সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

উইঢিবি : প্রাকৃতিক ভাস্কর্য



উইঢিবি : প্রাকৃতিক ভাস্কর্য
----------------------------------

উইঢিবির ভেতরে ঢুকে গেলে কেমন হয়?

অনেক অনেক দিন তো নিজেদের ঘর দুয়ারে থাকা হলো। এবার না হয়, উইঢিবিতে ।

সুখে দুঃখে।

ঝড়জল এসে ধাক্কা মারলেও
আমার গায়ে আঁচড় পড়বে না।
আমি উইপোকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেলাধুলো করবো।

মাঠে-ঘাটে গাছ তলায়  অনেক উইঢিবি। অনেক বাসা। যে কোনো একটা বাসায় ঢুকে পড়বো।

উইপোকারা আমাকে আত্মীয় মনে করবে নিশ্চয়ই। কখনো কোনো কালে তাদের সঙ্গেই তো আমি ছিলাম। আমিও তো আত্মরক্ষার জন্য মাটি তুলে তুলে তৈরি করেছি ঘর।

আমার আত্মরক্ষার ঘর।

আমার এই  এলোমেলো স্বপ্ন থেকে আমি চলে এসেছি এক মাঠের কাছে। উইঢিবির কাছে।
যেন উইঢিবি নয় এক দুর্গ। 
প্রাচীনকালের দুর্গ। বাইরে থেকে শত্রুরা 
আক্রমণ করতে পারবে না।

একদিন এক মোষ এসে শিঙ উঁচিয়ে দুর্গ ভাঙতে গেলে এক কালো ঝড় মোষকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। মাঠের ওপারে।

সেই দেখে মাঠের এক গাছের এক হনুমান লাফালাফি না করে চুপচাপ হয়ে যায়। তারও ইচ্ছে ছিল উইপোকাদের দুর্গ ভেঙে ভেঙে 
মাটি করবে।

বাবার সঙ্গে মাঠে ঘুরতে এসে এক বালক উইঢিবিতে লাথি মারতে গিয়েছিল। বাবা বাধা দিয়ে বলেছিল-----সোনা, তোমাদের ঘরে কেউ এসে লাথি মারলে, তোমার কি ভালো লাগবে?
উইপোকারা  তোমার কোনো ক্ষতি করছে না।
মনে রেখো।

আমার তো একেক সময় মনে হয়,
মাঠে মাঠে দাঁড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক ভাস্কর্য। এক নিপুণ শিল্প। কত বিরহ-বেদনায় গড়ে তুলেছে প্রকৃতি।

উইপোকারা প্রকৃতিরই এক অংশ।

উইপোকারা নিজেরাই জানে না,
তারা কত বড় শিল্পী। তাদের একটি ঘরের সঙ্গে আরেকটি ঘরের কোনো মিল নেই। প্রতিটি আলাদা। 
প্রতিটি সুন্দর। এবং মৌলিক।

এখানে অনেকগুলি উইপোকাদের
ঘর বা দুর্গের ছবি রাখা হয়েছে। যারা যা পছন্দ করবেন, সামনে এসে ঢুকে পড়ুন।

নদী পাহাড় সমুদ্রে অনেক ভ্রমণ হয়েছে, এবার না হয় উইপোকাদের সঙ্গে তাদের ঘরে 
কিংবা বাসায় ভ্রমণ করতে করতে দেখুন , উইপোকাদের ছেলেমেয়েরা আপনাদের সন্তান-সন্ততির মত।

খেলা করে। আদর চাইতে চাইতে আহার খোঁজে। এবং আপনাদের কাছে পেয়েও ভয়-ডর করবে না।

কেননা, তারা কখনও দেখেনি হিংস্রতা। বাজ ও বিদ্যুৎ তাদের কোনো আতঙ্কে ফেলতে পারেনি কোথাও।

উইপোকাদের প্রেম ও ভালোবাসায় রত্নাকর থেকে বাল্মিকী।

সবারই মনে আছে নিশ্চয়ই।

এই এইতো আমি ঢুকে পড়লাম
উইপোকাদের আনন্দের কাছে।
দুঃখের কাছে।

শিল্পের কাছে।


----------২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
----------১৩-----৬-----২০২২
----------নির্মল হালদার














ছবি : দীপাংশু মাহাত, তপন পাত্র, বাপি কর্মকার









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ