বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০২২

সভ্যতার বিকাশ



সভ্যতার বিকাশ
--------------------

" সেলফি "নিজে একটি চরিত্র।
" সেলফি "নিজে একটি জটিল চরিত্র। সে বলে, নিজেকে তুলে ধরো। নিজেকে সাজাও।

নদীতে পাহাড়ে জঙ্গলে সমুদ্রেও
নিজেকে তুলে ধরো । নিজেকে দেখাও।
কলহে--কোলাহলে নিজেকে তুলে ধরো। নিজেকে ছড়াও।

কেউ বা কাঁধে হাত রাখলে---------সেলফি সেলফি।
কেউ আলিঙ্গন করলে--------সেলফি সেলফি।

পলাশ ফুটলে গাছের সঙ্গে সেলফি। শীতে কাঁপলে সেলফি।
গ্রীষ্ম দিনের ঘাম ছেটাতে ছেটাতে
সেলফি সেলফি।

জগৎজুড়ে সেলফি।

সেলফি তুললেই------------
গায়ে আমার পুলক লাগে-----।
সেলফি তুললেই-----------চোখে ঘনায় ঘোর।

এই যে সেলফির ঘনঘটা এতো
সভ্যতারই প্রকাশ।
কেউ কেউ নগ্ন প্রকাশ বলতেই পারেন। কেউ কেউ বলতে পারেন, মানুষের জীবন ছোট হয়ে গেছে, মানুষের জগৎ ছোট হয়ে গেছে, তাই সে নিজেকে ভেঙে নিজেকে দেখতে চায়। নিজেকেই ভালোবাসতে চায়।

এ একরকম বিপর্যয়
আলোকচিত্রী শুভাশিস গুহ নিয়োগী দেখতে পেয়েছেন। এবং আমাদেরও দেখাতে চেয়েছেন। আমরা এই বিপর্যয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আরও একটা "নিজস্বী" তে মেতে উঠছি।

এক সময় আয়না ছিল মানুষকে দেখাতো। ঘুরেফিরে মানুষও দেখতো নিজেকে। কিন্তু আয়না স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে পারে না
কোনো মানুষকে।

মানুষকে বিনোদন বিলোতে পৌঁছে গেল চলমান যন্ত্র। গান শোনো। ফিল্ম দেখো। এবং নিজেকেও দেখো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে। গাড়ি চলতে চলতে।
রেস্তোরাঁ ও পানশালায়। অন্নপ্রাশন থেকে বিবাহ। শোকসভাতেও।

সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছে শিশুর সঙ্গেও
সেলফি। একান্ত আপন হয়ে
যুগলের সেলফি। আপেল কিংবা পেয়ারায় কামড় দিতে দিতে একটা সেলফি।

সঙ্গে তো আর কেউ নেই, যে,
ছবি তুলে দেবে। অগত্যা, সেলফি। ফেসবুকেও পোস্ট।

আপেল কামড়াচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে দাঁতও।

আপেল কামড়ানোর সঙ্গে বিজ্ঞাপন হয়ে গেল দাঁতের। এই বিজ্ঞাপন, নিজের বিজ্ঞাপণ প্রতিমুহূর্তে চাই।

এই বিজ্ঞাপনে কি বেহায়াপনা আছে? কাকে প্রশ্ন করছি? কে উত্তর দেবে?

সেলফির মোহেইতো সারা দিন যায়। সময় ও সুযোগে সেলফি আসবেই।

যত ইচ্ছে নিজেকে দেখো।

যে গাছের ডাল কোনো দিন
ধরা হয়নি,আজ ডাল ধরেই
একটা "নিজস্বী"।

বৃক্ষ প্রেমের একটা নিদর্শন।
কত সহজেই।

আমি আছি আমি আছি
আমি আছি জলে-স্থলে জঙ্গলে।
আমার অস্তিত্ব লোপাট করতে
কোথাও কেউ নেই।

দেখানেপনার এই যে প্রচার ও প্রসার তাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ভগবানেরও নেই।

শুভাশিস জানে।
আর তাই সে সুযোগ বুঝে কোথায় কেমন
ধরে রেখেছে।

সেলফি শুধু একটা হাতের। কারণ, মেয়ে আমাদের কাঁচের চুড়ি পরেছে।

কান বেঁধানো থেকে নাক বেঁধানোর বিজ্ঞাপন তো জরুরী।
সেলফি।
পায়ে আলতা থেকে কপালে টিপ।
সেলফি।

সেলফিতে আমারও ফুর্তি।

সেলফি আমার বিনোদন।

সেলফি আছে বলেই তো দেখতে পাই নাগরিক ঢ্যামনামো। নাগরিক কূটকচালি। এবং আমাদের গ্রাম্যতা।

সেলফি আছে বলেই গলা জড়াজড়ি। সেলফি আছে বলেই টুকটুকে লঙ্কা গাছের পাশে আমার ছবি আমি তুলছি। আমি জানি, টুকটুকে লঙ্কা আমি কোনোদিন চিবোবো না।

শুভাশিসকে অবশ্যই ধন্যবাদ
আমার সামনে এনে দিয়েছে
"সেলফি" র মতো এক চরিত্র।

জটিল চরিত্র।

তার ব্যাখ্যা করতে একাডেমিক কাউকে প্রয়োজন।

আমি তো লাস্ট বেঞ্চ।

একদিন এক মাঠে লাফ দিতে দিতে আমার একটা সেলফি তুলেছি। আমাকে আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতেই হবে----

আমি আকাশ ছুঁয়েছি।



----ছবি : শুভাশিস গুহ নিয়োগী
----- ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-----৯----৬----২০২২
-----নির্মল হালদার















ছবি : আলোকচিত্রশিল্পী শুভাশিস গুহ নিয়োগী





পাখির ভুবনে



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ