অনাদৃত পুটুশ ফুল
------------------------
কোনো কোনো ফুল সাজিয়ে রাখার জন্য। কোনো কোনো ফুল পূজার জন্য।
প্রতিদিন অজস্র ফুল ফোটে।
এক কবি বলেছিলেন-------------
এত ফুল কার পূজায় লাগে মা?
কোনো কোনো ফুল লোকচক্ষুর আড়ালে জন্ম নিয়ে থাকে। যেমন পুটুশ ফুল।
রাস্তার ধারে মাঠে ঘাটে পুটুশ ফুল দেখা যায়। আদর করেনা কেউ। বাড়ি নিয়ে যায় না।
আমি মনে করি, পুটুশ ফুলও প্রতিভাময়ী। তার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। এ দেশে যেমন প্রকৃত প্রতিভাকে পুরস্কৃত করা হয় না। প্রকৃত প্রতিভা উপেক্ষিত থেকে যায়। রাজার ধামাধরারা পুরস্কৃত হয়। রাজা নিজেও পুরস্কৃত হয় ধামাধরাদের কাছে।
পুটুশ ফুল এদেশের জনগণের মত। শত উপেক্ষাতেও রঙে রঙে আলো করে থাকে আমাদের মাঠ ঘাট। এবং গ্রাহ্য করে না গোলাপের রাজকীয় মর্যাদাকে। শ্বেত শুভ্র রজনীগন্ধা থেকেও পুটুশ দূরে থাকে।
মনে পড়ে, কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি জনগণের হয়ে জনগণের জন্য কবিতা লিখে গেছেন। রাজার ঘর থেকে অনেক অনেক দূরে থাকতেন।
পুটুশের বর্ণময়তা সেইরকম। সে নানা রঙ ছড়ালেও নিজের বেঁচে থাকার জন্য নিজের কাছে রাখে ডালে ডালে কাঁটা।
অকারণে ডাল ঝাঁকাতে এলেই
কাঁটা লাগবে হাতে।
জনগণের ক্ষেত্রেও দেখেছি, জনগণকে বেশি খেপালেই, বয়কট করবে ভোট।
পুটুশকেও নাড়াচাড়া করার সাহস নেই কারোর।সেও নিজের কাজ করে যাবে নিয়মমাফিক।
কেননা,সে চামর দোলানো বাতাসে বাঁচেনা। তার আছে নিজস্ব আলো হাওয়া। প্রাকৃতিক আলো-হাওয়া।
অনাদৃত হয়েও সৃষ্টি করে যাবে নিজস্ব রঙ। নিজের অহংকার।
অযথা অকারণ অনেক প্রতিভা নিয়ে লেখালেখি হয়। প্রচার হয়।
কিন্তু বটগাছের প্রতিভা নিয়ে কজন চিৎকার করে? বটগাছ তো ঝুরি নামিয়ে শিকড়ে যায়। মাটির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে।
সারাবছর মাটির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে ফসল ফলায় কৃষক। ক'জন তার দিকে চেয়ে থাকে?
এ দেশের দুর্ভাগ্য, প্রকৃত সৃজন শিল্পীর মূল্য দিতে শিখলো না। শুধু জয়-পরাজয়ের বিচার করে একজন রাজা হবে আরেকজন ভিখারি।
পুটুশ ফুলের কথা বলছি মানে, আমাকে উদাহরণ টানতে হবে, জার্মানি কিংবা অস্ট্রিয়ার একটি ফুলের। তারা দেখতে কেমন। তাদের গন্ধ কেমন। অথবা পুটুশ ফুলের কথা বললে , আমাকে উদাহরণ টানতে হবে মাড়োয়ার রাগের। তবেই সে উঁচু দরের ফুল হবে?
সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছে এক শিশু
তার উদাহরণ কি ভৈরবী রাগ?
যে এই উদাহরণ টেনে আনছে,
সে এক মস্ত প্রতিভাধর।
লোকে বলে। কিছু কিছু লোক বলে। লোকে বলে না, একটা জাল মাথার উপরে কতবার ঘুরিয়ে জলে ফেলতে হয়।
মাছ কি আর সহজে ওঠে?
মস্ত প্রতিভাধররা এদেশের নিয়ন্ত্রক। তাদেরই নিয়ন্ত্রণে শিল্প সাহিত্য ও রাজনীতি চালিত হয়ে থাকে। সেখানে পুটুশ ফুল গণনার মধ্যেই পড়ে না।
ধুতরা ফুল গণনার মধ্যে আসে?
বাংলা ভাষা বাংলা কবিতার সেবা করে, মর্যাদা না পেয়ে চলে গেছেন কবি শম্ভু রক্ষিত। আরো অনেকে।
দুঃখ করছি না, বরং বুঝতে চাইছি
আমাদের রাজ্য রাজনীতির খেলা। সেই খেলাতে হাততালি না দিয়ে, অনেকে মাঠের বাইরে।
আপোষ করতে করতে পাপোশ না হয়ে রাজদরবারে যায়নি অনেকে। এখনো দাঁড়িয়ে আছে পুটুশ ফুলের কাছে। সেও তো এ দেশের একজন।
-------২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
--------৭----৬-----২০২২
--------নির্মল হালদার
ছবি : অভিজিৎ মাজী ও দীপাংশু মাহাত




















কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন