----৬-----২০২২



আলপথ
------------

একটা আলপথ চাইবো?

আলপথ থেকে আলপথ
ফসলের হাওয়া
পায়ে লাগবে কাদা

একটা আলপথ দেবেনা?

ধন তো অনেক আছে
দুই সন্তানের পিতা
একটা গ্রাম

সরু হাসির মতই,

আমাকে একটা আলপথ দেবেনা?



দারুচিনি
-------------

লবঙ্গ চিনতে হলে কার কাছে যাবো?
এলাচ চিনতে হলে কার কাছে যাবো?
গোলমরিচ চিনতে হলে কার কাছে যাবো?

চাঁদ সওদাগর অনেক দূর

অনেক কাছে তুই, তুই আমাকে জড়িয়ে ধরলেই,

দারুচিনি গাছ।

-------৬ আষাঢ় ১৪২৯
-------২১----৬-----২০২২




বীজের সঙ্গে
-----------------

তোর বাবার তিনটে ছেলে
তার মধ্যে তুই একজন।
তোকে আমার কাছে দিয়ে দিলে
আমি যতন করে রাখবো।

তোর মা চুলাতে শুকনো পাত গুঁজতে গুঁজতে
আমাকে বলবে কি, চাইতে হলে অন্য কিছু চাও----আমার ছেলে লক্ষ্মী বড়
ঘরেই থাকবে।

তোর বাবাও বলবে মনে হয়,
আমার তিনটে ছেলে, একজন রুইবে ধান
একজন বাঁধবে আল, আরেকজন
ঘরে নিয়ে যাবে।

তোর বাবাও বলবে মনে হয়,
চাইতে হলে অন্য কিছু চাও।
কী যে চাইব আমি, আমি আমাকেই
রেখে যাচ্ছি তোমাদের কাছে

যদি বছর দিনের বীজের সঙ্গে রাখতে পারো।




একটি গ্রাম
---------------

বাথান নামে একটি গ্রাম হাত পেতে চাইছি

একদিন শরবেড়িয়া চেয়েছিলাম।
আরেকদিন হুড়রা চেয়েছিলাম।
আজ হাঁটু গেড়ে চাইছি ডাকা কেঁদু।

মেঘ দুইলে জল পাবো।

পুকুর থেকে মাছ ওঠে
নদী থেকে মাছ ওঠে
আমি দু হাতে ধরবো নক্ষত্র

একটি গ্রামের একটি নক্ষত্র

ধুলো উড়িয়ে হাসে।




ধনী
------

পশুপতি মাহাত ধনী হলেও
আমার চেয়ে ধনী নয়।

আমার যে কিছুই নেই।

পশুপতি মাহাত পিতা হলেও
আমিও পিতা

আমার একটি সন্তানও নেই।



------৭ আষাঢ় ১৪২৯
------২২----৬-----২০২২
------নির্মল হালদার








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ