জালের বিস্তার
------------------
ওরা জাল ফেলার শব্দ পেলেই,
বড় মাছের কোলে লুকিয়ে পড়ে ছোট মাছ। মেজো মাছের কোলে লুকিয়ে পড়ে সেজো মাছ।
ওরা ভয়ে ভয়ে থাকে।
আজ ভোর রাতে অনেক অনেক মাছ জল থেকে ডাঙায় চলে গেছে। সঙ্গে চলে গেছে গেঁড়ি--গুগলিও।
ওরা জাল ফেলার শব্দ শুনতে পায়। ওদের রক্ষা করতে কেউ নেই। ওরা জল ছাড়া আর কোনো আত্মরক্ষার বা বেঁচে থাকার আশ্রয় খুঁজে পায়নি। ওরা আমাকে একদিন ডেকেছিল।
আমি জলদেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম------ওদের রক্ষা করো।
জলদেবী আমার প্রার্থনা শুনে হেসে উঠেছিলেন।
সূর্য তারা চাঁদ জলে নেমে মাছের সঙ্গে খেলা করে। আকাশও নেমে পড়ে।
আমি এক এক দিন ওই খেলাতে
খেলতে থাকি। আমি এক এক দিন মাছের ডানা পেয়ে জলে জলে সাঁতার।
একদিন একটা মাছ আমাকে বলছিল-----সে আমাকে সোনার আংটি দিতে পারে। যদি আমি তাকে জাল থেকে জালের বিস্তার থেকে বাঁচাতে পারি।
আংটির লোভ আমার নেই। তবে আমি কি বাঁচাতে পারি?
ফনি মনসা গাছের হলুদ ফুল আমি কি বাঁচাতে পেরেছি?
এক মাছের বিবাহে আমি আমন্ত্রণ পেলাম। আমন্ত্রণ রক্ষা করতেও চলে গেছি। যৌতুক হিসেবে একটি নোলক আমার তরফ থেকে।
সেই বিবাহ বাসরে মাগুর ছিল চ্যাং ছিল। বোয়াল মাছও ছিল।
সেদিন শালুক পদ্ম মালা হয়ে দুলছিল বর-কনের গলায়।
সেদিনই আবার মাঝরাতে জাল পড়েছিল। আমি সবাইকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। ভোরের দিকে মাছ শিকারীর দল চলে গেলে, আমি উঠে এসে ছিলাম আমার ডাঙায়।
নদীর পাড়ে পুকুরের পাড়ে জাল শুকাতে দেখলে আমি চুপিচুপি মাছধরা জাল দাঁতে কেটে দিয়ে আসি।
কেউ কেউ ছিপ ফেললে কোলাব্যাঙ ছিপ নিয়ে পালায়। কেননা, জলের ভেতরেই সাপ ব্যাঙ মাছের আশ্রয়।
আশ্রয় থেকে উচ্ছেদ হলে বেঁচে থাকার অর্থ থাকে না। আর অধিকারের কথা কাকেই বা বলবে?
জাল ফেলার শব্দ পেলেই, ওরা কুঁকড়ে যায়। ওদের খেলায় আর ঢেউ ওঠে না।
যখনি জাল পড়ে জলে, চিংড়ি মাছ ওদের শুঁড়ে আটকাবার চেষ্টা করে। দেখা যায়, বেঁকেচুরে যাচ্ছে শুঁড়।
যন্ত্রণা।
আজ সকালে মাছ শিকারীদের একটা দল জাল ফেলেছে।
আমিও সঙ্গে সঙ্গে জলে নেমে
মাছের পৃথিবীকে কোলে নিয়ে আছি।
জাল অনেক ঘুরে ঘুরে একটিও মাছ পায় না। পুঁটি ও মৌরলা আমার কাঁধে বসে ছিল। তাদের যে কি আনন্দ, তারা আমার কাঁধে নাচতে থাকে।
রোদ ওঠে।
মাছ ওঠে না।
শুধু জালের সঙ্গে জল উঠে আসে।
-------৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------১৫----৬----২০২২
------নির্মল হালদার
ছবি: অভিজিৎ মাজী






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন