মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২

বন্ধুতা ও আত্মীয়তা



একরামের সঙ্গে আলাপের পর আমি তাকে আলি সাহেব সম্মোধন করেছি। অনেকদিন পর্যন্ত। তারপর সেই আমাকে একদিন বললো-----আলি সাহেব না বলে, তুমি আমাকে একরাম বলবে।

একরামের সঙ্গে কখন কবে কোথায় আলাপ হয়েছিল, কে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল আজ আর মনে পড়ে না।

অনেক অনেক দিনরাত্রি পার হয়ে গেল। অনেক অনেক তারা ফুটে উঠে ঝরেও গেছে। অনেক অনেক পাতা গাছে এসে সবুজ হয়েছে এই চরাচরে।

একরামের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে
মাঝেমধ্যে ধুলো পড়লেও একরাম কিংবা আমি ফুঁ দিয়ে ধুলো ওড়াই।

নিজেদের সুখ দুঃখের গল্প করি।
কুশল বিনিময় করি। এবং গল্পে গল্পে সে চলে আসে পুরুলিয়া। আমি চলে যাই বীরভূম।

বাস থেকে নেমে পড়েছি পুরন্দরপুরে। একরাম তখন পুরন্দরপুরে ঔষধের দোকান।
আমাকে দেখে তড়িঘড়ি ঝাঁপ ফেলে আমাকে নিয়ে চললো তার বাড়ি। বিকেল হতে হতেই আবার সদর রাস্তায় এসে বাসে উঠে সিউড়ি। বাবলিদি ও প্রভাতদার কাছে।

সারারাত গান কবিতা আড্ডা।

কথায় কথায় একরামের রসিকতা। আমরা হেসে কুটি কুটি।

এখনো তাই। পাঁচটা কথার মধ্যে
তিনটে কথা মজা করেই একরাম বলে। আশ্চর্য হই, নানারকম টানাপোড়েনের মধ্যেও সে কখনো
মানসিক পীড়নের কথা বলে না।
চাপে থাকলেও মুখ ফুটে বলে না।
এ বিষয়ে আরেকজনের কথা বলতে পারি, তিনি হলেন স্বপন চক্রবর্তী। কোনোদিন দুঃখ বেদনার কথা বলবেন না। চাপের কথা বলবেন না । তার বোন হার্টের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি।
সেই তখন আমি ফোন করেছি। কিন্তু একবারের জন্যেও বোনের অসুস্থতার কথা বললেন না। 
পরে আরেক বন্ধুর কাছ থেকে জেনে, আমি স্বপনকে ফোন করলাম।

একরামও তাই।

সম্প্রতিকালে একরামের অসুস্থতার খবর 
অন্যের কাছ থেকে পাই। আমি ভিতরে ভিতরে বিচলিত হয়েছি তার কাছ থেকে সরাসরি কোনো খবর নিতে পাচ্ছি না।

প্রভাতদা ও বাবলিদির কাছ থেকে খবর নিয়েছি। তাদের কাছ থেকে একরামের খবর এখনো পাই।

আমাদের এই বন্ধুতা ও আত্মীয়তা আজও বহমান।

সে কথা বললে, প্রাণে বাতাস বয়ে যায়। ঢেউ ওঠে। তরঙ্গে তরঙ্গে জেগে ওঠা।

একরাম যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মহাত্মা গান্ধী রোডের প্যারামাউন্ট বোডিং হাউসে থাকছে, আমি তখন তার কাছে নিয়মিত থাকছি।

কলকাতায় তো আমার একটা বাসা ছিল না, উত্তর থেকে দক্ষিণ নানান ঘর নানান দুয়ার।
তবে উত্তরে থাকতেই, পছন্দ করতাম বেশি।

একরামের সঙ্গেই গেছলাম,অরণিদার বিয়ের বৌভাতে। একবার কি একটা সমস্যা হয়েছিল, সে আমাকে বললো----চলো সমরেন্দ্রর বাড়ি।

সমরেন্দ্ররদার সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে দু চার দিন। কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি।
 কেন হয়নি, আজ আর বলতে পারবো না।

আজকাল দৈনিকের রবিবারের পাতায় একরাম যখন তার স্মৃতিকথা " ধুলো পায়ে " লিখছে আমি তখন তার নিয়মিত পাঠক।
মুগ্ধ পাঠক। ধারাবাহিক।

প্রতি রবিবার সেই লেখা নিয়ে তার সঙ্গে কথা।
একরাম, তোমার মনে আছে?

তোমার মনে আছে, শৌনকের জন্মদিনে তার বাড়িতে আমাদের মোচ্ছব?
আমি বোধহয় সেই প্রথম খুব পান করেছিলাম?

তখন সেই জীবনে কাব্য কবিতার
মাতলামিতে আমাদের দিন।
তখন পার্থদা(পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল) র সঙ্গে একরামের প্রগাঢ় সম্পর্ক। তখন একরামের কাছেই শুনেছি, পার্থদা সম্পর্কিত অনেক গল্পগাছা।

একরাম প্রসূন স্বপন কান্তির সঙ্গেও পুনর্বসু একটা কাগজে
আমি ছিলাম। এবং সেই কাগজের টাকার জন্য স্বপনের কাছে প্যাটেল নগর ছুটে যাওয়া।

তখন সমিদুল। অমরদা ইত্যাদি ইত্যাদি বন্ধু সিউড়িতে। তুমুল আড্ডা।
হোটেল থেকে বাবলিদি ও প্রভাতদার বাড়িতেও আড্ডা।

শতজল ঝর্নার ধ্বনি উত্তরবঙ্গে করবো এই প্রস্তাব দিতে প্রসূন একরাম ও আমি সমর রায় চৌধুরীর কাছে জলপাইগুড়ি।
ফেরার পথে অশ্রু কুমার শিকদারের কাছে টাকা নিতে যাওয়া।

মনে পড়ে একরাম?

আমার প্রথম দুটো বই প্রকাশিত হয়ে গেছে। তৃতীয় কবিতার বই
" সীতা "প্রকাশের পর একরাম আমাকে একটা পোস্ট কার্ড পাঠিয়েছিল।

কোথায় যে হারিয়ে গেল!

সেই পোস্ট কার্ডের রাস্তা ধরেই
একরামের সঙ্গে আমার নিবিড়তা
শুরু হলো।
আমাদের কবিতার পথ আলাদা হলেও বন্ধুতার পথ একটাই----- ভালোবাসা।


যে ভালবাসা থেকে একরামের
তেঘরিয়া--দমদমার লাল ধুলো
উড়ে এসে আমার গায়ে লাগে।
আমি সেই ধুলো পুরুলিয়ার মাটিতে মেশাই।

বীরভূম ও পুরুলিয়া এক হয়ে
একই বাতাস আমাদের দুজন বন্ধুকে লালন করে।

ময়ূরাক্ষী ও বক্রেশ্বর আমাদের কাঁসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে। বীরভূম ও পুরুলিয়া এক হয়ে একই বাতাস আমাদের দুজন বন্ধুকে লালন করে।

একরাম কি আজও কলকাতায় বসবাস করে! নাকি কলকাতায় শরীর থাকে তার ? আর মন থাকে
বীরভূমের মাটিতে?

এই প্রশ্ন বা আমার জিজ্ঞাসা দুলতে দুলতে একরামের কাছে পৌঁছলেও হয়তো একরাম নীরব থাকবে।
 অথবা আমার দিকে চেয়ে একটা দুষ্টু হাসি।

একরামের হাসি ধরে ধরে এই মুহূর্তে বলতে চাই-----একরাম ভালো থাকুক। ভালো রাখুক তার চারপাশ। তার কবিতা গল্প প্রবন্ধ
বিষয়ে সমালোচকেরা কথা বলবেন। আর আমি বলবো------
একরাম হাঁড়ি বাঁধতে থাকুক
তাল গাছের গলায়। খেজুর গাছের গলায়।

------৩০ শ্রাবণ ১৪২৯
-------১৭----৮----২০২২
------- নির্মল হালদার




Poem
Atijeebito [অতিজীবিত] (1983).
Ghanakrishna Aalo [ঘনকৃষ্ণ আলো] (1988) and (sristi edition:2000) ISBN 81-7870-129-4.
Aandhar Taranga [আঁধারতরঙ্গ] (1991).
Baanraajpur [বাণরাজপুর] (2000) ISBN 978-81-85479-79-8.
Ekram Alir Kobita [একরাম আলির কবিতা] (2001).
Ekram Alir Shreshtha Kobita [একরাম আলির শ্রেষ্ঠ কবিতা] (2008) ISBN 978-81-295-0778-5.
Pralaykatha [প্রলয়কথা] (2009).
Andhar poridhi [আঁধার পরিধি] (2013).
Bautir kobita [বাউটির কবিতা] (2014).
Kobita sangraha [কবিতা সংগ্রহ] (2017) ISBN 978-93-82879-87-9.
bipanna Granthipunja [বিপন্ন গ্রন্থিপুঞ্জ] (2017).
Pora Matir Ghori [পোড়া মাটির ঘড়ি] (2020).

Memoir
Dhulopaye [ধুলোপায়ে] (2015, 2019) ISBN 978-93-88351-56-0
Harrison Road [হ্যারিসন রোড] (2020) ISBN 978-93-89377-92-7

Novel
Digonter Ektu Age [দিগন্তের একটু আগে] (2015) ISBN 978-81-295-2425-6

Essays
Musalman Bangalir Lokachar [মুসলমান বাঙালির লোকাচার] (2006).
Apollor paakhi [অ্যাপোলোর পাখি] (2008) ISBN 978-81-7990-080-2.
Bedonatur Alokrekha [বেদনাতুর আলোকরেখা] (2020) ISBN 978-93-89377-86-6.

Biography
Atish Dipankar [অতীশ দীপংকর] (1997

Awards
Birendra Puraskar for 'Ghanakrishna Alo' in 1990.
Paschim Banga Bangla Academy Award for 'Dulopaye' in 2016.


































কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ