বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হরিতকী গর্ভের আলোয়

হরিতকী গর্ভের আলোয়
---------------------------------




গ্রাম
------

যে কোনো  রাস্তাই চলে গেছে 
লুশাবেড়ার দিকে

লুশাবেড়া একটি গ্রাম
এক জনপদ

টমেটোর ত্বকের মত মসৃণ

বেগুন কাঁটা ফুটলেও রক্ত ঝরবে
রক্তের বীজ ছড়িয়ে দিলে,

গ্রামের পর গ্রাম

স্বস্তিতে থাকতে দে, আপন মনে।





জাগরণ
-----------

ঝিঙে লতার আত্মীয়তা যে দেবে দাও
আমি দেবো বকের অপেক্ষা
সেও তো সৌন্দর্য।

পাহাড়ও এক অপেক্ষা, পছন্দ হলে
কাঁধে তুলে নাও
সেও তো সম্পদ আমাদের,

সেওতো জাগরণ।

অভাব অনটনও জেগে আছে
ঘরে বাইরে
দুহাত পেতে চাইলে,

তোমাকে দিতে পারবেনা বগলা সোরেন।


-----২৪ শ্রাবণ ১৪২৯
-----১০---৮---২০২২




দোকানি
------------

১:
কে যে দোকানি কে যে দোকানি নয়
সময় নেই আর চেনাচিনির
ধার বা নগদে নয়, দরদারও করবো না
কাছে দাঁড়াবো

যদি প্রশ্ন করে, কী চাও হে?

গামছা পাতবো

চাল না দিলেও যদি একবিন্দু নুন পাই

বেলা তো হলো, নুন চেটে চেটে খাবো।



২:
কই হে দোকানি কেমন আছো?
বাজারের হালচাল যেমনই হোক
তুমিতো কৃপা দৃষ্টি দেবে?

দোকানদারও কখনো কখনো কৃপানাথ
দু দানা মুসুরি ওজনে বেশি দিয়েও
কথা বলে না।

এই যে না--কথার রূপ ভালবাসতে ইচ্ছে করে।

ভয়ও করে।

-----২৫ শ্রাবণ ১৪২৯
-----১১---৮----২০২২





আলো আঁধার
--------------------

আমাকে জনার সেদ্ধ দিয়ে
অশ্বিনীর মা বললো,খা বাপ খারে
সারাদিন দম থাকবে।

কত আর দম ধরবো মাসি
ধান গাছের মাথায় ঢেউ উঠছে
সেও তো ধরেছি

জনার গাছের মত লম্বা না হলেও
আমিও এক কাঠামো
আমার পুরনো রক্তেও  বইছে,

প্রেমের আলো আঁধার।

-------২৬ শ্রাবণ ১৪২৯
------১২----৮----২০২২





হাহাকার
------------

গ্রাম ছুটে যাচ্ছে শহরের দিকে

দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ।

পুকুরে ডুবে গেল শুকনো পাতা

গ্রাম ছুটে যাচ্ছে শহরের দিকে।

দাঁড়িয়ে আছে অমূল্য চরণ

বৃদ্ধ অমূল্যচরণ।






খিদে
---------

যা আছে যেটুকু আছে খুঁড়ে খুঁড়ে খা

লোহা পেলে খা
তামা পেলে খা

ভালোবাসা পেলেও খা।

যা আছে রঙ--বেরঙ খুঁড়ে খুঁড়ে খা

কাছে যেতে পারলে যা
তুই খেতে পারবি সমুদ্র ফেনাও।

------১ লা ভাদ্র ১৪২৯
-----১৮---৮---২০২২




১.
খদ্দের কালো না ফর্সা দেখলে হবে না
সে এক পয়সার সর্ষে চাইলে
তুমি তো আর পোস্ত দিবে না

খদ্দের শুধু খদ্দের।

উপর দিকে না চেয়ে
তোমার দিকে চেয়ে আছে
কখন তুমি দেবে এক সের চাল

ঘরের উনুনে হাঁড়ি।

জলদি দাও হে দোকানি,জল ফুটছে।



২:
কে বলেছে সস্তা করতে
যা দাম তাই দাও।
কালো জিরেরও দরকার পড়ে
আমাকে নিয়ে যেতেই হবে।

ভালোবাসতেই হবে,
কালো জিরের গুণাগুণ।




৩:
কখনো রাস্তায় দেখা হয় না
কেবল দোকানেই দেখা হয়
সারাদিনে দু' একবার

রোদে জলেও দোকানে যাই
খদ্দেরের ভিড় থাকলেও দেখতে পাই,
দোকানির চোখের হাসি

কী যে তার মানে, আমার জানা নেই।

----- ২ রা ভাদ্র ১৪২৯
----১৯----৮----২০২২




বেঁচে থাকা
---------------

মাছি এসে গাঁদাল পাতার গন্ধ টানে

সেও তো চাইছে বাঁচার ধর্মে বাঁচতে

গাঁদাল লতে  জড়িয়ে থাকা আমারও স্বভাব

লবঙ্গ লতিকা নেই

আর কে কে নেই?

লীলাবতীর ছেলেটাও অনেক দূর গেছে।
কাছে নেই নদীও।
মেষ পালকের কাছে যাবো
যদি কোলে তুলতে পারি মেষশাবক।





বীজ
-------

কিছুই চাইছি না

গাঁদাল লতে জড়িয়ে থাকা শিশির
কাছে এলে আসতে পারে।
গাঁদাল পাতাও যদি চলে আসে
যত্ন করে সাজাবো।

একটা গ্রাম তো চেয়েছিলাম
এক অবনী
তুমি তো দিলে না, মন জুড়া----
আমাকে থাকতেও দিলে না,

পেঁপের বীজের সঙ্গে।

ছোট ছোট শাদা শাদা বীজ কী শান্ত কী ধীর।

------৩ ভাদ্র ১৪২৯
-----২০----৮----২০২২





চিঠি
--------

আজও  চিঠি লেখে। অনেকেই লেখে।
অবিরাম।
সবুজ কালিতে লেখে দুঃখ বেদনা
আনন্দ বেদনা।

চিঠি থেকে ঝরনার ধ্বনিও আসে
কখনো কখনো চোখের জলের শব্দ।
চিঠি থেকে মৌমাছিও আসে
কখনো কখনো পাড় ভাঙ্গার শব্দ।

আজও চিঠি লেখে। অনেকেই লেখে।
অবিরাম।
সবুজ কালিতে লেখে আজও লেখে,
ইতি শাল গাছ।

------৪ ভাদ্র ১৪২৯
-----২২---৮---২০২২





ভাদরের ভোর
--------------------

ভাদরের ভোর
তাল পড়ার শব্দ হলো।

ভোরের শুকতারা কি মাটিতে পড়বে?

কত তারা
ভোরের শুকতারা থেকে ধ্রুবতারা
মাটিতে পড়লে ঘ্রাণ চাইবো

তালের গন্ধে ছোটবেলা দৌড়ে আসে

চন্ডী আর অশ্বিনী কাড়াকাড়ি করে
একটি তালের গৌরব।

আমিও গৌরব করি, আমি প্রথম দেখেছি

ভোরের শুকতারা।

----৫ ভাদ্র ১৪২৯
----২২---৮---২০২২



বিরির লত ভুঁইয়ে লুটাতে লুটাতে
কী দেখে আর কী দেখেনা
আমার জানা নেই।

বিরির লত ভুঁইয়ে লুটাতে লুটাতে
কার কাছে যেতে চায় কতদূর যেতে চায়
আমার জানা নেই

বিরির লতে নিজেকে জড়ালে
আমিও কার কাছে যাবো?

-----৫ ভাদ্র ১৪২৯
-----২২---৮----২০৩২





বীজ
--------

কার কাছেই বা কী চাইবো

অবনীর মাকেও বলতে পারিনি,
তোমার একটি সন্তান দাও।
আকাশকেই বা কবে বলেছি,
তোমার একটি সন্তান দাও।

সবাই নিজের নিজের সন্তান সুখে
লালন করে জল ও বাতাস

জোনাক জ্বলা সুখ কবেইবা পেলাম?
কার কাছেই বা চাইবো,

খরগোশের দৌড়ে যাওয়া?

সবাই নিজের নিজের বৃষ্টি নিয়ে
বৃষ্টির বীজ ধরে,

আদর করে।

------৬ ভাদ্র ১৪২৯
-----২৩----৮----২০২২




বিরহ
--------

বাঁশ বন না চিনলে বাঁশি চিনবেনা
বাঁশি না চিনলে বিরহ চিনবে না।

বিরহ বলতে কি জানে শালিক--চড়ুই?

ময়ূরের বর্ষা আছে।

কোকিলের আছে ফাগুন চৈত্র।

ভাদ্র আশ্বিনের মেঘে
অপরাজিতা খুঁজে বেড়ায় নীল রঙ।

------৭ ভাদ্র ১৪২৯
-----২৪---৮---২০২২





 রূপের লাগিয়া
---------------------

বক চেয়ে আছে আকাশের দিকে
যদি মেঘ আসে বৃষ্টি আসে

চারদিকে শুকনো খাল বিল

বৃষ্টি কি আর নামানো যায়?

ভালোবাসা কি আর নামানো যায়?

ঝিঙে ফুল ফুটেছে আপন মনে

ঢেঁড়সের ফুল আপন মনে ফোটে 
শ্রীনিবাসের কাছে

জলেও ফুটবে মাছ যদি বৃষ্টি আসে

বকের কাছেও আসবে মাছের রূপ।

------৭ ভাদ্র ১৪২৯
-----২৪----৮----২০২২





অনির্বাণ এক আলোর কাছে
----------------------------------------

পাখি আমাকে দিয়ে গেল আহার

নুন নেই তেল নেই,
পাখিকে বলতেই, সে আমাকে বললো,
পাখিদের আহারে আলো থাকে---

সেই তো নুন তেল মসলা।

------৮ ভাদ্র ১৪২৯
------২৫----৮----২০২২





রাস্তা
-------

দুটি তারার মাঝখানে যেটুকু ফাঁক
সেই আমার রাস্তা।
তার আগে কেউ তারা দুটি পেড়ে নিলে
আমি খুঁজে পাবো না আমার ঠিকানা।

দুটি পাতার ফাঁকে যে হাওয়া বইছে
আমাকে ছুঁতেই হবে আজ।
আজও ভোরে উঠেছি গাছের নিকটে যাবো
হরিতকি --বহেড়া না হোক, আমার সামনে

পলাশ অনেক।

পলাশ রঙের ভালোবাসায় 
কী যে ভালোবেসেছি তোকে

তুই ভুলে গেলে ভুলে যা।

----১১ ভাদ্র ১৪২৯
----২৮----৮---২০২২




জ্বর
-------

মেঘলা রাত জ্বরের মতো

বৃষ্টি নেই

আকাশে নেই বিদ্যুতের হাসি খেলা

মেঘলা রাত জ্বর বাড়ছে ক্রমশ

জোনাকিরা নেই

কে আছো কোথায়?

ঘুমিয়ে পড়বার আগে আমাকে বলে যাও।






তালা-চাবি
---------------

তালা চাবিতে মরচে পড়লেও
ঘর দুয়ার খুলতে হবে।

মরচে পড়া মন খারাপ হলেও
ধুয়ে ফেলতে হবে,

ভোরের শিশিরে।

------১১  ভাদ্র ১৪২৯
-----২৮---৮----২০২২





প্রতিদিনের আমি
------------------------

সারাদিন কত কাজ

পায়রার কাছে মুঠো মুঠো মুড়ি,
ভোরের ভালোবাসা।
কুকুরের কাছেও যাই,
আমার সঙ্গে থাকে বিস্কুট।
তুলসি গাছের নিকটে একদন্ড,
এক মুঠো জল।

ফুল তুলতে যাই না আর
ফুলের কাছে যাই

সবার রঙে রঙ মেশাই।

সূর্য প্রণাম তো থাকেই

সেও এক বড় কাজ, আমি ভুলে গেলে,
অভিমান ক'রে কালো মুখ

ও মুখ হাসলেই যে আমি নিরাময়।






এক কোণে
----------------

যা পেয়েছি জড়ো করতে সময় লাগবে

যা পাইনি, তুমি দেবে?

রুমালের এক কোণে সেলাই করো আমার নাম

আকাশের এক কোণে ভোরাই।

------১২ ভাদ্র ১৪২৯
------২৯----৮---২০২২



 
ভালোবাসা আছে
-------------------------

হাওয়া আসছে আসতে দাও
মেঘ কেটে যাবে।
লীলা বলছিল আসবে
তাকেও বলো আসতে,

মেঘ কেটে যাবে।

পাখিদের রাস্তা থেকে কেটে যাবে আঁধার

ও বউ ঘোমটা খোলো,
যে কথা বাকি আছে বলে যাও।

সলতে পাকাও।

পিদিমে তেল কম পড়লে,

ভালোবাসা আছে।





বেদনা
---------

ওরা বলাবলি করছিল----
দিনটা ক্রমশ রোগা হয়ে পড়ছে।
আমি ওদের জানাই,
জল জঙ্গলও শীর্ণ হয়ে পড়ছে

উড়ে গেল শালিক--চড়ুই।

------১৫ ভাদ্র ১৪২৯
------১----৯----২০২২





প্রথম সন্তান
-----------------

ওলো ও অবনীর মা
তোর  নাতি হলো পুতি হলো
তোর চাঁদ হলো গগন হলো

গরুর স্তনেও দুধের ভার

ভাবনা কীসের?

ওলো ও অবনীর মা
ভাদরে আদর এলো
বেটার বেটা রাজার বেটা এলো

ধানেও দুধ আসবে

ভাবনা কীসের ?

ওলো ও অবনীর মা
আট কলাইয়ের একটা কলাই গড়িয়ে গেলে
আমি ধরবো আমার স্নেহ

আমার পৃথিবী ।

------১৭ ভাদ্র ১৪২৯
-----৩----৯----২০২২





সম্বল
--------

কাকে ডাকছো বৈরাগী?

কাকও সাড়া দেবে না
বেলা যে অনেক হলো
সবাই গেছে আহার খুঁজতে

কাজের শহরে গেছে
মেয়ে মরদের দল
কাকে আর পাবে

চালাতে আছে লাউ কুমড়া
যদি কিছু বলার থাকে
বলে যাও ওদের

উঠানেও পড়ে আছে পায়ের শব্দ
জড়ো করলে অনেক কথা
শোনার সময় থাকলে শোনো

আজ এটুকুই সম্বল।

-----২২ ভাদ্র ১৪২৯
-----৮---৯---২০২২





বৃষ্টি
------

বৃষ্টির ফোঁটাকে ছুঁতেই হবে মাটি

বৃন্ত থেকে আরেক বৃন্ত

শিকড়ের কাছে।

বৃষ্টির ফোঁটা লটকে আছে ডালে ডালে।






বাজার
-----------

বাজার মানে তো মধুসিং সর্দার।
বাজার মানে তো ভগত মাহাত।
বাজার মানে তো অশ্বিনীর মায়ের মাথায় ঝুড়ি
বাজারে আসছে শাক বিকতে।

শাকের সঙ্গে পোকা থাকলে
তার সঙ্গেও আমার পরিচয়।
শাকের সঙ্গে ঘাস থাকলে আমি পরিচয় করবো
জানতে চাইবো, আমার ঘাস জন্ম কবে!

মধু আজ করলা বিক্রি করলেও
আমি বলবো, সে বিক্রি করছে করলার মধু।
ভগত আজ ছাতু বিক্রি করলেও
আমাকে বিক্রি করবে না কোথাও  
এটুকুই রক্ষে।


-----২৮ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৪--৯---২০২২





সাহস
--------

মাটির তলে তলে
যে কেউ হতে পারে লোহা তামা অভ্র
সোনা রূপাও হতে পারে।
একজন তো নদী হয়েছে
আরেকজন পাথরের নূড়ি।

পাহাড় হতে সময় লাগবে সাহস লাগবে

মাথা উঁচু করতে সবাই তো পারে না।

-----২৯ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৫----৯----২০২২
----নির্মল হালদার













বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হরিতকী গর্ভের আলোয়

হরিতকী গর্ভের আলোয়
------------------------------------



অবনী
-----------

লীলাবতী পুষ্প মনজুড়া
তিনজন তিন সখি হলেও
কেউ কাউকে চেনে না।

আমাকে সবাই চেনে।

কারো কাছে কিছু চাইতে গেলে,
কেউ আমাকে দেয় শিল-নোড়ার শব্দ।
কেউ আমাকে দেয় ফ্যান গালার শব্দ।
কেউ আমাকে দেয় ধান ঝাড়ার শব্দ।

সব জড়ো করলেই একটি অবনী।

তাপে--উত্তাপে-শীতলতায় একটি অবনী।

------১৫ আষাঢ় ১৪২৯
------৩০----৬----২০২২



অবনী
----------

অবনী জল ধরছে

কোত্থেকে এলো কে পাঠালো
খোঁজখবর না করেই,
অবনী জল ধরছে।

বৃষ্টির জল।

অবনীর মা খিদে ধরছে
স্বামীর খিদে ছেলের খিদে
গরুর খিদে ছাগল ভেড়ার খিদে

সবার খিদে এক জায়গায়

আমার বুকের ঢেউ জড়ো করবে কে?

কে ধরবে?




ভুট্টা
--------

ভুট্টার দানা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে রাখো

আকাশের তারা ছাড়িয়ে- ছাড়িয়ে রাখো

নুন মরিচে মাখো।

লীলাবতীও বলছিল, আকাশের তারা
ভুট্টার দানার সঙ্গে মিলেমিশে গেলে
গরম কড়াইয়ে ছাড়বে।

------১৯ আষাঢ় ১৪২৯
-----৪---৭----২০২২




পায়ের তলার মাটি
--------------------------

গরু তো ঘরে ফিরেছে

গরুর খুরে মাটি থাকলে
আমাকে দিও পশুপতি।
তুমি একবার উনুন করতেও
আমাকে দিয়েছিলে মাটি।

রামধনের কাছেও চেয়েছিলাম
আমাকে ফিরিয়ে দিলো।
আমাকে দিলে প্রদীপের মাটি
কম পড়বে।

পাখির পায়ে কি মাটি আছে?

মাছের পাখায় শুধু জল।

আর কার কাছে চাইবোরে কিরাত?

তোর পায়ের তলার মাটি
তোর পায়ের তলায় থাক।
আমি না হয়, দেয়াল ছাড়াই
ঘর তুলবো।

------২১ আষাঢ়১৪২৯
------৬---৭----২০২২




চাকা
--------

চেয়েছিলাম এক সের চাল
পরীক্ষিৎ আমাকে বললো,চাল নাই হে
যদি নিতে চাও নিয়ে যাও
গরুর গাড়ির চাকা।

আজকাল তো ট্রাক্টর চলে

শুধু ট্রাক্টর। 

পরীক্ষিৎ আরো বললো,
চাকাটা পুরনো হলেও পুরনো ধান লেগে থাকতে পারে
কাজে লাগতে পারে
পুরনো ধান চালে বাড়তে পারে।





কথা
--------

আজকাল কথা বলতেও ভয় লাগে
যদি কথায় কথায় চেয়ে ফেলি
একটা সরষে বাড়ি।

কথা বলতে বলতে একজনের কাছে
নদী চেয়েছিলাম
কী হাসাহাসি!

কারো সঙ্গেই কথা বলবো না স্থির করেও
পেয়ারার সঙ্গে দুলতে চাইলাম
গাছ আমাকে ফেলে দিলো।

ধুলার সঙ্গে কথা বলতে গেলে
আমাকে গ্রাহ্যই করে না
শুধু ওড়ে

ওড়ে।

-----২২ আষাঢ় ১৪২৯
-----৭----৭----২০২২





অবনীকেই যখন দিলো না
তখন ছাগল ভেড়া নিয়ে কী করবো?
আমি তো আর ছাগল ভেড়ার চাষ করি না।

আমি আবাদ করলে করবো অবনীতেই।
কত কয়লা কত পাথর, সোনা দানা
তেলের খোঁজ পেলে, প্রদীপে প্রদীপে ঢালবো

তোর মুখে শুকনো সলতের বিষণ্ণতা।

------২৯ আষাঢ় ১৪২৯
-----১৪---৭--২০২২




আগুনের যৌবন
-----------------------

মিলনের একটা নদী আছে মুঠো ভরা
রুপালির কোঁচড়েও একটা নদী
আমাকে দেবে না ‌।

মৃগাঙ্কর কাঁধে একটা পাহাড় থাকলেও
আমাকে দিয়েছে একটা পাথর ‌।

আমি তো পাথর ছুঁড়বোনা কারো দিকে
বরং আরেকটা পাথর জোগাড় করে
পাথরে পাথরে আগুন জ্বালাবো

আজ যে আগুনের যৌবন আমার চাই।




আবাদ
----------

গ্রামের মোড়ল
আমার কাঁধে হাল জুড়ে দিয়ে বললো,
যা চাষ করবি যা-----

চাষে বাসে মন থাকলেও
আগে চাষ করবো মানুষের
মানুষের যে বড় অভাব

মনুষ্যবীজ কে দেবে আমাকে?

-----৩১ আষাঢ় ১৪২৯
------১৬----৭-----২০২২




১ লা শ্রাবণের কবিতা
------------------------------

আজ শ্রাবণের শুরু

আজ জন্মের শুরু

আজই শিবানী কালিন্দী নিয়ে এসেছে
একটি পদ্মের জন্ম

পদ্মের নাড়ি কোথায় পুঁতেছে?

আজ অপরাজিতাও এসেছে
কার গর্ভে ছিল?

কার গর্ভে একটি পাহাড়?

আকাশ থেকেও শুনি গর্ভ যন্ত্রণা।

------১ শ্রাবণ ১৪২৯
----১৮----৭----২০২২





ছোলা মটর
----------------

সূর্য তো সবাইকে রাঙায়

ছোলা--মটরকেও রাঙিয়ে মনজুড়ার কুলায়

এক কুলা ছোলা--মটর ভাজতে ভাজতে
মনজুড়া আমাকেও ডাকবে

আমার কোঁচড়ে সন্ধ্যা তারার উষ্ণতার সঙ্গে
গরম গরম ছোলা মটর ভাজা।

------২ শ্রাবণ ১৪২৯
------১৯----৭----২০২২




একটি নাম একটি জীবন
----------------------------------

যদি গ্রামের নাম
উমাকান্ত সিং সর্দার হয়ে থাকে
কেমন লাগবে?
যদি শহরের নাম
উমাকান্ত সিং সর্দার হয়ে থাকে
কেমন লাগবে?

যদি কল কারখানা হয়
উমাকান্ত সিং সর্দার
সকলের কাজ।
যদি ফসলের জমি হয়
উমাকান্ত সিং সর্দার
সকলের চাষ।

কাছে নেই দূরে নেই উমাকান্ত।

উমাকান্ত একটি নাম।

একটি আনন্দ,

উমাকান্ত সিং সর্দার।

------৯ শ্রাবণ ১৪২৯
-----২৬---৭---২০২২




ডিম
--------

ডিম তো পেড়েছে মুরগি

রক্ষা করবে কে?

ওগো ও অবনীর মা, ঝুড়িতে রেখেছো?

ভালো তো বাসতেই হবে
ডিম তো আমাদের,

ব্রহ্মাণ্ড।





যা বলতে চাই
-------------------

চাস আবাদ করতে কটা বৃষ্টি লাগে
আমাকে বলবেনা বনবিহারী।
কদিন তা দিলে ডিম পাড়বে
আমাকে বলবে না হাঁস।

কেনই বা পলাশ বসন্ত দিনে?

লাঙ্গলের ফলার ধার কমলে
আমিতো জানবো না।
আমাকে বলেছে বনবিহারী---
নখের ধার কমাও

নখের ধার কমাও।

-------১৩ শ্রাবণ ১৪২৯
-----৩০----৭---২০২২




কুটুম
--------
দূরে থেকেও কাছে থাকে
পাখির গানের মতো কুটুম।

এসো কুটুম এসো

সুরের মতো কুটুমের জন্য জল বাতাসা

কাক এলে এঁঠোকাঁটা ছড়িয়ে  
অপমান করবো না।
সেও তো স্বজন আমাদের,
মোষের পিঠে চলে যায় অনেক দূর

কাকিনী কোথায়?

-----১৫ শ্রাবণ ১৪২৯
-----১----৮----২০২২





সারা দিন
-------------

পুটুশ ফুল যেমন তেমন হলেও
ভ্রমর এসেছে ।
আর কে কে এসেছে না জানলেও
দিন কেটে যাবে।

প্রতিদিনই চোখের কোণে চাঁদের মত পিঁচুটি
যতবারই মুছে ফেলি ততবারই চাঁদ,
আমার দিন কেটে যায়

কাজের বউ এসে ঘরের কোণ থেকে অন্ধকার ঝাড়ে।




অবনীর আলোয় আলোয়
------------------------------------

একদিন হাঁসের সঙ্গে খাবো।
একদিন মুরগির সঙ্গে খাবো।
একদিন ছাগল ভেড়ার সঙ্গে।
একদিন গাই--গরুর সঙ্গে।

মনজুড়া বললো, বাকি রইল কে?

বাতাস ছাড়া কি আহার চলে?
জল ছাড়া কি আহার চলে?
কাক ছাড়া কি আহার চলে?

আমি কাকের সঙ্গেও খাবো।

মনজুড়া বললো, অবনী আর দোষ করল কী,
অবনীতেই পড়ে আছে ঘাম
অবনীর সঙ্গে চেটেপুটে খাও।

-------১৬ শ্রাবণ ১৪২৯
------২---৮----২০২২




খরার আতঙ্ক
-------------------

এক ঝুড়ি শশা

কে কিনবে কে কিনবে না
আমার কাছে খবর নেই।
আমার কাছে একটাই খবর
অনিলের ঘর নেই,

একটা নদী আছে,

বেগবতী সিং সর্দার।

অনিল সিং সর্দারের সঙ্গে থেকে
শুকনো হয়ে আছে।

এই শ্রাবণেও বালি বহমান।

------১৮ শ্রাবণ ১৪২৯
------৪----৮----২০২২




ফল  ও  শাকসবজি
---------------------------

তুমি তো ভাই আঙুর থেকে এসেছো।
তুমি তো এসেছো পালং থেকে।
আমরা সবাই কোনো না কোনো,
সবজি থেকে ফল থেকেই এসেছি।

কেউ কেউ তো শঙ্খ থেকেও এসেছে।

সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর।

অনেকদূর গিয়েও ভালোবাসা জাগায়

যে যে ধান গম থেকে এসেছো 
লোহা থেকে তামা থেকেও এসেছো
আমাদের কাছেই থাকবে
একটাই শিবির 

পেয়ারা ফুল ঝরে পড়ে।

কেউ কেউ তো বৃক্ষ থেকেও জন্ম নিয়েছে

বট--অশথের ছায়া পাই

তুমি তো ভাই মৃগাঙ্ক আমলকি

আমাকে চিনলে না?

-----১৯ শ্রাবণ ১৪২৯
-----৫----৮----২০২২





যাওয়া
---------

পাখির ডাকের ভিতর দিয়ে
যে রাস্তাটা চলে গেছে, সেই তো
অবনীদের গ্রামের রাস্তা

নবনী তরণীদের রাস্তা।

পাখির পাখায় যে হাওয়া চলে গেছে
সেইতো অবনীদের অফলা জমির দুঃখ
ঝরে যাওয়া সর্ষে ফুলের রেণু

যে মুখ লুকায় শুকনো বালুচরে।

পাখির পায়ে পায়ে যদি দু ফোঁটা জল আসে
কার আঁজলায় যে দেবো
ঘাস বীজ চেয়ে আছে।

পাখির ডাকের ভিতর দিয়ে আমারও যাওয়া,

অবনীদের ঘর।

------২১ শ্রাবণ ১৪২৯
-----সকাল--৬---৩২
-----৭---৮----২০২২





তাল গাছের সারি
------------------------

কোথায় আর দাঁড়াবে
আছেই তো তাল গাছের সারি
পিছনে দাঁড়িয়েও শুনতে পাবে
ঝড়ের পূর্বাভাস

গর্ভ যন্ত্রণা।

জোনাকিরা না এলেও জেনে যাবে
রাত হয়েছে অনেক
বাবুইয়ের বাসায় ঘুম এসেছে
স্বপ্ন এসেছে

আকাশ রঙিণ।

রোদ না এলেও দেখতে পাবে
মৌমাছিরা এসে খুঁজছে তাল পাকার গন্ধ
তাল রসের সুর
গানের কলি

ভাদরের আদর।

-------২৩ শ্রাবণ ১৪২৯
------৯---৮---২০২২
-----নির্মল হালদার












সুরের আগুন ------১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

সুরের আগুন ------১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
-------------------------------


আমি বোধ হয় আত্মজীবনী লিখতেই এসেছি। সেই ৭৮ সালে
কবি মণীন্দ্র গুপ্ত তার পত্রিকা
" পরমা " র জন্য আমাকে লিখতে বলেছিলেন শৈশব স্মৃতি।
তারপরও অনেক ছোট কাগজে
টুকরো টুকরো আত্মকথা লিখেছি।
এই সেদিনও গত শীতে রামানুজ মুখোপাধ্যায়ের কথা মত হোয়াটসঅ্যাপে লিখতে শুরু করি,
আত্মজৈবনিক গদ্য। যা ধারাবাহিকভাবে অনেকদিন চলেছিল। যা বই হয়ে প্রকাশিত হয়ে গেল ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার। শান্তিনিকেতনে।
রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী নীলিমা সেনের বাড়িতে। এক ঘরোয়া সভায়।

বইটি প্রকাশের আগে সোমজিৎ
আমাকে বলেছিল, বইয়ের মলাট
উন্মোচন করবেন এক কবি।
আমি তাকে বারণ করেছিলাম।
আমি চাইনি, কোনো কবি অথবা কোনো বিখ্যাত মানুষ বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন,
আমার ইচ্ছে ছিল না।
বইটির বিষয় যেহেতু স্মৃতিকথা
এবং ছোটবেলার কথা, আমি চাইছিলাম একটি বালক বইটি উদ্বোধন করুক।
সোমজিৎ কথা রেখেছে। সে
উদ্বোধন করতে নিয়ে এসেছিল
পাঠভবনের ক্লাস ফাইভের এক ছাত্র আদিতেও ঘোষালকে।

এও আমার পরম প্রাপ্তি।

আদিকে দেখতে দেখতে আমি দেখছিলাম আমার ছোটবেলা।
আমিও পাঠ ভবনের ছাত্র। অনেক কাল আগের ছাত্র। যখন গুরুদেব ছিলেন।
আমিও খড়ের চালা হোস্টেল ঘরে থেকেছি দিনের পর দিন। আমিও
গানের সুরে সুরে কাটিয়েছি আমাদের আশ্রমের দিনগুলি। তখন শান্তিনিকেতনের বাতাসে বাতাসে, জলে স্থলে গুরুদেবের গান। শুনতে শুনতে কত গান যে আমার অন্তরে অন্তরে বাসা বেঁধেছিল, সমস্তই মনে পড়ছে আজ।
একদিন বিকেলের দিকে আমি খেলার মাঠ থেকে বাইরে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে গুরুদেবের মুখোমুখি। তিনি আমাকে দেখেই জানতে চাইলেন,
এই ছেলে---খেলাধুলা ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি একটু ভয় পেয়ে জড়তা বোধ করছিলাম। গুরুদেবকে কিছুই বলতে পারিনি। আমাকে
চুপ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন---তুই আমার গান জানিস?
এবারও আমি চুপচাপ। তিনি তখন আমার মাথার চুল ঘেঁটে
আমাকে বললেন----তোর কথা আমি শুনেছি, আমি জানি তুই যেমন অঙ্ক করতে পারিস, তেমনি
একা একা গান করতে পারিস। এখন তোকে একটা গান শোনাতেই হবে।
আমি তখন আর কোনো কিছু চিন্তা না করে গেয়ে উঠলাম------

তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে---।

-----২৮ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৪----৯---২০২২
------সন্ধ্যে-- ৬/ ৫৩
-----নির্মল হালদার






বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ছাতাওয়ালা



এ গাঁ থেকে ও গাঁ।

সকাল হলেই , বগলে একটা ছাতা। কাঁধে একটা বড় ঝুলি নিয়ে চললো এক গাঁ থেকে আরেক গাঁ।

ছাতা মেরামত করবে।

এই মেরামত মিস্ত্রিকে সব গাঁয়ের লোক মেরামত চাচা বলে। আসল নাম কেউ জানে না। কোন্ গাঁয়ে ঘর কেউ জানে না।

ছোট বড় সবাই, মেরামত চাচা বলেই হাঁকডাক করে।

বর্ষার আগে থেকেই মেরামত চাচার গ্রামে গ্রামে আসা-যাওয়া চলে। কেননা, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকেই ঝড়-বৃষ্টি। কালবৈশাখী। বিকেল দিকে।
তার আগে রোদে রোদে তেতে ওঠা।

তবে যতই রোদ থাক গরম থাক,
গাঁয়ের মানুষ ছাতা ব্যবহার করে না। যে বুড়ো বা বুড়ি গরু চরাতে যায় মাঠে, তারা কখনো কখনো
পুরনো ছেঁড়া ছাতা মাথায় নিয়ে যায়।
বৃষ্টি এলে ভরা বর্ষায় ছাতা নিতেই হবে সবাইকে। কিন্তু নতুন ছাতা কিনতে বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্য নেই।
হয়তো অনেক আগে বাপ কাকা জ্যাঠা অথবা দাদু ছাতা কিনেছিল একটা 
সেই ছাতাই আজও চলছে। 
মেরামতের পর মেরামত করতে করতে। এবং এজন্য তো মেরামত চাচাও আছে। এক বছরের মেরামতি , কেউ কেউ বলে, কেরামতি। তো সেই মেরামতি-কেরামতিতে দু'বছর চলে যায়।

আজ যেমন হরি মাহাতকে মেরামত চাচা বললো--------
হরি হে তোমার এই মান্ধাতা আমলের ছাতাটাকে আমি যতই কেরামতি করি, আর রাখা যাবে না। ফেলে দাও---ফেলে দাও।
শিক গুলাতে জং ধরেছে। ছাতার কাপড়টাকে ধরে রাখতে পারছে না।

মেরামত চাচা প্রায় সব গ্রামের লোকজনের ঘর দুয়ার নাম ধাম সবই জানে।
কোনো কোনো ঘরে
কখনো কখনো দুপুরের ভাতটুকুও
খায়। জল তো খেয়েই থাকে। এ বিষয়ে সে ধর্মের ধার ধারে না।

একবার মনু সহিস মেরামত চাচার কাছে 
জানতে চেয়েছিল যে -------
হ্যাঁ ভাই আজ আমার ঘরে মানতের মাংস হয়েছে, তুমি টুকু খাবে নাকি?
মেরামত চাচা সঙ্গে সঙ্গে বলে----
ক্যানে খাবো নাই, সবই তো আল্লার কৃপা। জল খেতে যখন দোষ নাই, মাংস খেতেও দোষ নাই।

কোনো কোনো গাঁয়ের কোনো কোনো ঘরে আত্মীয় হয়ে গেছে এই মেরামত চাচা।
কারোর মেয়ে বা ছেলের বিয়ে হলেও নেমন্তন্ন পেয়ে থাকে।
মেরামত চাচাও টাকা পয়সা বা দান সামগ্রী দিয়ে লৌকিকতা করে।

এ ভাবেই সম্পর্কে বাঁধা পড়ে
এক গাঁ থেকে আরেক গাঁ। এ কারণেই মেরামত চাচা কারো কারো কাছ থেকে ছাতা সারানোর
মজুরি নিতে পারে না। যদিও তার ঘরেও অভাব আছে। পাঁচটা ছেলে মেয়ে। বউ। বৃদ্ধ বাবা।

জমি জায়গা নেই।

শুধু মাথার উপরে আকাশটা আছে। যা ছিঁড়ে গেছে কবেই।
ধুলো ময়লা কালিতেও ভরে আছে সমস্ত আকাশ।

মেরামত চাচা বলে-------
বুঝলে হরি, তোমার ছাতা মেরামত করে দিলেও উপরওয়ালার ছাতাটা সারাসারি
করতে আমার বাপ ঠাকুরদারও
ক্ষমতা নাই হে, ক্ষমতা নাই-----।

একটা কাক মাথার উপর দিয়ে
উড়ে গেল। বেলা হয়েছে ঢের।
ভাদরের রোদ ছ্যাঁকা মারছে গায়ে।
মেরামত চাচার জল তেষ্টা পেয়েছে। এই গ্রামের টিউকল
অকেজো । তাকে কারোর ঘর থেকে জল চাইতেই হয়। সে
মধু সিং সর্দারকে কাতর স্বরে বললো----
ও মধু মধু দাও না
একটু জল ---- জিভটা বড় শুকায় গেছে----

গাঁয়ে একটা সাইকেল ঢুকলো।
সায়া--ব্লাউজ নিয়ে এসেছে । প্রায় আসে বিক্রি করতে। এই সাইকেলের মানুষ মেরামত চাচার কাছে জানতে চায়----কতক্ষণ ঢুকেছো হে-----?

মধুর ছোট মেয়ে একটা স্টিলের ঘটিতে জল দিয়ে যায়, মেরামত চাচাকে।

আকাশে দেখা যায় শাদা শাদা মেঘ।


-----২২ ভাদ্র ১৪২৯
-----৮---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার

















ছবি : কল্পোত্তম







কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ