শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২

তুমি তো শুশ্রূষা কাশফুলের মত




তুমি তো শুশ্রূষা কাশফুলের মত
----------------------------------------

নন্দিনী নন্দিনী--------
সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠি-------
নন্দিনী নন্দিনী---------

যৌবনকালের ডাক শুনতে পাই।

কার যৌবন কে শুনতে পায়?

চারদিক আঁধার আঁধার লাগছে কেন? একটা কাক এসে উড়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। কাক তো কিছু বলে গেল না?

চারদিক আঁধার আঁধার লাগছে কেন? নন্দিনী কোথায়? সেতো গঙ্গায় যাবে না স্নান করতে। তবে সে কোথায়?

নন্দিনী নন্দিনী--------
আজ সিঁড়ির শেষ নেই। উঠছিতো উঠছিই। কোনো সাড়া নেই। কোথায় গেল নন্দিনী?

সেই তো আমাকে কোনো এক কালে দিয়েছে ভরসা, আমাকে দিয়েছে ভয়কে জয় করার শক্তি।
সেই তো সৌন্দর্যের অনিবার্য এক সাহসিকা। ভালোবাসা।

ঝড় এসে থেমে যায় নন্দিনীর
পিঠে ছড়ানো চুলে। নন্দিনী হেসে ওঠে।
ঝড় চলে গেলে রোদ।
পায়রা এসে ডাকে-------নন্দিনী নন্দিনী----

ক্ষুদ--কুঁড়ো ছড়ানো চরাচরে সকলের আহার।

নন্দিনী নন্দিনী------- তুমি কোথায়?

তুমি আমাকে ঘর দিয়েছো। তুমি আমাকে ছাদের ছায়া দিয়েছো। তুমি আমাকে ঘর দিয়ে ঘরের মায়া দিয়েছো।

বিশু পাগলও তাই ডাকে-------- নন্দিন নন্দিন-----

কোথায় নন্দিন?
আমাকে অন্ধকার জাপটে ধরছে। আমি আতঙ্ক থেকে আতঙ্কে গর্ত খুঁজে বেড়াই। আমাকে উদ্ধার করো নন্দিনী।

যক্ষপুরী থেকে আর্তনাদ আসছে।

সকালের চায়ের জল ফুটবে না?
আমি তো এক কাপ চা শেষ করে নন্দিনীর কাছে চাইবো, আরেক কাপ চা।

আমি যখনই যাই অনেক দূর থেকে যাই। আমার পায়ে লেগে থাকা পথ নন্দিনীকে চেনে।

নন্দিনীকে আরো চেনে আমার দিদি। এই নন্দিনী দিদিকে দিয়েছিল তুলসী গাছের মতো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

এই নন্দিনী ঘুমোচ্ছে?

নন্দিনী নন্দিনী-------

কত সিঁড়ি ভাঙবো আর? কোথায় যাবে কতদূর যাবে এই সিঁড়ি? সিঁড়িও কী আমাকে পেঁচিয়ে ধরবে?

নন্দিনীর কাছে পৌঁছোনোর জন্য এত সিঁড়ি তো লাগেনা। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে এত ঝুলকালি কেন?
অন্ধকার কেন?

নন্দিনী , আমি আজও রক্তকরবী গাছে জল দিয়েছি। তুমি দেখা দাও----শোনো গাছে কুঁড়ি আসছে। ফুল তো আসবেই। ফুলের আলোয় তুমি গাইবে------

পাড়ায় পাড়ায় খেপিয়ে বেড়ায় কোন্ ক্ষ্যাপা সে?

মনে পড়ে নন্দিনী, তোমার কাছ থেকেই
আমি শুনেছিলাম প্রথম
বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এলো----

তোমার তো বয়স বাড়ে না নন্দিনী।
তুমি প্রেম তুমি বিদ্রোহ।
তোমার বয়স তো বাড়তে পারে না।
তুমি চিরকালের ব্যথা ও বিরহ।
তোমার কাছ থেকেই কখনো কখনো আকাশ ধার করে মেঘ। দিঘির শালুক ফুটতে না--পারলে তোমাকেই ডাকে।

আমার দিদিও তোমাকে মাঝে মাঝে ডাকতো। তুমি তো শুশ্রূষা, কাশফুলের মত।

আমিও ডাকছি, নন্দিনী নন্দিনী---

এই এক জীবনের নির্জনতা বাগবাজার শ্যামবাজারে নেই। নেই চকবাজারে। কোথায় আছে নন্দিনী?
চলো, রঞ্জনের খোঁজ করি। সেই বোধহয় বলতে পারবে, নির্জনতা কোথায়?

রঞ্জন তো কথা দিয়েছিল আমাদের সবাইকে ছাতিম পাতা দিয়ে ভালোবাসা দেখাবে?

ভালোবাসা কী গো?

কুমোরটুলির পথে পথে মাটির প্রতিমা। তোমার দিকে চেয়ে চেয়ে কীযে কথা বলে শুনতে পাইনি কখনো।

আমার যে শুধু কান্না পায় নন্দিনী।

কান্না থেকেও আঁধার আঁধার লাগে। কান্নাও এক রকমের শিকল। আমাকে সারাদিন শব্দ শোনায়।

মুক্তি নেই। আমার মুক্তি নেই।

যেমন করে মুক্তি পাচ্ছে না যান্ত্রিক মানুষ। মুক্তি পাচ্ছে না কলের মজুর। কত খাঁচা যে তৈরি হয়েছে কত দিকে হিসেব নেই কোথাও।

আমি তো হলুদ বাটার শব্দ খুঁজছি। তুমি আজকাল হলুদ বাটো? হলুদ বাটতে বাটতে হলুদ ছিটকে পড়লে কার গায়ে লাগে?

আমার কয়েকটা গ্রাম আছে, এক হলো পিঁড়রা। দুই হলো চাকিরবন। তিন হলো ডাকাকেঁদু। চার হলো মুটরুডি।পাঁচ হলো বাথান।
সবাই একসঙ্গে তোমার কাছে যাবে। তোমাকে কেউ দেবে ধান ক্ষেত। কেউ দেবে নদীর পাড়। কেউ দেবে সর্ষে ক্ষেত। ভুট্টার ক্ষেত পেলে পেতেও পারো। লুকোচুরি খেলা যায়। আখের ক্ষেত তোমাকে কেউ দিলে নিয়ে নিতে পারো।

আখের ক্ষেতে শেয়াল এলেও তোমার সঙ্গে ভাব করবে।

আমি তো রাহেড়ের খোসা ছাড়িয়ে বাদামের জমি চাইছি। মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে বাদাম। তোমাকে দেবো।

আর তো দেবার কিছু নেই।

তুমি তো কোথাও জায়া। কোথাও জননী। তুমি ছাঁচ ভাঙা প্রেমিকা হয়ে অজস্র মানুষের পাশে।

প্রসূন ছিল একদিন। আজও আছে। আজও আছে তোমার সঙ্গে গঙ্গার ধারা।

তোমাকেও তো ডাকছে কেউ
করুণা ধারায় এসো। এসো, জীবন তো শুকিয়ে যায় ‌। এসো, আমার ঘরে।

নন্দিনী নন্দিনী সিঁড়িতে জল ফেলেছে কে? পিছল লাগছে।

বৃষ্টিও পড়ছে বাইরে। ভিতরেও বৃষ্টি আসছে। কোথায় দাঁড়াবো নন্দিনী? রক্তকরবীর আলো প্রবেশ করবে না আজ অন্তরে অন্তরে?

তুমি তো একমাত্র বন্ধু চাল থেকে কাঁকর বেছে দাও। ভাঙা ঘরের চালায় খড় গুঁজে দাও। নন্দিনী নন্দিনী সাড়া দাও আজ।

তোমাদের সিঁড়িটা পুরনো হলেও আমার চেনা। যেমন তুমি চেনা জন্মের পর জন্ম।

সেই জন্মের কাছে কান্না হাসির খেলা । ধারাবাহিক।

তুমি ভালো থেকো নন্দিনী।
আজ আমি যদি সিঁড়ি ভাঙতে না পারি, তোমার নিঃশ্বাস থেকে আজ নিসর্গ। নির্মলতা। আমি নিয়ে যাবো আমার ঝুলিতে।তুমি দেখতেই পাবে না তোমার ঐশ্বর্য।


--------১৭ আষাঢ় ১৪২৯
-------২----৭----২০২২
--------নির্মল হালদার







ছবি : সংগৃহীত














কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ