বুধবার, ১ জুন, ২০২২

জল দাও আমার শিকড়ে



জল দাও আমার শিকড়ে 
-------------------------------

মৌকে ভুলেই গেছলাম।

সময়ের পলি পড়ে পড়ে চাপা পড়ে গেছলো তার নাম।
এ আমারই দোষ। অথচ তাকে মনে থাকলে তার আলোতে ঋদ্ধ হয়ে উঠতাম অবশ্যই।

ভাগ্যের দোষে যা হয় আমার ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক।

মৌয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল
১৯৯০--এ। আমাদের পুরুলিয়াতে। কবি আলোক সরকারের সংবর্ধনায়। যা আয়োজন করেছিলাম আমরাই।

মৌ তখন তরুণ কবি।

সে মেলামেশায় জড়তা বোধ করে। আমি তো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কাজে ব্যস্ত। আমি আর তাকে কত সঙ্গ দেবো! তবে
এক বালককে সঙ্গী হিসেবে জুটিয়ে দিয়েছিলাম। সেই বালক ছিল ঝিলম। সে তখন সদ্য মাতৃহারা। বয়স ৭ বছর। আমার সঙ্গেই থাকে। তার মন ভোলানোর জন্য অনুষ্ঠানের সকাল থেকেই আমার কাছে ছিল।

মৌয়ের কবিতার বই-----
চিল নামছে, চুপ----------হাতে পেয়েই মনে পড়ছিল পুরনো দিনের গল্প।
এই গল্পের একটি মর্মান্তিক ঘটনা
ঝিলমের অকাল প্রয়াণ। তবু দু'একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে,
অনুষ্ঠানের ওই দু দিনেই মৌয়ের ন্যাওটো হয়ে গেছলো ঝিলম।

আমার ভাইপো।

আমার উত্তরাধিকারী।

মৌয়ের কবিতার বইটা আমার কাছে আসতেই এসে পড়লো
তরতর করে কত ছবি।

মৌয়ের কি মনে পড়বে ঝিলমের মুখ?

আমার মনে পড়ছে তখন মৌয়ের
কবিতা নিয়ে আমরা কয়েকজন
উত্তেজিত হয়েছি। আবার উত্তেজনা ফুটে উঠছে মৌয়ের
নতুন বই নিয়ে।

আজকের বাংলা কবিতার আকালে মৌয়ের কবিতা আমাদের নিঃশ্বাসকে সহজ ও সাবলীল করে। মনের অভাব-অনটন
থেকে মুক্ত করে।

স্বর্গ মর্ত্য পাতাল থেকে খুঁড়ে নিয়ে
আসা কবিতা গুলি হাজার হাজার বছরের প্রাণ। একই সঙ্গে প্রাচীন এবং আধুনিক।

কবিতা গুলির উদাহরণ দিতে চাই না। বরং পাঠকের কাছে মিনতি করছি আপনারা পড়ুন-----
চিল নামছে, চুপ।

কোলাহলকে বারণ করতেই হবে। নইলে যে চিলের ভূমিকা
দেখা যাবে না। চিলও যে এক প্রাণ। তার মঞ্জরি ছড়াতে ছড়াতে কতদূর যাবে কতদূর যায়, দেখতে তো হবেই।

বাংলা কবিতা আজকের বাংলা কবিতা পাঠ করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। তখন আলোকবর্তিকা হয়ে এলো মৌ দাশগুপ্ত।
তার কবিতা নিয়মিত পড়তে চাই।

অন্ন--জল--বায়ুর মত প্রতিদিন কাছে পেতে চাই।

মৌয়ের বাড়িও গেছি কালীদার সঙ্গে। তখন মৌয়ের বাবা দীপংকর দাশগুপ্ত ছিলেন। তিনি
তাঁর প্রথম কবিতার বই উপহার দিয়েছিলেন আমাকে। তাঁরও
কবিতাসংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে।
সংকলন সম্পাদনা প্রস্তাবনার কাজটি করেছে আমাদের বন্ধু অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র।
তাকে আমার অভিনন্দন। অভিনন্দন জানাই প্রকাশক গৌতম মন্ডলকে। সে তার প্রকাশনী আদম থেকেই দীপংকরবাবু ও মৌয়ের কবিতার বই দুটি প্রকাশ করেছে। তার কাছেও অনুরোধ রাখছি সে যেন  আগামী দিনে আরো অনেক লুকিয়ে থাকা আলো, গোপনে থাকা জলের স্রোত আমাদের কাছে নিয়ে আসে।

আমরা  কেউ কেউ মৌয়ের কাছে
উচ্চারণ করবো----------
জল দাও জল দাও -------


-----১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-----১----৬----২০২২
-----নির্মল হালদার
















মৌ দাশগুপ্ত-র কবিতার বই




















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ