পাঁচ বছরের পূর্ণতা ----- পালকের জন্মদিনে
-------------------------
দেখতে দেখতে আমাদের পালক
পাঁচ বছর পূর্ণ করলো।
কত কান্নাকাটি কত আবদার
কত চকলেট কত ক্যাডবেরি
কত কুরকুরে কত খেলনা
ভাতের পরে পান চাই।
আমারও অভ্যেস হয়ে গেছে,
আমারও ভাতের পরে পান চাই।
তো, পান কিনতে গেলে পালকের
জন্য দোকানির কাছে একটা পান পাতায় মিষ্টি পান মশলা দিয়ে
মুড়িয়ে নিয়ে আসি।
আমি তাকে পান দিতে ভুলে গেলে
সে আমার কাছে এসে বলবে------
আমাকে পান দাওনি আজ।
রং পেন্সিল শেষ হবার আগেই
আমার কাছে তার আবদার,
কিনে দাও। পরে কিনে দেবো বললে শোনে না।
যদি বলি, পয়সা নেই। শুনবে না সে।
কোনো কোনোদিন বাজার যাওয়ার আগে পালকের কাছে
জানতে চাই------তোমার জন্য
কি নিয়ে আসবো বলো?
মর্জি মতো তার পছন্দের কিছু না কিছু নিয়ে আসতে বলে। কোনোদিন আমার সঙ্গে যায়।
দোকানে গিয়ে আঙ্গুল বাড়িয়ে দেখায়------ওইটে-----ওইটে----।
আমি চায়ের দোকানে ঢুকলে
সেও কখনো কখনো চায়ের আবদার করে। এবং চা যতক্ষণ না ঠান্ডা হচ্ছে আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে হবে।
আমার শহরে "এম বাজার"নামে
একটা দোকান আছে। মজা করেও যদি বলি, এম বাজার যাচ্ছি , সে আমার সঙ্গে যাবেই।
কারণ, লম্বা-চওড়া দোকান
সে দৌড়ে বেড়াবে।
নিজের আবদারটিও ভুলবে না।
জামা প্যান্ট অথবা ব্যাগ কিংবা পুতুল কিনে দিতে হবে।
এই পালক আমার পালক।
আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে।
হঠাৎ দেখবো আমি তার নাগাল পাচ্ছি না।
তার হাত ধরেই আমি হয়তো
রাস্তা পার হয়ে যাবো।
সেইতো জীবনের সৌন্দর্য।
আমি চেয়ে থাকবো।
প্রতিদিন সকাল কিংবা সন্ধ্যেবেলা
পালক আমার স্মার্টফোন নিজের কাছে আঁকড়ে কার্টুন দেখবে।
আজ যখন বড় হয়ে উঠছে সে,
আমাকেও দেখবে নিশ্চয়ই ।
মাথা উঁচু করে তালগাছ যেমন দেখবে, আমাকেও দেখবে। এই আশাতে আমার সকাল হয়
সন্ধ্যে হয়। রাত্রি আসে।
আমি পালকের কাছে যাই।
তার কপালে স্নেহ--চুম্বন রেখে
তাকে শুভ রাত্রি জানাই।
দুপুরেও ভাত খাওয়ার আগে
পালকের মুখে আগে দেবো
তারপর নিজে খাই।
তার খাওয়া মানে আমারই খাওয়া। আমারি আনন্দ।
আমার সমর্পণ।
ছোট ছোট পায়ে সিঁড়িতে উঠে
আমাকে ডাকছে সে-----------
ডোডো দাদু------ডোডো দাদু----
সূর্য তারার হাসির মতো এই ডাক
আমাকে আলোকিত করে।
কোলে-কাঁখে আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠলো পালক।
সে কি আর আইসক্রিম খেতে চাইবে না? লিচু ড্রিঙ্কস?
শীতল পানীয়ের দিকে তার ঝোঁক। দেখা যায়, দুদিন পরেই
গলা ধরে গেছে । মৃদু জ্বর।
ডাক্তারের কাছে ছুটতে হয়। তখন
আমার মন খারাপ করে।
একটা দৌড়ঝাঁপ করা শিশু শান্ত হয়ে গেলে, চুপচাপ হয়ে গেলে,
আমাকে ঘিরে ধরে বিষণ্নতা।
তখন মনে হয় কত তাড়াতাড়ি সে
সুস্থ হয়ে উঠবে।
তার মুখ দিয়েই তো বাঘ সিংহ হাতি ঘোড়া এবং জিরাফ ভাত খায়। তারপর পালক। তার ও পরে আমি খাই।
পালক বড় হয়ে উঠছে।
কত বড়?
এই ২৪ বৈশাখ পাঁচ বছর পূর্ণ করলো সে। বৈশাখের আকাশ
তার অসীমতা দিয়ে পালককে
আশীর্বাদ জানাবে নিশ্চয়ই।
গাছপালার স্নেহ পালকের সঙ্গে সঙ্গে আছে।জানি। আরো জানি,
পাখিরা তাদের ডানার আড়ালে
পালককে রেখে ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচাবে। কখনো কখনো ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ছুটে যেতেও বলবে নিশ্চিত। কেননা, সে জানবে
ঝড় কী। বৃষ্টি কী।
ঝড়ের মাথায় প্রদীপ জ্বালিয়ে
পালক যে যাবে অনেক দূর।
------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার ও অন্যান্য
আরও পড়ুন

































কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন