রবিবার, ২৬ জুন, ২০২২

গেম ও কার্টুন



গেম ও কার্টুন 
-----------------

চু কিৎ কিৎ আছে?
চোর-পুলিশ খেলা আছে?
তির--ডাং আছে?
হা --ডু--ডু আছে?

এই যে সাইকেলের টায়ার নিয়ে
শিশুরা খেলা করছে, এ খেলাও কি দেখা যায় আর? কাপড়ের পুঁটলিতে লাথি মারছে শিশুরা,
আর কি দেখা যায়?

ক্রিকেটের এই সরগরম দিনেও
গাছের ডাল নিয়ে ইঁটের টুকরো নিয়ে ক্রিকেট খেলাও কি দেখা যায়?

নিজেদের মধ্যে রঙ্গরসিকতা করে
ছদ্ম মারপিটের দৃশ্য কি দেখা যায়? এক শিশু আরেক শিশুর পিছনে ছুটে যাচ্ছে , কি কারণে
ছুটে যাচ্ছে?
আমরা না জানলেও মনে হয়েছে,
শিশুদের পায়ের দাপাদাপিতে বসুমতীর বুকে তাপ তৈরি হয়। বসুমতী খুশি হয়ে ওঠে।

লাফঝাঁপ দৌড়োদৌড়ি নেই নেই।

এক শিশু আরেক শিশুর মাথার চুল টেনে দৌড়ে চলে গেল, এই যে মজা ,এও যে এক মজার খেলা, নেই নেই। কোথাও নেই।

শুধু মোবাইল গেম।

কোলে ছাগলছানা নিয়ে যে বালিকা ফুর্তি পেয়েছে মনে
সেই মন কোথায় পাবো আর?

একসঙ্গে গোল হয়ে গল্প করছে ছেলেমেয়েরা, এ ছবিও দেখা যায় না। ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল।

শুধু বালি নিয়েও খেলা ছিল।

কিল-চড়--ঘুঁষি ছিল।

রবারের ফাটা বল নিয়ে কাড়াকাড়ি। তার বদলে ছোট ছোট দুটি ভাই বাবার মোবাইল কাড়াকাড়ি করে।

মোবাইল গেম।

আধুনিক প্রযুক্তি কালের সর্ববৃহৎ আবিষ্কার। সারা পৃথিবী জুড়ে মোবাইল গেম। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার খেলা।
এই খেলার দিকে শিশুমনকে ঠেলে দিয়ে বাণিজ্য আর বাণিজ্য।

শিশুমনের সবুজ ধ্বংস করো।

মোবাইলে কার্টুন দেখতে দিয়ে
মা গেল ঘরের কাজ করতে।
শিশু তো মজে যাবেই। শিশু তো
কার্টুন নেশায় ডুবে যাবেই।

সব, সবকিছু কেড়ে নেওয়া হবে।

শিশুদের হাতে দেওয়া হচ্ছে পিস্তল বন্দুক। শিশুদের কাছে
রাখা হচ্ছে প্রতিযোগিতা।

প্লাস্টিক খেলনার তলায় চাপা পড়ছে কাঠের পুতুল। এও তো পুরনো খবর। শিশুদের কাছে নেই, রাঁধাবাড়া খেলা।
আর নেই বালির ভাত। ঘাসের তরকারি। খোলামকুচির মাছ।
আছে শুধু প্লাস্টিকের যাবতীয় মনভোলানো খেলনা।।

পুকুর অথবা নদীতে সাঁতার নেই।
আছে সুইমিংপুল।
সুইমিং পুল কতজন যেতে পারে?

ইংলিশ মিডিয়াম কতজন যেতে পারে?

অনলাইন পরীক্ষা। সন্তানের কাছে এনে দিতে হয়েছে স্মার্ট ফোন।

আর আন স্মার্টরা রসাতলে যাক।
লেবার হোক। তার বাবা লেবার
তার দাদু লেবার। তার মা ঠাকুমাও লেবারের কাজ করে।

ইঁটভাটা তো আছে।

শিশু শ্রমিক আছে। রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পুলিশ মিলিটারি যেমন দরকার, তেমনি দরকার শ্রমিক শ্রেণী। সঙ্গে শিশু শ্রমিকও।

চায়ের দোকানে চায়ের গ্লাস ধুতে ধুতে ঘুমিয়ে পড়বে আমাদের শিশু। দেবদূত।

এই দেবদূতদের ডানা ছেঁটে দিয়েছে রাষ্ট্রব্যবস্থা।

ধুলোখেলা নেই। ধুলোমাটি খেলাও নেই।
শুধু মন খারাপ।


--------১১ আষাঢ় ১৪২৯
-------২৬----৬-----২০২২
------নির্মল হালদার










ছবি : অভিজিৎ মাজী

















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ