শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২

অনির্বাণের বন্ধুতার কাছে



অনির্বাণের বন্ধুতার কাছে
------------------------------------

অনেক অনেকগুলি বছর পার হয়ে গেল। বয়স বেড়ে গেছে আমাদের। তারপরও কোনো গাছের তলায় আমাদের দেখা হলো না।

দেখা যেমন হয় না, কথাও হয় না আমাদের।
তবে কি আমরা দু'জনের প্রতি দু'জন টান অনুভব করি না?

একটা গাছ থেকে আরেকটা গাছ দূরে থাকলেও দু'জন দু'জনকে দু'জনের মনের বাতাস দিয়ে থাকে।

ভেতরে ভেতরে শেকড়ের টান।

দুটো গাছ আলাদা হলেও দু'জনেই
শেকড়ের টান অনুভব করে।

অনির্বাণ, আমাদের অনুভূতিগুলি কি মরে গেছে? নাকি প্রকৃতির এই নিয়ম, চিরদিন সবার সঙ্গে সবাই থাকে না?

আমার কাছে স্পষ্ট হয় না কিছুই।

মাঝেমধ্যেই পিছন ফিরে তাকাই, দেখি------বাস থেকে নেমে আমি তোমাদের বাড়ির দিকে হাঁটছি।

তখন মাসিমা ছিলেন। মেসোমশাই ছিলেন। ছিল আরো দুই বোন। ঘর ভরা আন্তরিকতা।

আজকে তো চারদিকেই আন্তরিকতার অভাব। ফোন করলেও সাড়াশব্দ পাই না অধিকাংশ জনের কাছ থেকে।

পরেও আর ফোন আসে না।

মোবাইল আবিষ্কার হওয়ার পরে কি কি সুবিধা হয়েছে আমাদের, অন্য কেউ বলবে। আমি বলবো, কারো সঙ্গেই কারোর যোগাযোগ বাড়েনি। অথচ যোগাযোগ তো হওয়ার কথা।

সপ্তাহে একটা দিন আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের কাছে ফোন করে জানা যায় তাদের ভালো থাকা মন্দ থাকা।

কিন্তু না কেউ কাউকেই ফোন করে না।

সবাই কি ব্যস্ত থাকে  সব সময়?
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত? নাকি ব্যস্ততার ছল?

আসলে কি জানো, অন্তরের অভাব। 

অভাব থেকে ভাব আসে।

কই ভাব? কই ভালোবাসা?

এই যে আমি আর তুমি মাঝখানের অনেক অনেকগুলি বছর নীরব থেকে গেলাম, আমি মনে করি কাজটা ঠিক হয়নি।

তবে কি  টান--ভালোবাসা কম পড়েছে?

জল জঙ্গল জমি তো কমেই যাচ্ছে দিন দিন। টান--ভালোবাসাও কমে যাবে?
কিসের জোরে বাঁচবো আমরা?

বন্ধুতাও এক রকমের জল --হাওয়া। সেই জল---হাওয়া থেকে আমরা যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, ছিন্ন হয়ে গেছি আমি আমার জীবন দিয়ে অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারি।
 
যাকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলতো না আমার, আজ তাকে ভুলে গেছি। নিজেকেই প্রশ্ন করি, সম্পর্কে কি ভুল ছিল কোথাও?

নিজেকে আরও প্রশ্ন করি, সম্পর্ক বলতে কি বুঝি?

তালগোল পাকিয়ে যায়। অস্থির লাগে। শূন্যতাও টের পাই। দু হাঁটুর মাঝখানে মুখ রেখে লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করি।

মুখ তুললেই মন কেমনের অন্ধকার। একটি রজনীগন্ধাও আমাকে চেয়ে দেখে না।

অনির্বাণ, যখন ফোন ছিল না
তখন খাম পোস্ট কার্ড ইনল্যান্ড ছিল। 
আমাদের চিঠিপত্র লেখালেখি ছিল।  
তুমি আমি দু'জনেই কত চিঠি লিখেছি।

সেদিন এক বন্ধুকে বলছিলাম,
অনির্বাণ অফিস ছুটির পর রাস্তায় এসে ফুটপাতের ভিখারিদের কিছু না কিছু টাকা পয়সা দেবার চেষ্টা করতো।

সেও তো হৃদয়ের শব্দ।

বাসে একবার আমার পকেটমারি হয়ে গেল। তোমাকে এসে বলতেই, তুমি জানতে চাইলে কত টাকা?

এখনো মনে আছে আমার ২৫ টাকা পকেটমারি হয়েছিল। সেই আশির দশকে ২৫ টাকা অনেক টাকা।

তুমি বললে----তোমার ২৫ টাকা গেছে, তুমি ১০০ টাকা রাখো। পকেট থেকে বের করে দিলে একটি ১০০ টাকার নোট।

ওই উজ্জীবনের কথা মনে রেখেছি বলেই, আজ অনেক কথা মনে আসছে আমার। অথবা ওই উজ্জীবন আমাকে এখনো পথ চলতে সহযোগিতা করে।

একদিন গৌতম বসু তুমি আর আমি হাঁটতে হাঁটতে ধর্মতলা থেকে পার্ক সার্কাস ময়দান।

তিনজনেই বসে গেলাম মাঠে।
তুমি আমার কাছে জানতে চাইলে, কি বিশ্বাসে বাঁচো? আমি কোনো সঠিক জবাব দিতে পারিনি।

আজও পারবো না।

তবে জানি, অভাব হবে না আমার। কারোর না কারোর ১০ হাত আমাকে আগলে রেখে 
আমাকে বাঁচাবে।

আমি আজও ভিক্ষুক।

অনেক বন্ধু আছে যারা আমাকে
বাঁচতে সহযোগিতা করে।

বেঁচে থাকার জন্যই তো কবিতা।

কবিতার সঙ্গেই হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি গোধূলির কাছে।
মাঝখানে অনেকটা সময় চলে গেলেও তোমার দুই সন্তানকে দেখা হলো না আমার।

পিতা তো হতে পারিনি। তুমিতো পিতা হয়েছো, পিতা অনির্বাণের সঙ্গেও দেখা হয়নি কত যুগ।

কাঠবিড়ালিকে বলতেও পারিনি,
একটা সহজ সেতু করতে তুমি এসো-----আমরা বন্ধুরা পারাপার করতে করতে গল্পকথা। হাসি কান্না।

দেখা হোক ভালোবাসা বেদনায় ইচ্ছে করে না তোমার? কাব্য চর্চা কি কেড়ে নিয়েছে আমাদের সরল জীবনকে?

আমি মনে করি, কবিতার চেয়ে অনেক মহৎ জীবন।

যে জীবনের দিকে চেয়ে চন্দ্র সূর্য চাই। আকাশ ভরা নক্ষত্র চাই। গাছপালা ও মাটি চাই।

কীটপতঙ্গ পশু পাখি নদী ও ঝর্ণা, পাহাড় ও সমুদ্র সঙ্গে অবশ্যই মানুষ আর মানুষ-----আমি চাই।

কোলাহল নয় কলহ নয় চলো, যে কোনো রাস্তায় নেমে আমাদের তৃষ্ণাকে খুঁজবো।


ইতি-----
১৩ শ্রাবণ ১৪২৯
৩০----৭-----২০২২
নির্মল হালদার



ছবি : অভিষেক মাহাতো
























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ