প্রকৃতির তন্ময়তা
----------------------
প্রকৃতি তন্ময় হয়েই থাকে তার রঙ রূপ ও রসে। প্রকৃতির তন্ময়তার কাছে আমার প্রবেশ নেই। তার তন্ময়তা ভেঙ্গে ফেলবো এরকম ক্ষমতাও নেই।
আমি অন্য একজনের তন্ময়তাকে চিনি। যে পুলিশের চাকরি করতে করতেও তার সুরে কথায় গানে তন্ময় হয়েই থাকে ।সম্প্রতিকালে
" রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত " ছবিতে আমাদের তন্ময়, তন্ময় সরকার গানের কথা লিখেছে। সুরও করেছে।
এই তন্ময় তার গানের মতোই সুরের মতোই শান্ত প্রকৃতির। যা তার আচরণেও প্রকাশ পেয়ে থাকে।
২০০০ সালের পর এই কয়েক বছর আগে বোলপুর শান্তিনিকেতনে দেখা হলো তার সঙ্গে। সে তখন বোলপুরে পুলিশ বিভাগে উচ্চপদস্থ অফিসার।
বন্ধুদের এক আড্ডায় সেই আমার কাছে এসে বললো-------চিনতে পারছেন?
না, চিনতে পারিনি।
কি করে চিনবো?
২০০০ সালে তন্ময় অনিন্দ্য আর শুভময় তাদের গানের দল--- " দুনিয়াশা " কে নিয়ে এসেছিল খড়িদুয়ারা কুমারী গ্রামের সৃজন উৎসবে।
সৃজন উৎসবের কর্ণধার সৈকত রক্ষিত তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সৃজন উৎসব শেষে তন্ময়রা তিন বন্ধু ফেরার সময়
আমার ডেরাতেই কাটিয়েছিল একটা রাত। তার আগে সান্ধ্য আড্ডায় তাদের তিন বন্ধুর গান আমাদের মুগ্ধ করেছিল খুব। সেই প্রথম তাদের কাছেই শুনেছিলাম------
ভালো আছি ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।।
দিন কেটে যায়।
আর কোনো যোগাযোগ কিংবা সুখ-দুঃখ বিনিময় তন্ময়ের সঙ্গে আমার ছিলনা।
সে নিশ্চয়ই তখন জীবিকা ও জীবনকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করছিল। ধারণা করতে পারি।
সে চাকরি পেয়ে পুরুলিয়াতে এসেও কাজ করে গেছে। তার কাছেই শুনেছি। তখন সে আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।
কারণটা কি, তন্ময় বলবে না নিশ্চয়ই। তবে সে এখন নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। আমি প্রতিদিন দুপুরের সময় তাকে হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাই-----
খেয়েছো তো?
সে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে উত্তর দেয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমার ফোন ধরে। কথা বলে।
সে যখন বোলপুরে আমি তখন শান্তিনিকেতনের পটভূমিতে একটি উপন্যাস লিখছিলাম। হোয়াটসঅ্যাপে।
ধারাবাহিক।
দু-চার জন বন্ধুকেও পাঠিয়েছি। তার মধ্যে তন্ময় একজন পাঠক।
সে আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে খুব। তারপর তো সেই লেখা মাঝপথে বন্ধ করে দিলাম। তো
এই সেদিনও সে আমাকে বলছিল, লেখাটা শেষ করুন।
একটা কথা বলে রাখি, শান্তিনিকেতন বিষয়ে আমি কোনো কিছু কল্পিত লেখা লিখে থাকলে, তাকে পাঠাই। এবং সে শান্তিনিকেতন বিষয় হলেই, উদ্দীপ্ত হয়ে আমাকে উত্তর দেয়।
এই সময়টা বিচ্ছিন্নতার। কেউ কারো সঙ্গেই জড়িয়ে থাকছে না। বেঁধে বেঁধে রাখার চেষ্টা করলেও
কেউ আর পছন্দ করছে না বন্ধন।
একলা বেঁচে থাকার এইযে নানান
প্রয়াস দেখা যাচ্ছে এই সময়ে, তখন এই সময়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে তন্ময় অনেককে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা অন্তত করে।
আমি জানি।
আমি জানি তার পাগলামো। তার আবেগ। তার কবিতা। যদিও তার কাছে কবিতা চাইলেই শুনতে পাই------লেখা নেই দাদা।
আমি শুনতে চাই না। তাগাদা দি।
চাপ দি। তারপর হয়তো একটি কবিতা।
আমাদের উত্তম মাহাতর ওয়েব ম্যাগাজিন "অরন্ধন "এ কয়েকবার লিখেছে কবিতা। গদ্য।
তন্ময় তার সাহিত্য কর্মেও নম্র।
আমি শুনতে পাই, তার নিচু গলায় সে বলছে, তার না বলা কথা।
আপাদমস্তক প্রেমিক যারা, তারা তো এরকমই হয়। যেকোনো ভালোবাসা এক পাহাড়ী ঝরনা।
লুকিয়ে থাকে। নিকটে গেলে গোপন বেদনার ধারায় আমাকে ভিজিয়ে দেয়।
আমি ঝর্ণা থেকে নুড়ি কুড়াই।
হৃৎপিণ্ডের টুকরো টুকরো নুড়ি।
নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে রক্তের দেখা পাই।
আলো দেখতে পাই।
আমি বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। তখন তন্ময়ের মত এক প্রেমিকের কাছে এবং তার সুরের কাছে গিয়ে আসন পাততে ইচ্ছে করে। মনে হয়, গল্প করি।
সেই গল্পে পাহাড়-নদী জঙ্গল তো থাকবেই। থাকবেই, এক উড়ে যাওয়া মেঘ।
প্রেমিকার শাড়ির মতো অথবা
গরিব-দুখিনী মায়ের শাড়ির মতো।
তন্ময় সেই শাড়িতে বুনন করে
বেদনা বিরহ। কান্না।
-------১০ আষাঢ় ১৪২৯
-------২৫----৬----২০২২
-------নির্মল হালদার
ছবি : সংগৃহীত





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন