বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২

অভিমানের গৌতম---অভিমানী গৌতম




অভিমানের গৌতম---অভিমানী গৌতম
----------------------------------------------

তখন আমার ঠিকানা ছিল
৩১/২ কৈপুকুর লেন/হাওড়া--২
হাওড়া স্টেশন থেকে বেশি দূর নয়।
পুরুলিয়া থেকে কলকাতা গেলেই,
গৌতমের বাড়ি।

তখন মাসিমা ছিলেন।

গৌতমের দুই বোনও ছিল
আমার বন্ধুর মত।

গৌতম, গৌতম চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল একটা ম্যাগাজিন স্টলে। বইমেলা নয়।
অন্য একটা মেলাতে।
গৌতম আমার কাছে কবিতা চেয়েছিল।

তখন "অভিমান" শুরু হয়েছে।

সেই অভিমান পত্রিকায় সম্ভবত
৭৬ সালে আমার এক গুচ্ছ কবিতা বৃহৎ বঙ্গের মুখ দেখলো।

অভিমান থেকেই শুরু হলো আমার যাত্রা। কবিতার যাত্রা। সেইসঙ্গে কবি গৌতম চৌধুরী ,
বন্ধু গৌতম চৌধুরী হয়ে উঠলো।

কাছে পেলাম আরেকজনকে,
সে তখন কবিতা লেখে।
দেবাশিস মজুমদার। এখন যে
সম্পূর্ণ সফল নাট্যকার। তারই সুবাদে "শূদ্রক "নাট্যগোষ্ঠী
আমাদের আরেক ঘর।

অভিমান  কে  ঘিরে তখন  আম 
মুকুলের মতো প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবুদ্ধ মিত্র। আরো অনেক জন।

মনে পড়ে পার্থ দেব। 

তারও বাড়ি ছিল হাওড়াতে।

দু' একবার গেছিও।

বন্ধুতার সুবাসে  ঋদ্ধ হয়ে উঠছি
তখন। তখন ঘর ছেড়ে বাইরে আমার পা। গঙ্গার বাতাসে শ্বাস নিয়ে হেঁটে চলেছি কলকাতার পথে পথে।

গৌতম অফিস যাবে। তার সঙ্গে
আমার বেরিয়ে পড়া। তারপর
কলকাতার বন্ধুদের বাড়ি।

কারো কারো অফিস চলে গেছি।

এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেছে। আমি আবার কৈ পুকুর লেন।

নতুন কবিতা নতুন যৌবন। রক্তে
সূর্যের তেজ। 

লাথি মারছি প্রতিষ্ঠার মুখে।

সেদিন সেই গৌতম চৌধুরী প্রতিষ্ঠান বিমুখতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। সে নানা দিক থেকে
খুঁজে বেড়িয়েছে নতুন মুখ নতুন আলো।

সে খুঁজে বেড়িয়েছে আপোষহীন
কবিতা। গদ্য। প্রবন্ধ।

সৈকতের একটি উপন্যাস
অভিমান--এ প্রকাশিত হয়েছিল।
অভিমান--এর রিলকে সংখ্যায়
অনুবাদ করেছিল সৈকত।

গৌতম আমাদের বন্ধু যেমন, তেমনি গৌতম জহুরীও।

গৌতম কবি। গৌতম নাটকের সফল গীতিকার। নান্দীকারের ফুটবল নাটকে গান লিখে সে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। অভিমান কিম্বা গৌতম চৌধুরী জয় গোস্বামী সুবোধ সরকার সুতপা সেনগুপ্তের কবিতার বই পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছে।

বাংলা কবিতায় অভিমান একটি ইতিহাস। ৭০ দশকের ইতিহাস। অনেকে এই সময় জানে না বলে গৌতমের অভিমান আছে। যা স্বাভাবিক।

গৌতমের মাধ্যমে কতজনের সঙ্গে যে আলাপ হয়েছে, তার তালিকা তৈরি করতে গেলে সব নাম মনে পড়বে না।

গৌতম কারো কারো কাছে
আচার্য হয়েছে। 
প্রকৃত অর্থেই সে আচার্য অবশ্যই।
তার নিজের লেখালেখির সঙ্গে
নতুন কবিদের সংঘটিত করাও এক বড় কাজ বৈকি।

সে নিজের কথা বলতে নারাজ।
বরং অন্যদের কথা বলতেই বেশি উৎসাহ বোধ করে। আজও 
অনেক তরুণ কবিদের আশ্রয়
গৌতম চৌধুরী ‌।

গৌতমের সঙ্গিনী পুপুর
কবিতা আমরা দেখতে পেয়েছি
লিটল ম্যাগাজিনের পাতায়।

অনেকের নিশ্চয়ই মনে পড়বে,
" তিতাস চৌধুরী পুপু" কে।

গৌতমের কলম্বাসের জাহাজ
এখনো আবিষ্কারের নেশায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।  সে নিশ্চয়ই দেখাতে পারবে ----কবিতার নিশান আজও ওঠে পূব দিকে।

এই দেশ এই বাংলা "হনন মেরু"
হয়ে উঠলেও  কবিদের আকাশ,
খাঁটি কবিদের আকাশ  দলদাস নয় । কখনই নয়। কখনই ছিল না।

আলোক সরকার থেকে আরও অনেক কবি প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে সারস্বত চর্চা করে গেছেন। এবং এখনও করছেন অনেক তরুণ কবি। যাদের অগ্নিশিখায় বাংলা কবিতার মুক্তি।

প্রতিষ্ঠানের বেড়াজাল থেকেও
মুক্তি ঘটবে এই আশাতে গৌতমের চেয়ে থাকা পথের দিকে।


---------২৮ বৈশাখ ১৪২৯
--------১২-----৫----২০২২
--------নির্মল হালদার










ছবি : সন্দীপ কুমার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ