দুপুরের স্তব্ধতা - ৬
----------------------------
সোমজিৎ
তোমার চিঠি আমাকে খুশি করেছে খুব। এরকম চিঠি আরো লিখবে, এই আশা।
আমার কাছেও আশা করে ছাতিম গাছ । আমি যেন তার ছায়া জড়িয়ে প্রতিদিন তাকে ভালবাসতে পারি।
কোনো কোনোদিন ভুলে গেলে
আবহকে ডেকে নিয়ে ছাতিমের কাছে যাই। রাত হলেও যাই।
তখন ছাতিমের ছায়া আরো বেশি রহস্যময়।
আবহ বলছিল---ছাতিমতলাতেই বসতে হবে কেন? অন্য গাছের তলায় বসলে আমরা কি তৃপ্তি পাবোনা?
আমি নীরব ছিলাম।
ছাতিম তলা থেকে আমি এক নিঃশ্বাস শুনতে পাই। যা আবহ
শুনতে পাবে না।
আবহের কথা তোমাকে বলা হয়নি। সে শান্তিনিকেতনে পড়তে এসে পাশ করে শান্তিনিকেতনেই থেকে গেছে। এখন সে ঘর ভাড়া করে থাকে ভুবন ডাঙ্গার পিছন দিকে। আর্থিক রোজগার বলতে,
ছেলে পড়ানো। সেই টাকাও যে সব সময় পায় এমনটা নয়। তার আরেকটা মারাত্মক নেশা, সাঁওতাল ছেলেমেয়েদের ডেকে ডেকে , লেখাপড়া শেখানো।
আবহর ছবি আঁকা মানে ছেলে মেয়েদের আঁকা শেখানো। নিজের জন্য অন্যকে দেখানোর জন্য সে আর ছবি আঁকে না।
আমি একবার তাকে কয়েকটা পোস্ট কার্ড দিয়েছিলাম ছবি এঁকে দেবার জন্য। এক মাস পরেও সে আমাকে শূন্য পোস্টকার্ড ফেরৎ
দিয়েছিল।
আমি তাকে আবার পোস্ট কার্ড গুলি দিয়ে বলেছিলাম--তোর কাছেই থাক। হয়তো কখনো
কোনো রাত্রিবেলায় কারোর উদ্দেশ্যে উড়িয়ে দিবি।
আমি দেখতে না পেলেও শুনতে পাবো উড়ে যাওয়ার শব্দ।
আবহর করুণ সুন্দর মুখ দেখলেই
তুমিও বিষণ্ণ হয়ে উঠবে। দেখো----
ইতি----
নির্মল হালদার
৬ আশ্বিন ১৪২৯
২৩---৯---২০২২
শুক্রবার
দুপুর--২--৮
পদ্ম ফুটছে শালুক ফুটছে---৮
--------------------------------------------
সোমজিৎ
শারোদৎসবের দিনে প্রথম আলাপ তুলিকার সঙ্গে। সে সেই প্রথম এসেছে বিশ্বভারতীতে।
তার গায়ের রঙ কালো। আমি প্রথম দিনেই তাকে বলেছিলাম,
তুইতো কৃষ্ণ কলি।
সে হাসতে হাসতে গানটা আমাকে শুনিয়ে ছিল দু' কলি।
প্রথম আলাপ। অথচ তার মধ্যে
কোনো আড়ষ্টতা ছিল না। আমরা
শারোদৎসবে না থেকে চলে গেছলাম চেনা চত্বরের বাইরে।
আমাদের গায়ে এসে পড়ছিল
শারদীয় আকাশের আলো।
আমি ছুঁতে গিয়ে কৃষ্ণকলির
হাত ধরেছিলাম।
সে চাইলো, বাদাম খেতে।
সেদিন কত রাত হয়েছিল মনে নেই। সে শুধু বলছিল, আর নয় আর নয়। হোস্টেলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
আমি তাকে বলতে পারিনি,
আমার যে দুয়ার খুলে গেছে-----
ইতি---
নির্মল হালদার
৮ আশ্বিন ১৪২৯
মহালয়া
২৫---৯---২০২২
রবিবার
সকাল---৮--১৭

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন