তার ১১ টা পান্ডুলিপি পড়ে আছে। মঞ্চস্থ হয়েছে ১১ টা যাত্রাপালা।
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা
১১ টা যাত্রাপালার মঞ্চ রূপ
তাদের গ্রাম নডিহাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সে নিজেও অভিনয় করে। অভিনয় করতে ভালোবাসে। অভিনয় তার আবেগে।
প্রতি বছর পুজোর সময়ে সুমনের
নির্দেশনায় একটি যাত্রাপালা হবেই। গ্রামের সবাই অপেক্ষাও করে থাকে , যাত্রাপালা দেখবে।
যাত্রাপালার মত প্রাচীন ঐতিহ্য
যখন প্রায় শেষের মুখে, তখন
সুমন পুরুলিয়ার একটি গ্রামে
যাত্রার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। একা।
সুমনের এই একক লড়াই সম্ভব
হয়েছে তার অন্তরের জোরে।
অনেক প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে
কিছু শিল্পমুখী মানুষকে এক জায়গায় জড়ো করতে পেরেছে, এও কম কথা নয়।
যখন রুটি রুজির লড়াইয়ে মানুষ
ছুটে বেড়ায়, যখন অন্যদিকে মুখ ফেরানোর সময় নেই মানুষের, তখন সুমন কিছু মানুষকে সংঘটিত করতে পেরেছে, শুধুমাত্র যাত্রার জন্য। বা যাত্রাশিল্পের জন্য। এ তো শিল্পের জয়।
সে সংসারী মানুষ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার ৭ টি
কবিতার বই আছে। বাংলা কবিতার বৃত্তে সে নিয়মিত একজন কবিতা লেখক। তার পরেও সে যাত্রাপালার জন্য সময় ব্যয় করে।
আজকের বাংলাবাজারে কোনো
সহৃদয় প্রকাশক নেই যিনি সুমনের যাত্রাপালার পান্ডুলিপি গুলি প্রকাশ করবে মুদ্রিত অক্ষরে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা, তার কবিতার বই প্রকাশ করতে কজনই বা এগিয়ে আসছেন?
সেওতো বাংলাবাজারের একজন
নিয়মিত লেখক। তার কবি সত্ত্বার
সঙ্গে পরিচিত হতে হলে তার কবিতার বই সবার সামনে নিয়ে আসা দরকার বৈকি।
শিল্পের সমস্ত জমিতেই রাজনীতি আছে। সংকীর্ণতা আছে। যেখানে আলো পড়বার কথা, সেখানে
আলো পড়ে না।
ধুঁকতে থাকে আমাদের গ্রাম বাংলা।
গ্রাম যে শহরকে বাঁচিয়ে রেখেছে,
বাঁচিয়ে রাখে , একথা ভুললে চলবেনা। একদিন দেখা দেবে আবার-------গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও।
যার যা মূল্য দিয়ে দিতেই হবে।
চাষীকে যেমন নায্য মূল্য দিতে হবে, তেমনি শিল্পীকেও দিতে হবে নায্য মূল্য। সবার সমান অধিকার।
সবাই নিজের নিজের জায়গায়
সুন্দর এবং সৎ।
সকলেই প্রশস্ত করছে এইদেশের জমি।
একসময় যাত্রাপালার সফল রূপকার ব্রজেন দে মঞ্জিল ব্যানার্জি ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়রা
যেমন মূল্য পেয়েছে, তেমন মূল্য
সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়রা কেন পাবে না, এ দাবী করতেই পারি।
দুয়ারে সরকার, লক্ষীর ভান্ডার
আম জনতার কাছে এগিয়ে এসেছে। সাধু উদ্যোগ। তবে কেন
দুয়ারে সরকার আসবে না শিল্পীর খোঁজে?
শিল্পীর দুয়ারে?
নডিহা থেকে বাথান ৫২ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করে
একটি যাত্রাপালার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে সুমন।
শুধুমাত্র শিল্পকে ভালবাসে বলেই,
তার এই সময় ব্যয়। সে তো কোনো অর্থের বিনিময়ে কাজ করে না। শুধু শিল্প।
শিল্প শিল্প করেই কিছু মানুষ এখনো আমাদের এই বাংলাকে
আলোকিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আমজনতা দেখতে পায়না।
দেখার চেষ্টাও তাদের নেই। কারণ, প্রতিদিনের লড়াইয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে তারা। কিন্তু
রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকার
এবং তাদের তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ,
কী করছে?
আমি সুমনকে অনেকদিন ধরে চিনি। চুপচাপ শান্ত মানুষটি ভেতরে ভেতরে প্রতিটি মুহূর্ত
সৃজনশীল।
তার সৃজন ক্ষমতার কাছে
আমার কুর্নিশ।
-------------------------
এখানে সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের
যাত্রাপালার নামগুলি রাখা হলো।
১:
আজ ভারতের বস্ত্রহরণ
২:
চিতায় জ্বলছে ছোট বোন
৩:
মায়ের পায়ে শেষ প্রণাম
৪:
মায়ের আঁচলে মাটির স্বর্গ
৫:
আমি ইসকাপনের বিবি
৬:
সিঁথির সিঁদুরে জ্বলছে আগুন
৭:
সিঁদুর খেলার বিজ্ঞাপন
৮:
ও চাঁদ, তুমি নষ্ট কেন
৯:
মানুষ মানুষের জন্য
১০:
সিঁদুর মুছে দাও
১১:
মানুষ কবে মানুষ হবে
----------------------
১৯৭৮--এ সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। কতই বা বয়স আর। তাকে চলতে হবে দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। সেই পথে কুসুম ছড়ানো না থাকলেও
যেন পাথর ছড়ানো না থাকে, এই লক্ষ্য টুকু আমাদের যেন থাকে তার অনুরাগী হিসেবে।
তার কবিতা বইগুলির নাম ও এখানে রাখা হলো-------
১:
মহুল পাতে খুলা চিঠি
২:
পথে পথে দুঃখহরণ
৩:
পাপ লিখেছি স্বপ্নদোষে
৪:
চন্দ্রবিন্দু গাছ
৫:
ভালো থেকো মিথুন রাশি
৬:
অসমাপ্ত ভ্রমণ রেখা
৭:
জেগে থাক অনন্ত ঘুমে
আপনাদের জন্য। আগামীর জন্য।
আমার এই প্রতিবেদন রইল।
--------২৫ বৈশাখ ১৪২৯
--------৯----৫-----২০২২
-------নির্মল হালদার
আরও পড়ুন









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন