রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২২

বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে বসে আছো দেবতা আমার


        


বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে বসে আছো দেবতা আমার

-------------------
নির্মল হালদার 
-------------------

মালথোড় বেলমা পিঠাজোড় 
ডুমুরশোল চিপিদা পানিপাথর সুজানডি নাকি ডাকাকেঁদু থেকে এসেছিল?
যে গ্রাম থেকেই আসুক তার নাম? যে নামই হোক, সে কোনোদিনই পাখি মারে নাই।

লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে গরু বাগালি করলেও সে কখনো
গরুর গায়ে হাত তুলে নাই।

কাঁধে কখনোই থাকে না তীর ধনুক। হাতে কখনোই থাকে না গুলতি। তার কাছে শুধু বই।

আজ শুধু অঙ্কের বই।


অঙ্ক করতে করতে সে দেখে
পাখির মুখে আহার বাটছে 
আরেকটা পাখি।

আজ সকাল বেলায় দেখছিল
একটা কাঠবিড়ালি ঘরের দুয়ারে এসে হতাশ হয়ে ফিরে গেল।

কোনো খাদ্য নেই।

সেই মুহুর্তেই তার মনে হয়েছিল,
তরমুজ ক্ষেত থেকে একটা পাকা তরমুজ তুলে নিয়ে আসতে।

তরমুজটা ভেঙে দিলে, লাফাতে লাফাতে কাঠবিড়ালিটা খেতে পারতো। জলতেষ্টাও মিটে যেত তার।

কাঠবিড়ালিদের জন্য পাখপাখালির জন্য জলের ব্যবস্থা থাকা দরকার বৈকি।

এখনো তাদের গ্রামে দু তিনটে বাঁধ আছে। আর তাই গাই গরুর দল বাঁধে নেমে জল খায়।

কাঠবিড়ালি কোথায় যাবে?

পাখিরা কোথায় যাবে?

এই ঝাঁ ঝাঁ করা রোদে গাইগরুকে নিয়ে মাঠে যেতে ইচ্ছে করে না তার। কেননা, মাঠে ঘাস নেই। মিছিমিছি রোদে রোদে পুড়বে কেন তারা?

সেদিন টিউশন থেকে ফিরতেই,
তার মা বললো, যা গরু গিলাকে
ঘুরায় লিয়ে আয়-------।

সে কিছু না বলে, কুলির দোকানে গিয়ে মটর ভাজা কিনে চিবোতে থাকে। তার মনে হয়, আজ অন্তত
রোদ থেকে গরু গুলোকে বাঁচাতে পারলো।

সে নিজেও অবশ্য দু কিলোমিটার
সাইকেল চালিয়ে এসেছে। টিউশনি থেকে।
তাদের গ্রামে অঙ্কের কোনো 
টিচার নেই। তাকে যেতে হয় বাধ্য হয়ে দূরের গ্রাম।

এই সেদিন গাজনের মেলায় 
সারা রাত জুড়ে ছো--নাচ হলো।
দিনের বেলা মুরগা লড়াই হলো।
সে মুরগা লড়াইয়ের মাঠ থেকে
ছুটে চলে এসেছিল  ঘরে।

হিংসার লড়াই রক্তারক্তির লড়াই
সে দু চোখে দেখতে পারেনি। তার মনেও হয়েছে, মানুষ অহিংসায় থাকতে পারেনা বলে, গরাম থানেও মুরগা বলি। কালীর থানেও ছাগল বলি।

এত রক্ত!

সইতে পারে না সে।

তার বন্ধুকে বলছিল একদিন,
জানিস----কাকতাড়ুয়াকে আমার ভাল্লাগেনা। কাকতাড়ুয়ার জন্য
শাকসবজির ক্ষেতে পাখিরা আসতে ভয় করে।

অঙ্ক যখন মেলেনা সে খাতায় আঁকতে থাকে পাখি আর পাখি।
সেও পাখির সঙ্গে একদিন উড়তে উড়তে চলে যাবে দিগন্তের কাছে।

কবে যাবে?

অঙ্ক তার পিছু ছাড়ছে না। আবার
মা বাবার কথা না শুনলে তার কষ্ট হয়। সে বিপন্ন বোধ করে।

সে বিষণ্ণ হয়ে ওঠে।

বাঁধনা পরবের গরুর লড়াই
সে কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। গাঁয়ে গাঁয়ে আজকাল যে কাড়া লড়াইয়ের নামে হিংসার পরে হিংসা রচিত হয় সে পছন্দ করে না একদম।
সে সব থেকে  অনেক দূরের একটা গাছের ডালে সে শুয়ে থাকে। চুপচাপ।
এবং সেই গাছের পাতারা তাকে শুশ্রূষা জোগায়।
গাছের পোকারা ডালে ডালে
হেঁটে বেড়ালেও তার পায়ে , হাতে ,
গায়ে একবারের জন্যেও ওঠে না।
তারা মনে করে, এই পৃথিবী সুন্দর হোক। সুসভ্য হোক। কেউ কাউকেই কামড়াকামড়ি আঁচড়াআঁচড়ি করবে না।

সেও যে অশথ পাতার বাঁশি বাজায়। সেও যে রাগিনীকে বলেছে, হরিণের শিঙে লটকে চাঁদ হাসবেই। 

সে কিরাত। সে আমার বন্ধু।

বহু যুগের ওপার হতে এসেছে সে।
তাকে আমি চিনতে পারি।

তাকে আমি চিনতে পারিনা।


------১০ বৈশাখ ১৪২৯
-----২৪----৪----২০২২
-----বেলা---৪---৪৬





                  ছবি : অসিত মাহাত





















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ