শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২

ব্যথারাই আলোর প্রকাশ



 ব্যথারাই আলোর প্রকাশ
--------------------------------

কোথায় ঘাস?

মাঠে মাঠে ভেড়ারা খুঁজে বেড়ায় ঘাস। সতেজ টাটকা ঘাস হলে ভেড়াদের মন খুশিতে ভরে ওঠে।

কোথায় ঘাস?

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠতে জল নেই একটাও। ঘাসের দেখা পাওয়া যাবে না। ধূ ধূ করছে মাঠ।

যে সমস্ত জমিতে শাকসবজি হয়েছে দু একটা, সমস্তই ড্যামের জলে। এই সব জমিতে ভেড়া ঢুকে গেলে  ভেড়ার পিঠে চাবুক পড়বে।

ভেড়ারা খুঁজে বেড়ায় ঘাস।

কোথায় ঘাস?

মেষপালক এসে মাঠে ছেড়ে দিয়েছে। সেও জানে, কোথাও ঘাস নেই। এখানে ওখানে জংলি গাছ। তার পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভেড়ারা চিবোয়।

মেষপালক তার কাঁধের গামছা এক টুকরো ছায়ায় পেতে শুয়ে আছে। কখনো তার চোখ বুজে যায়। কখনো তার চোখ খোলা।

আকাশের দিকে।

আকাশেও সূর্য তারা দলে দলে।

রাখাল? রাখাল কোথায়?

আমাদের মেষপালক মাঝেমধ্যে বাঁ--হাতের তেলোতে খৈনি টিপে টিপে গুঁড়ো ওড়ায়।

গাছের কষ্ট হয়------মেষপালক জানেনা। শুধু জানে, ক ঘরের ভেড়া নিয়ে এসেছে সে। এবং সন্ধের আগে প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।

ঘরের ভিতরে ভেড়ার ঘর আলাদা। সেই ঘর কেমন? অন্ধকার কেমন? মশা মাছি আছে?

এক শীতের রাতে কাঁপতে কাঁপতে আমি ভেড়াদের কাছে চলে গেছলাম। ওরা ঘুমোচ্ছিল। আমি চুপিচুপি এক ভেড়ার পেটের লোমে ঢুকে পড়েছিলাম।

শীতকালে ভেড়াদের কাছাকাছি থাকলেও ঠান্ডা লাগে না। একবার এক  গরু তার বাছুরকে নিয়ে ঢুকে পড়েছিল ভেড়াদের দলে।

ভেড়াদের গা থেকে উষ্ণতা ঝরে। মায়ের উষ্ণতার মত।

মেষপালকের তো শীত করেই না।
শীতকালেও তার খালি গা। হাঁটু অব্দি শুধু জড়ানো থাকে একটি ধুতি। কাঁধে গামছা।

গামছাটি কত পুরনো?

মেষপালকের কোনো নাম থাকেনা। আমি তবু তাকে "যীশু" নামেই চিনতে চাই। যীশুর কোলে একটি মেষশাবক  বলতে চেয়েছিল------আকাশের সমস্ত তারা  সে কাছে পেতে চায়। তারার আলো ব্যথা উপশম করে।

যীশু হাসতে হাসতে জানিয়েছিল,
কোনো ব্যথা ব্যথা নয়, ব্যথারাই আলোর প্রকাশ।

ভেড়া গুলি চরে বেড়ায়।

উপর দিকে মুখ করে কথা বলে।
কার সঙ্গে কথা বলে?

হাওয়া চরে বেড়ায়।


------২ আষাঢ় ১৪২৯
------১৭----৬----২০২২
------নির্মল হালদার









ছবি : অভিজিৎ মাজী ও বিপ্লব বাউরী













কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ