বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২

আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া



ভুট্টা
-------

পুরনো ভুট্টা টাঙ্গানো আছে ঘরের মাচায়

ভুট্টা জড়ো করাও আছে ঘরের কোণে

চাল বাড়ন্ত হলে সেদ্ধ করা হবে
ভুট্টার দানা

সকালের আহার।

হাওয়া আসবে পাখি আসবে 
আহারে মুখ রাখতে।


২:
ভুট্টা টাঙানো আছে ঘরের মাচায়
যেন পুরনো আত্মীয়রা ঝুলছে,

নীরব--নিঃশব্দ।

কোনো প্রত্যাশা নেই, শুধু দেখা
ঘরের সুখ দুঃখ ঘরেই আছে

ফাঁকা মেঝেতে পিঁপড়ে আসছে এখনো।



কুয়ো---কাঁটা
----------------

কত কান্না কত কথা
কত হাসাহাসি
গোপনীয়তাও আছে, আছে মুখের ছবি

উঠে আসে না।

কেবল ভাঙ্গা বালতি উঠে এলো
ছেঁড়া গামছাও উঠে এলো
মলিন মুখে উঠে এলো প্লাস্টিকের পুতুল।

শুধু কুয়ো --কাঁটায় উঠে আসে না,
মাঝলা বউয়ের নাকের নোলক।


------৬ বৈশাখ ১৪২৯
-----২০----৪----২০২২



উৎসর্গ
---------

ঘরে যা হয় যেটুকু হয়
দেবতাকে উৎসর্গ করবে।
ঘরের গাইয়ের দুধও
শিবের মাথায় ঢেলেছে।

কমলা আজ দেখতে পেয়েছে
ঘরের মাচায় একটি লাউ।
সেও দিয়ে আসবে মন্দিরে
তারপর পান করবে জল।

কমলা জানে,
জল আসছে অনেক দূর থেকে
তার নামেও এক ঘটি জল
উৎসর্গ করেছে কেউ।



ভিক্ষার ঝুলি
----------------

গামছায় বাঁধা হারমোনিয়াম গলায় ঝুলছে

হরিনাম করতে করতে
এক দুয়ার থেকে আরেক দুয়ার
একমুঠি ভিক্ষার সঙ্গে একমুঠি হাওয়া

ভিক্ষার ঝুলিতে গুনগুন করে।

হরিনাম করতে করতে
এক দুয়ার থেকে আরেক দুয়ার
হরি সুধা হরি ক্ষুধা

ভিক্ষার ঝুলিতে গুনগুন করে।


----৭ বৈশাখ ১৪২৯
----২১---৪---২০২২



শক্ত
------

ছেঁড়া ট্যানা আরো ছিঁড়ে গেলেও
কোমরে শক্ত করে বাঁধা।

কোমর ও শক্ত

অনেক বঞ্চনা পার হয়ে যেতে হবে।



শুশ্রূষা
---------

শাল গাছ  বড় গাছ

তুলসি গাছ ছোট হলেও একটি গাছ

তার মৃদু হাওয়ায় শুশ্রূষা আসে।



বাঁশ গাছ
------------

একটা মাঠে একটা শাল গাছ

একটা ঝাড়ের মধ্যে একটা বাঁশ গাছ,

যৌথতায়।


-------৮ বৈশাখ ১৪২৯
-----২২----৪-----২০২২



চরে বেড়ায়
---------------

বছরে কত ধান পায়
বছরে কটা কাপড় পায়
বাগালের ঘর কত দূর
কে আর খবর রাখে!

সবাই শুধু দেখে
বাগালের সঙ্গে চরে বেড়ায়
বৈশাখ থেকে বসন্ত
শাদা--কালো থেকে রঙিণ ঋতু।



পাহারা
---------

ছেলেরা গেল শহরে কাজ করতে

ঘরে আছে বুড়ি ঠাকুমা।

সেই যাবে মাঠে
সঙ্গে ছাগল---ভেড়ি

পাহারা দিতে দিতে ঝিমিয়ে পড়ে
গাছ তলায় ঘুমিয়ে পড়ে

একটি তারার পিছনে আরেকটি তারা ছুটে গেলে
লাঠি দেখায় বুড়ি।


------৯ বৈশাখ ১৪২৯
-----২৩-----৪----২০২২



কেঁদ
--------
কেঁদ পেকে গেছে

মুঠিতে ধরার মত রূপ

আনন্দরূপ।

ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কেঁদ পাড়তে যায়

জঙ্গলে জঙ্গলে।



তামার পয়সা
-----------------

হাঁড়িতে আছে ধান
অনেককালের ধান
আছে তো আছেই এক কোণে

ঘাঁটতে ঘাঁটতে 
পেলে পেতেও পারে
একটি তামার পয়সা

একটি ছেঁদা পয়সা

পুরনো দিনের সম্পর্ক।


------১০ বৈশাখ ১৪২৯
------২৪----৪----২০২২



বিড়ি
-------

বিড়ি বাঁধতে বাঁধতে মুখে রক্ত উঠে এলো

রক্তের দাম ১৫৭ টাকা

সারাদিনের মজুরি।


২ :
কেঁদ পাতায় দোক্তা বেঁধে বিড়ি

এক থেকে একশো

হাজার হাজার বিড়ি জ্বলে উঠলেও
অভাবের চুলা জ্বালাতে পারে না।


-------১১ বৈশাখ ১৪২৯
-------২৫-----৪-----২০২২



ইঁটভাটা 
----------

সংসারের বোঝা সংসারে রেখে,
মাথায় রোদের বোঝা তুলে,
কাজের বেলার দিকে-----

মাথায় আরো উঠবে ইঁটের বোঝা।



২:

মাথায় মাথায় কাঁচা ইঁট চলেছে
ভাটার দিকে।

পুড়তে পুড়তে,

মালিকের চোখের মত লাল হয়ে উঠবে।


-------১২ বৈশাখ ১৪২৯
------ ২৬----৪----২০২২



বাঁশের কাজ
----------------

একটা কুলা তৈরি করতেও মেহনত লাগে

বাঁশের সঙ্গে বাঁশের বিনুনি
কঠিন কাজ

একটা ঝুড়ি তৈরি করতেও সময় লাগে

বাঁশের সঙ্গে বাঁশের গিঁট
গাঁট ছড়ার মতই

একটা কুলা হলে এক কুলা ধান

একটা কুলা হলে এক কুলা বৃষ্টি

দুধের শিশুর মত লাফাবে।



২:

বাঁশের ছাল তুলে অনেক কুচি

বাঁশের কুচির বাঁধনে একটা ঝ্যাঁটা।

ঝ্যাঁটাতো বানাতেই হবে,

ঘরে ঘরে যে আবর্জনা।


------১৩ বৈশাখ ১৪২৯
-----২৭----৪-----২০২২



কামার শালা
----------------

মাটি পিটলে মাটিই থাকে।

মানুষ পিটলে মানুষই থাকে।

লোহা পিটলে একটা ফাল।

এ ফোঁড় ও ফোঁড় করবে জমি।

তারপরেই কামারের কাছে,

একটা হাঁসুয়া।




কুমোরের ঘর
-----------------

মাটি কম পড়ছে কুমোরের চাকায়

মানুষও কম পড়ছে

পুরনো একটা হাঁড়ি গড়গড়ায়।

------১৪ বৈশাখ ১৪২৯
------২৮----৪-----২০২২



কচড়া
---------

ঝিনুকে ছুলছে কচড়ার ছাল

কচড়ার আগে মহুল ছিল। 
গন্ধ ছড়িয়ে ছিল। 

মহুল ঝরেও গেছে। 

আজ এসেছে ফল, 
কচড়া। 

আজ তিন পাত কচড়া দশ টাকা
আজ তিন পাত ঘাম, 

এই বাজারে। 



মেরামতি
------------

জুতোয় পেরেক ঠুকে কপালে পেরেক ঠুকলো

শব্দ হলো আকাশে।

জুতো সেলাই করতে করতে
ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ মেরামত করবে,

নাগেশ্বর রুহিদাস।


-------১৫ বৈশাখ ১৪২৯
------২৯----৪-----২০২২



আলো
---------

লম্ফর তলা ছেঁদা হয়ে গেলে
আরো আলো খুঁজে বেড়ায়,

অন্ধকারের মা।

জোনাকি খুঁজে বেড়ায় ছেলেমেয়েরা।




খরা
------

ধূলা উড়ছে
নদীনালা পুকুরে

ধীবরের জাল লাফিয়ে উঠলো আকাশে

শুকনো খটখটে আকাশ
একটিও তারা নেই।


------১৬ বৈশাখ ১৪২৯
-----৩০----৪----২০২২



পান
-----

আঙুলে লটকানো চুন
জিভে ঠেকাবার আগে
হাত থেকে পড়ে গেল পান

ছড়িয়ে পড়লো সুপারি খয়ের

মাছি এসে বলে : রস নাই

রস নাই।




লাঙ্গল
---------

লাঙ্গলে মরচে পড়ে না।

লাঙলে লেগে আছে সন্তানের প্রথম কান্না।


--------১৭----৫----২০২২
------১----৫----২০২২



দুপুর
-------

ভরদুপুরে কপাট খোলা থাকলেও
ঘরে কেউ নেই, মেয়ে মরদ 
কাজে গেছে সবাই।

রেখে গেছে বাসি হাঁড়িয়ার গন্ধ।



গরু
------
ছাগল তো আর চাষ করবে না

তালতলের হাটে
পনেরো হাজার টাকায় এক হাল গরু

শুধু কি আর চাষ!

গরুর লেজ ধরে বৈতরণী পার।


--------১৮ বৈশাখ ১৪২৯
-------২-----৫-----২০২৯
-------নির্মল হালদার











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ