বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২

গভীর বনের গভীর মনের বিষণ্ণতা



গভীর বনের গভীর মনের বিষণ্ণতা
------------------------------------------

বন জঙ্গলের কাছে গেলেই আমার মনে পড়ে আমাদের বন্ধু মৃদুল দাশগুপ্তর একটি কবিতার লাইন-----
তোমাকে বনের মধ্যে
ছুটে যাওয়া পথ মনে হয়।

বন কোথায় আমাদের আশেপাশে? যেটুকু অবশিষ্ট আছে অযোধ্যায় সেও শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।
অন্যান্য রাজ্যে যে সমস্ত বন জঙ্গল আছে, শোনা যাচ্ছে সেই সব বন উচ্ছেদ করে রেললাইন পাতবে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা। যাদের হাঁ-মুখে আগামী দিনে ঢুকে পড়বে চন্দ্র সূর্য।

বনে থাকে বাঘ জলে থাকে মাছ----
এখন রূপকথার মতো শোনায়। এখন দাঁতালো শুয়োর পথ রুখে দাঁড়ায় না। দৌড়োদৌড়ি করে না খরগোশ।

বন কেটে মোবাইল টাওয়ার গেড়ে বসছে। বন কেটে পর্যটন দপ্তরের বাংলো।

পাখিরা পালিয়েছে।

ঘোড়ায় উঠে রাজপুত্র আর বনে জঙ্গলে শিকার করতে আসে না।

যে আদিবাসীদের বসত ভূমি বন,
যে বন আদিবাসীদের ঘর দুয়ার,
তারাও উচ্ছেদ হতে চলেছে।

প্রযুক্তির পাল্লায় পড়ে মনও উধাও হতে চলেছে। আজ।
কপাল চাপড়ানো ছাড়া কীইবা করার আছে। অথবা যুদ্ধ করতে হয়।

যুদ্ধ করার জন্য শিরদাঁড়া খুঁজে পাবো তো? যেমন খুঁজে পাবো না
হরিতকি বহেড়া। অথবা ঔষধি বৃক্ষ।

কোনো কোনো জঙ্গলে কোনো
গাছের তলায় গরাম থান। পড়ে থাকে মাটির হাতি ঘোড়া। তাদের অস্তিত্ব আর থাকবে বলে মনে হয় না।
বনের নির্জনতা হারিয়ে ঝরাপাতার ওড়াউড়ি। যেনবা একটি হরিণ শিশু খুঁজে বেড়ায় তার মাকে।

অচেনা এক ঝোরা থেকে জল এসে প্রবেশ করতো বনে। সেই জল ছিল জন্তু জানোয়ারদের
একমাত্র পানীয় জল।

আস্তে আস্তে শুকিয়ে গেল ।

ঝোরার উৎসে ফড়িঙ উড়েছে কত। পাখি উড়েছে।সেই উৎসের মুখ কোথায় গেল?

হস্তি শাবক ছটফট করে।

গাছের গায়ে গায়ে বাসা বেঁধেছিল
মাকড়সা। আজ তারাও উচ্ছেদ।
বনে বনে ঘুরে বেড়ায় চোরা শিকারি।

বন দপ্তরের কাজ শুধু ইউক্যালিপটাস ও সোনাঝুরি গাছ লাগিয়ে জ্বালানি কাঠের ব্যবসা।

বনের ভিতর দিয়ে গেলে ছোট এক পাহাড়। একা। সেও কাঁপছে। যেকোনো সময়  দৈত্যের মতো যন্ত্র এসে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেবে।

হাহাকার । নীরবে নিঃশব্দে।

বনের ছায়া পড়বে না আর মনে।

জঙ্গল থেকে শাল পাতা পেড়ে
থালা তৈরি ক'রে বাজারে বিক্রি।
যাদের জীবিকা তারাও  হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। কেঁদ পাতাও প্রয়োজনের পাতা। কেঁদ পাতা ছাড়া বিড়ির দোক্তা কীসে মুড়বে?

একটা শ্রেণি কেঁদ পাতা সংগ্রহ করে। বিক্রি করে। তারা যাবে কোথায়?

বন আমাদের অস্তিত্ব।

অস্তিত্ব রক্ষা করতে আমরা কী করছি?



------১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------২৯----৫-----২০২২
------নির্মল হালদার


















ছবি : অভিজিৎ মাজী












কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ