শাল গাছ গুলি আছে
-----------------------------
কালীদা,
আপনি একসময় উচ্চারণ করেছিলেন কবিতার এই পংক্তি।
কবিতার পংক্তি নাকি এক বাণী?
হ্যাঁ কালীদা, চারদিকের ধ্বংসাত্মক এই সময়েও শাল গাছ গুলি আছে--------আমাদের একমাত্র ভরসা।
ভরসা আপনিও আমাদের কারো কারো কাছে।
ভরসা বলুন আশ্রয় বলুন আমার যৌবন থেকে আজও আপনি আমার কাছে।
আমার মত এক মফস্বলী যুবক
নানা দিক থেকে আপনার কাছে
প্রশ্রয় পেয়েছে। আর তাই, নাগরিক মননের কাছে কলকাতার পথে পথে হেঁটেছি।
আপনার সঙ্গে চলে গেছি আলোক সরকারের কাছে। তাঁকে
দেখেই মনে হয়েছে, তিনি এক তাপস।
সাধক। চিরজীবী।
আপনাকে কাছে পেয়েই আপনার জন্য কাছে পেলাম------গীতবিতান।
আপনি বললেন, রবীন্দ্রনাথের গান যখন শুনবে, গীতবিতান টা কাছে রেখো। গানটা শুনতে শুনতে গানটা খুলে দেখবে অবশ্যই।
অনির্বাণ কে বলতেই আমাকে উপহার দিলো গীতবিতান।
নন্দিনী উপহার দিলো , রেডিও।
আপনি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করলেও কোনোদিন শুনতে ভুল করেন না সকালবেলার রেডিও থেকে রবীন্দ্র সংগীত।
আপনি নিজেও একজন রবীন্দ্র জিজ্ঞাসু। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে
আপনার আগ্রহ আপনার উন্মাদনা থেকে আপনি লিখেছেন
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে কত কিছু।
ধ্রুপদী সঙ্গীত নিয়েও আপনার আগ্রহ আমি দেখেছি। আপনার ইচ্ছে ছিল খুব, ধ্রুপদী সঙ্গীতের আমিও যেন চর্চা করি। একবার তো এক আসরে আমাকে নিয়ে গেছলেন।
আমি হতাশ করেছি আপনাকে।
শ্রেষ্ঠ কিছু ধারণ করার মত
আমার যে ক্ষমতা নেই কালীদা।
আমি শুধু নীরবে নিঃশব্দে আমার জীবন প্রবাহে শাল গাছ গুলি দেখতে পাই। যা আপনি আমাকে নতুন করে দেখিয়েছেন।
যেমনভাবে দেখিয়েছেন, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে।
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বিষ্ণু দে-কে মাথায় রেখেও আপনি সব সময়
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সামনে নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি
অরুণ কুমার সরকারও
আপনার প্রিয় কবি।
আপনি রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা থেকে আজকের আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বলেই, আপনার মাধ্যমে আলাপ হয়েছে সমীর আইচের।
আরো কত চিত্রকর।
যারা শিল্পের পথ প্রশস্ত করে যায়।
প্রতিদিন।
প্রতিদিনের সূর্যোদয়ের মত আপনার কাছে রবীন্দ্রনাথ। এবং
রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে যারা
যুক্ত হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে একজন শিল্পী এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায়।
আপনার হাত ধরে তার কাছেও আমি গেছি।
আপনি একজন তরুণ কবি কে যেমন অনুপ্রাণিত করেন, তেমনি
রবীন্দ্র সংগীত যারা গাইতে আসেন, তাদেরও উদ্দীপ্ত করেন।
বাবলি সাহাকে আপনি সব সময়
উৎসাহিত করে উজ্জ্বল করেছেন
রবীন্দ্র গানে।
আপনি ঘোষণা করলেও
আমি মানতে নারাজ আপনি নাস্তিক। কেননা, রবীন্দ্রনাথ
আপনার শিরা-উপশিরায়।
শান্তিনিকেতন আপনার প্রিয় মনোভূমি।
কোনোদিন আপনি কোনো
প্রতিষ্ঠানের দিকে গেলেন না।
লোভ ও ঈর্ষার দিকে গেলেন না।
আপনার কাছ থেকেই শুনেছি
আপনি আপনার ছেলেকে বলছেন-----বেল্ট ছিঁড়ে গেছে তো কি হয়েছে! মশারির দড়ি কোমরে বেঁধে স্কুলে চলে যাও।
এই আপনি কোনো দেখানেপনার
দিকে না গিয়ে বারবার তরুণদের তাপে উত্তাপে নিজেকে সেঁকে নিতে চাইলেন। এবং
আপনি নিজেকে ৬০ দশকের মধ্যে না আটকে প্রতিটি দশকের
অথবা সময়ের কবি হয়ে উঠলেন।
আপনাকে প্রণাম।
আমি যখনই হতাশ হয়ে আপনাকে চিঠি লিখেছি আমার দুঃখ বেদনার , তখনই আপনি
আমাকে জানিয়েছেন---------
চলে এসো কলকাতা।
আমি কখনো গেছি। কখনো যাইনি। আবার যখন গেলাম
আপনার বেহালার বাড়িতে দিনের পর দিন আমার থেকে যাওয়া।
শুক্লা বৌদির স্নেহ--ভালোবাসা।
আজও আপনাদের আর্থিক সাহায্য আমাকে বাঁচতে সাহায্য করে।
আপনি তো পুরুলিয়ার উত্তম মাহাতকেও স্নেহ করেন। তার শিল্পচর্চার দিকে নজর রাখেন।
কালীদা,
আপনার কবিতা নিয়ে চুলচেরা
তাত্ত্বিক বিচার করবেন পণ্ডিতরা।
আমি শুধু আমার দু-একটা কথা
নিবেদন করলাম ।
আজ মনে হলো, আপনার সঙ্গে দু একটা কথা বলি এ কারণেই, শাল গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি, নতুন পাতা এসেছে। তার কচি রঙে আপনার একটি কবিতা লিখি------
ভাইবোন
--------------
ভাইয়ের বাড়ি থেকে
ফিরছে যে--বোন একা
দূর বিদেশের পথে
তার সাথে হয় দেখা।
নদীর পারে বাড়ি
কালী নগর গ্রাম
দগ্ধ যৌবন
আহত বিশ্রাম।
বাপ মরেছে রোগে
পক্ষাঘাতে মা
শরৎ কালের আলো
শুধুই কান্না ।
বাস চলেছে দ্রুত
শীতল ছায়ার মাঠ
ভাইয়ের মুখের কথা
বলছে রাস্তাঘাট।
আকাশ রেখা জুড়ে
ঘনায় অন্ধকার
অন্ধকারের নদী
কান্না যে হয় পার।
-----------------------------
ঋণ : স্বপন চক্রবর্ত্তী
-----------------------------
------৭ বৈশাখ ১৪২৯
-----২১----৪----২০২২
--------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার
আরও পড়ুন








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন