হরিতকী গর্ভের আলোয়
------------------------------------
অবনী
-----------
লীলাবতী পুষ্প মনজুড়া
তিনজন তিন সখি হলেও
কেউ কাউকে চেনে না।
আমাকে সবাই চেনে।
কারো কাছে কিছু চাইতে গেলে,
কেউ আমাকে দেয় শিল-নোড়ার শব্দ।
কেউ আমাকে দেয় ফ্যান গালার শব্দ।
কেউ আমাকে দেয় ধান ঝাড়ার শব্দ।
সব জড়ো করলেই একটি অবনী।
তাপে--উত্তাপে-শীতলতায় একটি অবনী।
------১৫ আষাঢ় ১৪২৯
------৩০----৬----২০২২
অবনী
----------
অবনী জল ধরছে
কোত্থেকে এলো কে পাঠালো
খোঁজখবর না করেই,
অবনী জল ধরছে।
বৃষ্টির জল।
অবনীর মা খিদে ধরছে
স্বামীর খিদে ছেলের খিদে
গরুর খিদে ছাগল ভেড়ার খিদে
সবার খিদে এক জায়গায়
আমার বুকের ঢেউ জড়ো করবে কে?
কে ধরবে?
ভুট্টা
--------
ভুট্টার দানা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে রাখো
আকাশের তারা ছাড়িয়ে- ছাড়িয়ে রাখো
নুন মরিচে মাখো।
লীলাবতীও বলছিল, আকাশের তারা
ভুট্টার দানার সঙ্গে মিলেমিশে গেলে
গরম কড়াইয়ে ছাড়বে।
------১৯ আষাঢ় ১৪২৯
-----৪---৭----২০২২
পায়ের তলার মাটি
--------------------------
গরু তো ঘরে ফিরেছে
গরুর খুরে মাটি থাকলে
আমাকে দিও পশুপতি।
তুমি একবার উনুন করতেও
আমাকে দিয়েছিলে মাটি।
রামধনের কাছেও চেয়েছিলাম
আমাকে ফিরিয়ে দিলো।
আমাকে দিলে প্রদীপের মাটি
কম পড়বে।
পাখির পায়ে কি মাটি আছে?
মাছের পাখায় শুধু জল।
আর কার কাছে চাইবোরে কিরাত?
তোর পায়ের তলার মাটি
তোর পায়ের তলায় থাক।
আমি না হয়, দেয়াল ছাড়াই
ঘর তুলবো।
------২১ আষাঢ়১৪২৯
------৬---৭----২০২২
চাকা
--------
চেয়েছিলাম এক সের চাল
পরীক্ষিৎ আমাকে বললো,চাল নাই হে
যদি নিতে চাও নিয়ে যাও
গরুর গাড়ির চাকা।
আজকাল তো ট্রাক্টর চলে
শুধু ট্রাক্টর।
পরীক্ষিৎ আরো বললো,
চাকাটা পুরনো হলেও পুরনো ধান লেগে থাকতে পারে
কাজে লাগতে পারে
পুরনো ধান চালে বাড়তে পারে।
কথা
--------
আজকাল কথা বলতেও ভয় লাগে
যদি কথায় কথায় চেয়ে ফেলি
একটা সরষে বাড়ি।
কথা বলতে বলতে একজনের কাছে
নদী চেয়েছিলাম
কী হাসাহাসি!
কারো সঙ্গেই কথা বলবো না স্থির করেও
পেয়ারার সঙ্গে দুলতে চাইলাম
গাছ আমাকে ফেলে দিলো।
ধুলার সঙ্গে কথা বলতে গেলে
আমাকে গ্রাহ্যই করে না
শুধু ওড়ে
ওড়ে।
-----২২ আষাঢ় ১৪২৯
-----৭----৭----২০২২
অবনীকেই যখন দিলো না
তখন ছাগল ভেড়া নিয়ে কী করবো?
আমি তো আর ছাগল ভেড়ার চাষ করি না।
আমি আবাদ করলে করবো অবনীতেই।
কত কয়লা কত পাথর, সোনা দানা
তেলের খোঁজ পেলে, প্রদীপে প্রদীপে ঢালবো
তোর মুখে শুকনো সলতের বিষণ্ণতা।
------২৯ আষাঢ় ১৪২৯
-----১৪---৭--২০২২
আগুনের যৌবন
-----------------------
মিলনের একটা নদী আছে মুঠো ভরা
রুপালির কোঁচড়েও একটা নদী
আমাকে দেবে না ।
মৃগাঙ্কর কাঁধে একটা পাহাড় থাকলেও
আমাকে দিয়েছে একটা পাথর ।
আমি তো পাথর ছুঁড়বোনা কারো দিকে
বরং আরেকটা পাথর জোগাড় করে
পাথরে পাথরে আগুন জ্বালাবো
আজ যে আগুনের যৌবন আমার চাই।
আবাদ
----------
গ্রামের মোড়ল
আমার কাঁধে হাল জুড়ে দিয়ে বললো,
যা চাষ করবি যা-----
চাষে বাসে মন থাকলেও
আগে চাষ করবো মানুষের
মানুষের যে বড় অভাব
মনুষ্যবীজ কে দেবে আমাকে?
-----৩১ আষাঢ় ১৪২৯
------১৬----৭-----২০২২
১ লা শ্রাবণের কবিতা
------------------------------
আজ শ্রাবণের শুরু
আজ জন্মের শুরু
আজই শিবানী কালিন্দী নিয়ে এসেছে
একটি পদ্মের জন্ম
পদ্মের নাড়ি কোথায় পুঁতেছে?
আজ অপরাজিতাও এসেছে
কার গর্ভে ছিল?
কার গর্ভে একটি পাহাড়?
আকাশ থেকেও শুনি গর্ভ যন্ত্রণা।
------১ শ্রাবণ ১৪২৯
----১৮----৭----২০২২
ছোলা মটর
----------------
সূর্য তো সবাইকে রাঙায়
ছোলা--মটরকেও রাঙিয়ে মনজুড়ার কুলায়
এক কুলা ছোলা--মটর ভাজতে ভাজতে
মনজুড়া আমাকেও ডাকবে
আমার কোঁচড়ে সন্ধ্যা তারার উষ্ণতার সঙ্গে
গরম গরম ছোলা মটর ভাজা।
------২ শ্রাবণ ১৪২৯
------১৯----৭----২০২২
একটি নাম একটি জীবন
----------------------------------
যদি গ্রামের নাম
উমাকান্ত সিং সর্দার হয়ে থাকে
কেমন লাগবে?
যদি শহরের নাম
উমাকান্ত সিং সর্দার হয়ে থাকে
কেমন লাগবে?
যদি কল কারখানা হয়
উমাকান্ত সিং সর্দার
সকলের কাজ।
যদি ফসলের জমি হয়
উমাকান্ত সিং সর্দার
সকলের চাষ।
কাছে নেই দূরে নেই উমাকান্ত।
উমাকান্ত একটি নাম।
একটি আনন্দ,
উমাকান্ত সিং সর্দার।
------৯ শ্রাবণ ১৪২৯
-----২৬---৭---২০২২
ডিম
--------
ডিম তো পেড়েছে মুরগি
রক্ষা করবে কে?
ওগো ও অবনীর মা, ঝুড়িতে রেখেছো?
ভালো তো বাসতেই হবে
ডিম তো আমাদের,
ব্রহ্মাণ্ড।
যা বলতে চাই
-------------------
চাস আবাদ করতে কটা বৃষ্টি লাগে
আমাকে বলবেনা বনবিহারী।
কদিন তা দিলে ডিম পাড়বে
আমাকে বলবে না হাঁস।
কেনই বা পলাশ বসন্ত দিনে?
লাঙ্গলের ফলার ধার কমলে
আমিতো জানবো না।
আমাকে বলেছে বনবিহারী---
নখের ধার কমাও
নখের ধার কমাও।
-------১৩ শ্রাবণ ১৪২৯
-----৩০----৭---২০২২
কুটুম
--------
দূরে থেকেও কাছে থাকে
পাখির গানের মতো কুটুম।
এসো কুটুম এসো
সুরের মতো কুটুমের জন্য জল বাতাসা
কাক এলে এঁঠোকাঁটা ছড়িয়ে
অপমান করবো না।
সেও তো স্বজন আমাদের,
মোষের পিঠে চলে যায় অনেক দূর
কাকিনী কোথায়?
-----১৫ শ্রাবণ ১৪২৯
-----১----৮----২০২২
সারা দিন
-------------
পুটুশ ফুল যেমন তেমন হলেও
ভ্রমর এসেছে ।
আর কে কে এসেছে না জানলেও
দিন কেটে যাবে।
প্রতিদিনই চোখের কোণে চাঁদের মত পিঁচুটি
যতবারই মুছে ফেলি ততবারই চাঁদ,
আমার দিন কেটে যায়
কাজের বউ এসে ঘরের কোণ থেকে অন্ধকার ঝাড়ে।
অবনীর আলোয় আলোয়
------------------------------------
একদিন হাঁসের সঙ্গে খাবো।
একদিন মুরগির সঙ্গে খাবো।
একদিন ছাগল ভেড়ার সঙ্গে।
একদিন গাই--গরুর সঙ্গে।
মনজুড়া বললো, বাকি রইল কে?
বাতাস ছাড়া কি আহার চলে?
জল ছাড়া কি আহার চলে?
কাক ছাড়া কি আহার চলে?
আমি কাকের সঙ্গেও খাবো।
মনজুড়া বললো, অবনী আর দোষ করল কী,
অবনীতেই পড়ে আছে ঘাম
অবনীর সঙ্গে চেটেপুটে খাও।
-------১৬ শ্রাবণ ১৪২৯
------২---৮----২০২২
খরার আতঙ্ক
-------------------
এক ঝুড়ি শশা
কে কিনবে কে কিনবে না
আমার কাছে খবর নেই।
আমার কাছে একটাই খবর
অনিলের ঘর নেই,
একটা নদী আছে,
বেগবতী সিং সর্দার।
অনিল সিং সর্দারের সঙ্গে থেকে
শুকনো হয়ে আছে।
এই শ্রাবণেও বালি বহমান।
------১৮ শ্রাবণ ১৪২৯
------৪----৮----২০২২
ফল ও শাকসবজি
---------------------------
তুমি তো ভাই আঙুর থেকে এসেছো।
তুমি তো এসেছো পালং থেকে।
আমরা সবাই কোনো না কোনো,
সবজি থেকে ফল থেকেই এসেছি।
কেউ কেউ তো শঙ্খ থেকেও এসেছে।
সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর।
অনেকদূর গিয়েও ভালোবাসা জাগায়
যে যে ধান গম থেকে এসেছো
লোহা থেকে তামা থেকেও এসেছো
আমাদের কাছেই থাকবে
একটাই শিবির
পেয়ারা ফুল ঝরে পড়ে।
কেউ কেউ তো বৃক্ষ থেকেও জন্ম নিয়েছে
বট--অশথের ছায়া পাই
তুমি তো ভাই মৃগাঙ্ক আমলকি
আমাকে চিনলে না?
-----১৯ শ্রাবণ ১৪২৯
-----৫----৮----২০২২
যাওয়া
---------
পাখির ডাকের ভিতর দিয়ে
যে রাস্তাটা চলে গেছে, সেই তো
অবনীদের গ্রামের রাস্তা
নবনী তরণীদের রাস্তা।
পাখির পাখায় যে হাওয়া চলে গেছে
সেইতো অবনীদের অফলা জমির দুঃখ
ঝরে যাওয়া সর্ষে ফুলের রেণু
যে মুখ লুকায় শুকনো বালুচরে।
পাখির পায়ে পায়ে যদি দু ফোঁটা জল আসে
কার আঁজলায় যে দেবো
ঘাস বীজ চেয়ে আছে।
পাখির ডাকের ভিতর দিয়ে আমারও যাওয়া,
অবনীদের ঘর।
------২১ শ্রাবণ ১৪২৯
-----সকাল--৬---৩২
-----৭---৮----২০২২
তাল গাছের সারি
------------------------
কোথায় আর দাঁড়াবে
আছেই তো তাল গাছের সারি
পিছনে দাঁড়িয়েও শুনতে পাবে
ঝড়ের পূর্বাভাস
গর্ভ যন্ত্রণা।
জোনাকিরা না এলেও জেনে যাবে
রাত হয়েছে অনেক
বাবুইয়ের বাসায় ঘুম এসেছে
স্বপ্ন এসেছে
আকাশ রঙিণ।
রোদ না এলেও দেখতে পাবে
মৌমাছিরা এসে খুঁজছে তাল পাকার গন্ধ
তাল রসের সুর
গানের কলি
ভাদরের আদর।
-------২৩ শ্রাবণ ১৪২৯
------৯---৮---২০২২
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন