রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

বাসক গাছের ছায়ায় আমার শুশ্রূষা



বাসক গাছের ছায়ায় আমার শুশ্রূষা
---------------------------------------------
শাল-সেগুনের মত মান মর্যাদা নেই, পড়ে আছে পুকুরের ধারে। গোবর ডোবার পাশে।

বনে বাদাড়েও আছে।

ক'জন আর গণনা করে!

একটা সময় ছিল কিষ্ট মাহাত গাছ লাগাতো মনের আনন্দে।
তার গ্রাম বাথানে একটার পর একটা গাছ লাগিয়ে গেছে।
নানা রকম গাছ। আর বাসক গাছ লাগিয়েছে যেখানে সেখানে। রাস্তায়।

এখন  কোথায় কৃষ্ণ? কোথায় রাম? এই গাছের ছবিগুলি বাথান গ্রামের। কাছে গেলে হয়তো বা শুনতে পাবো, কিষ্ট মাহাতোর গলা। হয়তো বা জিজ্ঞেস করবে-------
কেমন আছেন?

বাসক গাছের মতোই তার কণ্ঠস্বর থেকে
ঝরে পড়বে শুশ্রূষা।

বাসক গাছের উপকারিতা নিয়ে
কোথাও কোনো প্রশ্ন আসবে না।
কিন্তু বাসক গাছের উপকারিতা নিয়ে কথা বলতেই হবে।

সর্দি কাশি হলে, বাসক পাতা
বেটে তার রস । দু' চারদিন খাওয়ার পরেই সুস্থতা।

আমি দেখেছি আমার বড়দা
সর্দি কাশি হলেই, বাসক পাতার রস। অন্য কোনো ওষুধপত্র ব্যবহার করতো না।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে
নানা রকম রোগে ব্যবহার করা হয়। সর্দি কাশির জন্য অব্যর্থ ওষুধ----বাসক পাতার রস।
তাছাড়া স্নানের আধ ঘণ্টা আগে
বাসক পাতা বেটে মাথায় মাখলে
উকুন মরে যায়।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ-------বাসক। বাসকের ছাল পাতা রস সবই উপকারী।
প্রাথমিক অবস্থায় ফোঁড়ার চারপাশে বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।

অথচ এই বাসক গাছটি অবহেলার সঙ্গে বড় হয়। পড়ে থাকে একদিকে। 
গ্রামের মানুষ এই গাছটির উপকারিতার কথা জানলেও শহর জীবনের মানুষ বাসক পাতা সম্পর্কে  বিমুখ।

ঘর সাজাতে টবে টবে ফুল গাছ।
পাতাবাহারও থাকে। ছাদেও বাগান করে থাকে শহরের মানুষ।

কারোর মনে আসে না একটি বাসক গাছ। 


হৃদয়বান মানুষের মতোই বাসক গাছ। তার ছায়া কুড়ালেও শুশ্রূষা। কাছে দাঁড়ালেই, হৃদয়ের শব্দ।


সারাদিন কর্কশ শব্দে দিন যায়।
এবং কর্কশ শব্দে আঁধার ঘনায়।
এই আঁধার কেটে যাবে আমরা যদি গাছ লাগাই।

নানা রকম গাছের সঙ্গে নানা রকম ঔষধি বৃক্ষ।
আমাদের মা--জেঠি--খুড়ির মত
দাঁড়িয়ে থাকবে কাছে কাছে।
আমাদের পিসি মাসির মত
দাঁড়িয়ে থাকবে কাছে কাছে। আদর করতে করতে কোলে--কাঁখে--মাথায় উঠে পড়বো।

আমাদের কোনো রোগ জ্বালা থাকবে না।

বাসক গাছের নিকটে দাঁড়ালে
আরো অনেক গাছের আত্মীয়তা কাছে পাবো।

সরস্বতী পূজায় বাসক ফুলের খোঁজ করেও যেন মনে রাখি, বাসক গাছটি থাকে সারা বছর।

আদাড়ে--বাদাড়ে।

বনসৃজন প্রকল্প কথার কথা।
সমাজ জীবনে কাজে লাগে না।
কোন্ গাছ থেকে কি উপকার পাবে জনগণ, জানতে পারে না কেউ কখনো।

ইউক্যালিপটাস সোনাঝুরিত ছেয়ে থাকে মাঠের পর মাঠ। সেই সব গাছের কাঠ মুনাফা নিয়ে আসে সরকারের ঘরে।

জনগণের ঘরে ঘরে হাঁপ ওঠে।

বাসক পাতায় ধুলো জমে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে যায় বাতাস।

কিষ্ট পদ মাহাতদের আত্মা ঘুরে বেড়ায়  বাথান থেকে বাথান।

শহর ও গ্রাম।


--------২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
--------১২----৬----২০২২
--------নির্মল হালদার









ছবি : বাপি কর্মকার








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ