বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

শ্যাওলাকে ধরতে গেলে আবেগ থাকে না

শ্যাওলাকে ধরতে গেলে আবেগ থাকে না
--------------------------------------------------


কী যে লিখবো!

খুব গরম করছে এই কথা  লেখারও কোনো অর্থ নেই। খুব ঠান্ডা লাগলে বেশ লাগতো এখন,
এই কথা বলারও কোনো মানে নেই।

এই ভরদুপুরে  পুকুরের কাছে দাঁড়িয়ে যদি বলে উঠি-----বাহ! চমৎকার পদ্ম ফুটেছে।


সেও কি মানায়? তবে মানিয়ে যেতে পারে আমি যদি ঝুপ্পির হাতের রান্না লাউ চচ্চড়ি খেয়ে
বলি----আহা কী খেলাম কী খেলাম!
মানিয়ে যাবে।

বছরের অনেকগুলো দিন ঝুপ্পির হাতি বাগানের বাড়িতে আমি। দিনরাত্রি।

অনেক কথা। রাগ দুঃখ অভিমান
ঝুপ্পির কাছে সমর্পণ করি। আমার কান্নাও আমি  সমর্পন করি। 

এক নদীর কাছে সমর্পণ ছাড়া
কিইবা করার থাকে! অথবা নদীতে বয়ে যেতে হয়। সেই বয়ে যেতে যেতে আর অন্য কিছু  আঁকড়ে ধরতে নেই।

বয়ে যেতে যেতে কোনো আতঙ্কে শ্যাওলাকেও  ধরতে গেলে  আবেগটা থাকে না। যদিও আবেগ সবসময় একমুখী থাকে না। কখনো নুড়িপাথর ধরে ফেলে। কখনো ভেসে-যাওয়া গাছের ডাল ধরে ফেলে। কিংবা বড় পাথরে ধাক্কা খায়।

রক্তপাত ঘটে।

এই রক্তপাতের কাছে জড়ো হয়ে থাকে নক্ষত্রেরা। আলো জ্বালিয়ে আলো জ্বালিয়ে  দেখে নিতে চায়, ব্যথা কতদূর?

ব্যথার কোনো সীমানা নেই। সে ঝুপ্পির কাছে গিয়ে থেমে যেতে পারে। সে পর্নার কাছে গিয়ে থেমে যেতে পারে। সে কিরাতের কাছে গিয়ে থেমে যেতেও পারে। থেমে যেতেই পারে এ বিষয়ে জোর গলায় কিছু বলাও যায় না। হঠাৎ করে যখন, পালকের জন্য মন কেমন করে,তখন কাকে কি বলবো? গোধূলির কাছে দাঁড়িয়ে যখন চিৎকার করতে ইচ্ছে করে---বাপি বাপি-----তখন আবেগ তো হাওয়ায় হাওয়ায়
বয়ে চলে।

কিন্তু রোজ রোজ তো কলকাতার হাতিবাগানে থাকা যায় না। থাকতে হয় নিজস্ব এক ঠিকানায়।

পুরুলিয়াতে ঘরে ফিরে আসি।

মন উড়ু উড়ু করে।

তখন মোবাইল নেই। তখন টেলিফোন বুথ।তখন দিন ও রাত্রি টেলিফোন বুথে 
পয়সা দিয়ে ফোন চালাচালি।

যান্ত্রিক তার কত আর কথা নিয়ে যাবে! মানুষের কথা যে আকাশ সমুদ্র ছাড়িয়ে যায়। 

সমস্ত চরাচর জুড়ে কথা আর কথা। কোনো কথা সুখের। কোনো কথা দুঃখ-বেদনার। কোনো কথা শুধুই কথা সমুদ্র ফেনার মত। কোনো কথা ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে বালুতটে।

হাতিবাগানের কথাগুলি মর্মে এসে আমাকে কাঁদায়। আমার কথা গুলি হাতিবাগানে গিয়ে  দাঁড়িয়ে পড়ে বলতে থাকে-------
দোষ কারো নয় গো মা
আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা।

প্রেম নয় অর্থ নয় সচ্ছলতা নয় শুধু একটা ঠাঁই। 
একটা ঠাঁই পেতেই দীর্ঘশ্বাস জোরে জোরে পড়ে। কোথায় বাঁচবো? কার কাছে বাঁচবো?

মানুষের কাছে তো একটাই আর্তি --------বাঁচতে চাই। বাঁচতে চাই। এবং এই বাঁচার জন্য কত রকমের আপোষ। যা যন্ত্রণাদায়ক।

শিকড় ছেঁড়া মানুষের মতোই 
প্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা একা হেঁটে চলা সেও তো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া।

ঝুপ্পিও এই সমাজ জীবনে স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে গিয়ে  রাস্তায় পড়ে গেছে। নিজে পড়ে গিয়েও অন্যকে হাত ধরে উঠতে সাহায্য করেছে।

আজকাল আর দেখা হয় না। কথা হয় কখনো-সখনো। দুরভাষে।
কোথাও যেন কেউ মৃদুস্বরে উচ্চারণ করে-----সেই ভালো সেই ভালো , আমারে না হয় না জানো।


--------১৪ আষাঢ় ১৪২৯
-------২৯----৬----১৪২৯
-------নির্মল হালদার








ছবি : সংগৃহীত









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ