শুশনি শাকের আত্মীয়তা
--------------------------------
অনেকে কবি হওয়ার চেষ্টা করে কবি হয়ে গেছে। আমি মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেও মানুষ হতে পারিনি।
আমি যেতেও পারিনি শুশনি শাকের কাছে।
আমি না গেলেও শুশনি শাক জন্মাবেই। এই গ্রীষ্মে জলাজমিতে। এবং বর্ষাতে ফলন বেশি। তারপর অবজ্ঞার সঙ্গে অবহেলার সঙ্গে একধারে পড়ে থাকবে।
আমার সঙ্গে বাজারে দেখা হয়।
দেখা হয় কী? বলতে পারি, দেখতে পাই।
৫ টাকায় একমুঠি শুশনি শাক।
এই শাক আমার দিদি পছন্দ করতো । শুশনি শাকে ঘুম হয়।
এই শুশনি শাক এনেও দিয়েছি।
ঘুমের ওষুধ এনে দিই নি।
ঘুমের ওষুধে আমার খুব ভয়।
নিজের জন্য শুশনি শাকের কাছে যেতেও পারি না।
কোথায় কতদূরে আছে আমার জানা নেই। জলাজমির ঠিকানা আমার কাছে নেই। যেমন রসিকের ঠিকানা আমার কাছে নেই। অথচ রসিকের কাছে যেতে পারলেই, সকলের ঠিকানা।
রসিকই তো মানুষ গড়ার কারিগর। সেই জানে, শুশনি শাকের বীজ কতদূর হাসে।
সেই হাসি আমি শুনি নাই।
শুশনি শাকের চারটে পাতা একসঙ্গে। যেন একসঙ্গে দুজনের মিলন। চেয়ে আছে চরাচরে।
আমরা শুধু দেখতে পাইনা। আমরা শুধু উচ্চ ফলনশীল শাকের খোঁজ করি।কাছে গেলেই দাম লাগবে।
গ্রাম থেকে যে বুড়ি নিয়ে এসেছে বাজারে বিক্রি করতে, তার কাছেও খোঁজ করিনা ,শুশনি শাক ভোর বেলা কথা বলে না রাত্রে?
কবে শুনবো শুশনি শাকের জন্মকথা? কাছে যেতে পারবো কবে?
আমিতো এখনো মানুষ হতে পারিনি। কত কত লোক কত কিছু হয়ে গেল, আমি মানুষ হতেই পারলাম না।
মানুষ হতে পারলেই, গেঁড়ি--গুগলির সঙ্গে কথা বলা যায়। ওল--কচুর সঙ্গে কথা বলা যায়। শুয়োরের সঙ্গে গাধার সঙ্গে
কথা বলা যায়। গাভীর করুণ চোখের সঙ্গেও কথা বলা যায়।
মান পাতাতে রেখে আসা যায়
গোপন অভিমান।
অভিমান তো শুশনি শাকেরও।
বাঁধে স্নান করতে এসেও দুলাল গোপাল চেয়ে দেখলোনা শুশনি শাকের গৌরব।
স্নান করতে এসেও যশোদা মানদা
চেয়ে দেখলোনা শুশনি শাকের সবুজ।
অভিমান তো হবেই।
আমি যে আত্মীয়তা অনুভব করি,
কবে গেলাম কাছে?
শ্রীনাথ ও মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে গেলেই শুশনি শাকের ঘর। রুহিতের কাছে গেলেই শুশনি শাক। অসিতের কাছে গেলেই নদী।
কার কাছেই বা গেলাম কবে?
শোভা মাহাতর সঙ্গে আলাপের পরেও তার পিঠের তিলের কাছে যেতে পারিনি।
কার কাছেই বা যেতে পেরেছি?
বেগুন তলায় এসে পড়েছিল
একটা পোকা। কোত্থেকে এসেছিল?
আমার দেরি হয়ে যায়, দেরি হয়ে যায় মানুষ হতে। চেষ্টা করতে করতেও দেরি হয়ে যায়।
পেঁপে গাছে ফুল এলেও আমি পাড়তে পারবোনা। আমি যে ভানু
পাড়তে গিয়ে কানু পেড়েছি।
---------২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
--------৬----৬----২০২২
-------নির্মল হালদার
ছবি : বাপি কর্মকার ও উত্তম মাহাত













কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন