রবিবার, ২২ মে, ২০২২

আমার নিশান ওঠে পুব দিকে



প্রতিশ্রুতি
------------

ঘরে ঘরে জল নেই তো কী হয়েছে?

ঘরে ঘরে মরীচিকা

মরীচিকার কাঁপন।






সস্তা--সহজ
---------------

আকাশের তারা গুনতে পারা
কঠিন হলেও,
গাছের পাতা গুনতে পারা 
কঠিন হলেও,
মানুষের গণনা খুবই সহজ।

মানুষ খুবই সস্তা,

ভোটের লাইনে দাঁড়ায়।


----২২ বৈশাখ ১৪২৯
----৬---৫----২০২২






ভিখারি
----------

ভিখারির থালা ছেঁদা হয়ে গেলেও
ভিখারি চেয়ে আছে,
একটি শালিক আরেকটি শালিকের মুখে
আহার বাটছে।






খিদে
-------

চাল নেই ডাল নেই
মাটি খুঁড়েও নেই একটিও ওল

আকাশেও খিদের আগুন জ্বলে।






আলগা
----------

নিশান ওড়ানো বাঁশের খুঁটি
নড়বড়ে হয়ে গেছে ।
তলে তলে ইঁদুর কাটছে মাটি।






প্রেম
-------

কলসির কানা ছুঁড়ে মারলেও
দুহাত তুলে প্রেম।

আকাশ নেমে আসছে ধূলায়

ধূলা মাখিবরে ধূলা মাখাবোরে।


------২৩ বৈশাখ ১৪২৯
-------৭----৫----২০২২





সু সভ্যতা
------------

১.
বল্লমের ফলায় রোদ এসে পড়লেও
জল-জঙ্গল- জমি গেছে, শুধু
একটি তীর ধনুক।

বালকের কাঁধে একটি তীর ধনুক।


২.
পাখির পিছনে ছুটে যেতে যেতে
তীর লাগে সভ্যতার বুকে।

সভ্যতা, নির্লজ্জ। বেহায়া।






উন্নয়ন
---------

উচ্ছেদের পর উচ্ছেদ

উন্নয়ন।

কার উন্নয়ন?

কাকের সংখ্যা ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ।






জতুগৃহ
-----------

নিঃশ্বাস বইবে। নিঃশ্বাস বইবে না।

বাতাস বইবে। বাতাস বইবে না।

দিনের পর দিন
দেশলাই বাক্সের ভিতরে শুয়ে থাকা।


-------২৪ বৈশাখ ১৪২৯
-------৮----৫----২০২২





মহাভারত
-------------

চাকা বসে যায়

গরু টানতে পারে না গাড়ি।

চাকা বসে যায়

গাড়োয়ান টেনে তুলতে পারে না।

সূর্য ডুবছে।






রামায়ণ
-----------

পাহাড় ধ্বসে ধ্বসে পড়ছে

গাছ ধ্বসে ধ্বসে পড়ছে

শুধু শক্তিশেল।





তিতুমির
-----------

মাথার চুল বিক্রি হয়ে গেলেও
সোজা করতে হবে নুয়ে পড়া মাথা।
সোজা করতে হবে নতুন করে,

বাঁশেরকেল্লা।


-------২৫ বৈশাখ ১৪২৯
------৯----৫-----২০২২





অভিমুন্য বধ
-----------------

তীরের ফলার মতো ধারালো
যৌবনের শিরদাঁড়া।

যৌবনকে ঘিরে ধরো।

যৌবনকে হত্যা করো।






খাল
-------

মাটি আর মাটি নেই শুধু খাল।

লাঙ্গল নামালেও উঠে আসবে না সীতা।






কবচ কুণ্ডল
---------------

চাল--ডাল নেই তো কী হয়েছে?

শিশুর গলায় ঝুলছে মাদুলি।

ভিখারি চাইছে মাদুলি।

ভিখারিও যে ভগবান।


--------২৬ বৈশাখ ১৪২৯
-------১০----৫----২০২২





ভেড়া
--------

ভেড়া চলেছে

ভেড়া চলেছে ভেড়ার পিছনে।

এবড়োখেবড়ো রাস্তা, খালডোব

কোথায় মাঠ কোথায় সূর্যোদয়?

ভেড়া চলেছে

ভেড়া চলেছে ভেড়ার পিছনে।





ঠিকানা
----------

সারাদিন মুখ বুজে থাকা
সারাদিন অন্ধকার।

আমাদের একটাই ঠিকানা----

শুয়োরের খোঁয়াড়।






উৎস
--------

বন্দুক চেয়ে আছে মানুষের দিকে

মানুষ চেয়ে আছে বন্দুকের দিকে।

মানুষ জানে বন্দুক নয়,

জনগণ শক্তির উৎস।


--------২৭ বৈশাখ ১৪২৯
-------১১---৫----২০২২






বলি
------

ছাগলছানা লাফায়

ছাগলছানা খেলা করে

ছাগলছানা আদর মাখে

ছাগলছানা মুখে টানে কচি পাতা

কাছে দূরে হাঁড়িকাঠ।






কসাইখানা
--------------

আমাদের ছাল চামড়া তুলে নিয়েছে,

আমরা ঝুলছি,

সারি সারি।

মাছির সঙ্গে উড়ছে কসাইয়ের হাসি।






আছে
--------

নুন আছে তো তেল নেই
চাল আছে তো ডাল নেই
মাঠে শাক তুলতে গিয়ে
শুধু ঘাস

কুলুঙ্গিতে আধার কার্ড।


------২৮ বৈশাখ ১৪২৯
------১২----৫----২০২২





ভারতবর্ষ
------------

বোঝা টানতে টানতে
গাধা আরো গাধা হয়ে উঠছে।

গাধা আরো গাধা হয়ে উঠছে,

গাধার পিঠে ভারতবর্ষ।





বাঁ --হাত
-----------

মাটি খুঁড়েও জল নেই
চুরি হয়ে গেছে।
মাটি খুঁড়েও কয়লা নেই
চুরি হয়ে গেছে।

সকলেই জানে,
বাঁ হাতেও থাপ্পড় মারতে পারে
চাঁদ সওদাগরের বাংলা।


------৩০ বৈশাখ ১৪২৯
------১৪-----৫----২০২২





মহান ভারত
---------------
তীরের ফলায় জল উঠলেও
চুঁয়া খুঁড়ে বালি আর বালি।

মরীচিকা মুখ





দ্রৌপদী
----------

চুলের মুঠি ধরতে যাবে?

বেঁধে ফেলবে চুল

খোঁপা করবে

অপমান করতে দেবে না।





মহাপ্রস্থান
-------------

এদিক-ওদিক শুঁকে বেড়ায়।
উপর দিকে চেয়ে থাকে।
লেজের ঝাপটা মারলেও
বৃষ্টি পড়ে না।
লেজের ঝাপটা মারলেও
মন্ডা মিঠাই নেই।

মুখ ঝামটা খেয়েও দাঁড়িয়ে থাকে পথে

একলা মানুষের সঙ্গি হবে।


-------৩১ বৈশাখ ১৪২৯
-------১৫-----৫-----২০২২




ভালোবাসা
--------------

গোলাপকে চুম্বন করতে গেলে
ভয় করে।
দেশকে চুম্বন করার মতোই , কাঁটা লাগে।

রক্তাক্ত হই।





স্বদেশ
--------

বাবলা গাছে হলুদ ফুল।
বাবলা গাছে কাঁটা।

ফুল ছুঁতে গেলেই কাঁটা লাগে
আমার স্বাধীনতায়।





পোকা
---------

নদীতে বালি বয়ে গেলেও
নর্দমায় জল বইবে, সারাদিন।
পোকার জন্ম হবে, পোকা উঠে আসবে,

রাস্তায় রাস্তায়।


------১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------১৬----৫----২০২২




মূল
------

সমুদ্র থেকে নুন নিয়ে পালাচ্ছে।
নদী থেকে জল নিয়ে পালাচ্ছে।
মাটি থেকে বীজ নিয়ে পালাচ্ছে।
আকাশ থেকে মেঘ নিয়ে পালাচ্ছে।

পাখির পাখা থেকে হাওয়া নিয়ে পালাচ্ছে।

বাঁশ থেকে বাঁশের মূল নিয়ে পালাচ্ছে।

আমি বাঁ হাতের উল্টোপিঠে 
কপালের ঘাম মুছছি।





 পীড়ন
---------

বাঁ-- হাত দিয়ে আড়াল করলেও রোদ আসবে

পাখির পাখা আড়াল করতে পারেনি 
কোনো অত্যাচার।





একাকী
-----------

যা কিছু সহজ তাইতো সুন্দর

যা কিছু সহজ তাইতো মাটি থেকে উঠে এসে,

আমাদের সীতা।

অশোকবনে একা।


------২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------১৭ ----৫ ---২০২২




খোঁয়াড়
-----------

এখানে বাতাস এসেও কথা বলে না।
এখানে ঝড় বৃষ্টি এসেও কথা বলে না।
এখানে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অন্ধকার।

এ যে শুয়োরের খোঁয়াড়।





হরণ
-------
হরণ হয়ে যাচ্ছে নিম গাছ।
হরণ হয়ে যাচ্ছে পিঁপড়ের ডিম।
হরণ হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙের ছাতা।

হরণ হয়ে যাচ্ছে পুকুর

হরণ হয়ে যাচ্ছে জলাজমির সাপ

চারদিকেই তো মায়া হরিণের ডাক।





নিষেধ রেখা
----------------

একটার পর একটা রেখা

পালক ছবি আঁকবে

পালকের রঙ-পেন্সিল পালকের খেলা।

আরো কত খেলা চলে

আরো কত রেখা

আমার নাগরিকতাকে খর্ব করে।


-----৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-----১৮----৫----২০২২





জোগান
-----------

রেশন কার্ড খেয়ে ফেলেছে ইঁদুরে

রেশন দোকানে নেই খাদ্যের জোগান।





খড়গ
--------

যতই ঝোলাও
রাঙা মুলো গাজর
আমিও ঝোলাতে পারি,

 নক্ষত্রের মত খড়্গ ।


-----৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-----১৯---৫---২০২২




পাশা খেলা
----------------

গোল একটি দল

গাছ তলায়।

কে ভাই? কে দাদা?

দুপুর রোদের মতো গনগনে এক হাসি

এই জুয়া খেলায়।




দ্রৌপদীর শাড়ি
--------------------

নগ্নতাকে আড়াল করে সূর্যের কিরণ

নগ্নতাকে আড়াল করে চাঁদের কিরণ

অপমান সইবে না,

এই চরাচর।


------৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------২১----৫----২০২২



পাশা খেলা
----------------

গোল একটি দল

গাছ তলায়।

কে ভাই? কে দাদা?

দুপুর রোদের মতো গনগনে এক হাসি

এই জুয়া খেলায়।




দ্রৌপদীর শাড়ি
--------------------

নগ্নতাকে আড়াল করে সূর্যের কিরণ

নগ্নতাকে আড়াল করে চাঁদের কিরণ

অপমান সইবে না,

এই চরাচর।


------৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------২১----৫----২০২২
------নির্মল হালদার








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ