রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২

রামানুজকে লেখা পত্র



এসো হাওয়া,আসন পেতেছি----১৭
--------------------------------------------------
রামানুজ
আজ এই পুরুলিয়া জেলাতে
জিতা ষষ্ঠি।জিতা ষষ্ঠি কি এবং কেন এই প্রশ্ন যখন জেগে উঠলো,
উত্তর খুঁজতে খুঁজতে জেনেছি,
জিমুত বাহন থেকে মানভূম তথা পুরুলিয়ার ভাষায় জিতা।
জিতা ষষ্ঠী বা অষ্টমী।

তোমাকে আর কি বলবো, তুমি তো জানো, আমাদের এই বঙ্গে অথবা পুরুলিয়াতে বারো মাস
নানাভাবে নানা রূপে শস্যের বন্দনা করা হয়। নিম্নবর্গের মানুষ যেমন করে থাকে তেমনি বাঙালি মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তরাও করে থাকে।
আমি এখানে লোক ইতিহাস বলতে চাইছি না। বরং বলতে চাই,
গ্রামের এক বুড়ি মা রাস্তার ধারে বিক্রি করছে মাটির শেয়াল শকুনি।
এই জিতা ষষ্ঠীতে ব্রত উদযাপন শেষ হবে শেয়াল শকুনি জলে ভাসিয়ে।

আমার মনে পড়ছে, ছোটবেলায়
মা-জেঠি--খুড়িরা ছোটদের বলতো---তোরা যা শিয়াল শকুনি বানাবি---

আমরা ছোটরা খুব উৎসাহের সঙ্গে মাটি জোগাড় করে শিয়াল শকুনি গড়ে তুলেছি।

আজ তবে ছোটরা কি নেই?

যা ছিল একসময় খুশির খেলার মত পুতুল, সেই পুতুল আজ বাজারে।
তা আসুক। আমি চাইছি বুড়িমা
শেয়াল শকুনি বিক্রি করে দুটো পয়সা ঘরে নিয়ে যাক।

আজ বাজার থেকে তুমি ঘরে নিয়ে যাবে কি?

আমাদের বাজারে এখানে
শশা ১০০ টাকা কেজি। কারণ
এই জিতা ষষ্ঠিতে শশা লাগে।

এই দিনে আমি যদি শসার বীজ হয়ে উঠি?

ইতি----
৩১ ভাদ্র ১৪২৯
১৭--৯--২০২২
শনিবার
সকাল--৮--৫৮
নির্মল হালদার





এসো হাওয়া,আসন পেতেছি --৫৭

রামানুজ
আমার চিঠিতে ইতিহাস নেই। পুরাণ নেই। গ্রীকের ইতিহাস
ফরাসিদের ইতিহাস নিজের দেশের ইতিহাসও আমার চিঠিতে নেই। পাবেও না কখনো।

কারণ, আমি কিছুই জানিনা।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় যে সমস্ত শিল্প আন্দোলন হয়েছে, তাও আমার অজানা।
আমার কাছে এ বঙ্গের হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে, আমি বলতে পারবোনা।

আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা, অনুভব অনুভূতির কথা তোমাকে শোনাতে চেয়েছি। তোমাকে শোনাতে চাইছি। এইসব কথাবার্তা তোমার কাছে কখনো যদি বিরক্তিকর ঠেকে, আমাকে জানিও।

আমার সব সময় ভয় করে, আমি কারোর বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছি না তো? কারোর কাজ নষ্ট করছি না তো?

আমার স্মৃতি কথাতে তুমি পেয়েছো লালটু ও অবনীকে। কয়েকদিন হলো, তাদেরও মনে পড়ছে খুব। এই বয়সে যদি আরেকবার দেখা হতো তাদের সঙ্গে, আমরা নিশ্চয়ই স্কুল বেলার
কাছে চলে যেতাম।

কিন্তু তারা নেই। আমার কাছে শুধু হাহাকার।

পার্বতীদি ও মাধবীদি সম্পর্কে
আর দু একটা কথা বলতে পারি,
তারা দুজনেই বিয়ে থা করেননি।
পরে কি হয়েছে না হয়েছে, আমি আর খবর রাখিনি।
দুজনেই খুব আন্তরিক ছিলেন। দুজনেই ছাত্রীদের কাছে বন্ধু হয়েই থাকতেন।

তারা কলেজে থাকতে থাকতেই,
ক্ষমতায় এলো বাম সরকার। তখন ওই মহিলা কলেজে কোনো
ছাত্র ইউনিয়ন ছিল না।
ছোট ছোট বাম নেতার লক্ষ্য পড়লো, মাধবীদির দিকে। তার সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়লো প্রচার,
তিনি কংগ্রেস মুখী। ফলে, বামেরা
তার সম্পর্কে ছড়াতে লাগলো কুৎসা।

তারপর তারপর তিনি তো চলে গেলেন পুরুলিয়া ছেড়ে। কলকাতার অন্য এক কলেজে।

এই দেশ এই বঙ্গ কে তুমিও চেনো। এখানে প্রকৃত মানুষের ঠাঁই নেই।

আমাকেও তো মাটি কামড়ে থাকতে হয়।


----নির্মল হালদার
----২৩ আশ্বিন ১৪২৯
-----১০---১০---২০২২
----সোমবার-----বিকেল--৫



আরও পড়ুন 








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ