আকরিক
------------
পুরুলিয়ার প্রকৃতি পুরুলিয়ার মানুষ পুরুলিয়ার ভাষা পুরুলিয়ার সংস্কৃতি পুরুলিয়ার অর্থনীতি
সৈকতের রক্তে।
আর তাই সৈকতের গল্প-উপন্যাসে
পুরুলিয়া জীবন্ত হয়ে ওঠে। জ্যান্ত হয়ে ওঠে শুকনো কাঁসাই।
না, সৈকত রক্ষিতের গল্প-উপন্যাস নিয়ে আমি একবিন্দু লিখছি না।
আমি শুধু তার পাঠক তার গল্প উপন্যাস থেকে আবেগ চাই।
বাঁচার রসদ চাই।
সৈকতের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের গল্প কয়েক যুগের। তো সেই গল্প লেখার মত
ধৈর্য্য আমার নেই।
সৈকতের জীবন চলেছে আজও
বিচিত্র ধারায়। তার রঙ--রূপের
হদিশ পেতে অথবা নাগাল পাওয়া আমার পক্ষে কঠিন। এখানে আমি শুধু বলবো, সে একজন আঁকাড়া মানুষ। সে তাই
তার প্রথম জীবনে বেছে নিয়েছিল, একটি পাহাড়ের কাহিনী। পাহাড় থেকে পাথর তুলে নেবার কাহিনী। নামকরণ করেছিল "আকরিক"।
এক লড়াইয়ের গল্প।
লড়াই সৈকতের জীবনেও। তার
কিছু কিছু বিষয় আমি জানলেও
একটুও লিখছি না। বরং লিখতে চাই-------সৈকতের লেখালেখি শুরু হয়েছিল কবিতা দিয়েই। এবং তার প্রথম কবিতার বই------"শব্দভেদী"।
সাম্প্রতিককালেও সে নিয়মিত কবিতা লেখে। সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা যায় তার কবিতা।
কবিতার বই করতে বললে সে এড়িয়ে যায়।
তার গল্প উপন্যাস অনেকগুলি।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রকাশক তার বই প্রকাশ করে গৌরব বোধ করে।
সৈকত যদিও প্রকাশকের দুয়ারে দুয়ারে নিজের লেখা নিয়ে ফেরি করে বেড়ায় না।কোনোদিন যায়নি প্রতিষ্ঠানের কাছে।
বাংলাবাজারের একটি প্রধান দৈনিক থেকে চাকরির প্রস্তাব এসেছিল তার কাছে। সে ফিরিয়ে দিয়েছিল।
সৈকত রক্ষিত একজন আদ্যোপান্ত একগুঁয়ে ও জেদি মানুষ। প্রতিষ্ঠান বিমুখ মানুষ।
রোদে রোদে ঝড়-বৃষ্টিতে হেঁটে হেঁটে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম। নদী থেকে পাহাড় ও জঙ্গলে হেঁটে যাওয়া এক চিরায়ত মানুষ।
এই মানুষটিকে আমি একসময়
ভয় করেছি কত। সেই তো স্বাভাবিক------ভালবাসলে ভয়ও করতে হয়। কারণে অকারণে সে কিছু বললে, চুপচাপ শুনে গেছি শুধু।
তার কাছ থেকে কোনোদিন চাইনি কিছুই। সঙ্গে শুধু থাকতে চেয়েছি।
সেই থাকাথাকি কিংবা ভালবাসাকেই সৈকত বলতো------"সম্পৃক্ততা"।
সে এও বলতো------------যে
কারোর প্রতি তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে তার কোনো কষ্ট নেই।
আমি কষ্ট পেয়েছি সে যখন পুরুলিয়া ছেড়ে কলকাতা চলে গেল জীবিকার টানে। লেখালিখির টানে।
আমি পুরুলিয়াতে পড়ে রইলাম। একা। আমার লতিয়ে ওঠার গাছটি হারিয়ে আমি সাময়িকভাবে হলেও পীড়িত হয়েছিলাম।
ভেঙে পড়েছিলাম।
অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না।
বন্ধ হয়ে গেছলো আমাদের কাগজ "আমরা সত্তরের যীশু"।
আমার বাঁচার কোনো অবলম্বন ছিল না। আমার চোখের তলায় কালি জমতে জমতে
আমি মেঘ দেখতেও ভুলে গেছলাম।
আমি রৌদ্রদগ্ধ হয়ে কেবল বৃষ্টি খুঁজেছি।
ধারাস্নান।
সৈকত তার নিজের জায়গায়
পোক্ত হয়ে লেখালেখি করছে।
খবর পাই। খবর পাইনা।
তারপর আবার যোগাযোগ শুরু।
বই মেলায় স্টল। নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা। তারপর আবার শুরু হলো সৈকতের স্বপ্নের "সৃজন উৎসব"।
নাট্যকার দেবাশিস মজুমদার ছিল। কল্লোল ছিল। শ্যাম ভাইয়া ছিল। ছিল আরও কতজন।
এখনো সবাই আছি নিজের নিজের জায়গায়। তবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। বিষণ্ণতায় আছি।
গোধূলির রাঙা আলোয় চরাচর জুড়ে যে রূপ এসে দাঁড়ায় আমাদের কাছে , তাকে অঞ্জলিতে নিয়ে হেঁটে যাই । আজও।
সৈকত আলো হয়ে ভালোবাসায় থেকো।
-------২৬ বৈশাখ ১৪২৯
-----১০----৫----২০২২
------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার ও অজয় মাহাত
আরও পড়ুন














কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন