সোমবার, ১৬ মে, ২০২২

অসম্ভবের পথে হেঁটে



অসম্ভবের পথে হেঁটে
---------------------------

আমরা দেবো বোবাকে ধ্বনি
খোঁড়াকে দ্রুত ছন্দ----------
এই কণ্ঠস্বর যখন শুনি , মনে হয়
এক বিশ্বাসের কাছে দাঁড়িয়ে আছি।

আমরা হেরে যাবো না।

এই দেশ এই পৃথিবী আমাদের।
এই প্রত্যয় বিপুলের কবিতা ও গান থেকে পাই।

বিপুলের কবিতা ও গান সত্তরের
গণআন্দোলনে এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল।
তাঁর গানের সঙ্গে অনুশ্রী ছিলেন।
আজও আছেন। এ কারণেই দুজনের পায়ের শব্দে এক সাহস জন্মায়।

অসম্ভবের পথে হেঁটে যেতে  আর
কোনো ভয় থাকে না।

সেদিনও আমার ভয় ছিল না
বিপুল ও স্বপ্না(অনুশ্রী) র বন্ধুতার
কাছে যাওয়ার জন্য।

তখন সন্তোষপুর শুনশান করে।
বিপুলদের বাড়ির কাছেই জলা জমি। ধানক্ষেত।
আমি টের পেয়েছিলাম, এই বন্ধুদের কাছেই ধানের শীষ।

মাথা উঁচু করে থাকে।

বিপুল কতটা কবিতার দিকে কতটা গানের দিকে বিশ্লেষণ না করে একটা কথা বলা যায়,
বিপুল মানুষের দিকে।

মানুষের দিকে যারা, শোষিত ও শাসিত মানুষের দিকে যারা, তাদের বামপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার একটা প্রয়াস দেখা যায়।
এ যে ভুল একটি অপচেষ্টা এই বাংলায় এখনও। তার ফল ভোগ করছি শিবির ভাগ করে করে।

আমি শিবিরের দিকে না তাকিয়ে
এক সকালে বিপুল  ও স্বপ্নার ডেরায় হাজির হয়েছিলাম।

আমাদের বন্ধুত্বের নিবিড়তা
গড়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি।
কবিতা ও গানে গানে রাত হয়ে গেছে ভোর।

বিপুলের কাছ থেকেই শুনেছি
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনেক অনেক কবিতা। শুনেছি, তাঁর জীবনের কথা।
মানুষের পাশে থেকে তাঁর লড়াইয়ের কথা।

আমাদের কবি বন্ধু বীতশোক ভট্টাচার্য্য আমাকে জানিয়েছিল
যে, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বীতশোকের বাড়ি থেকে তার কবিতার বই নিয়ে কলকাতায়
বিভিন্ন জনকে বিক্রি করেছিলেন।
তিনি বলতেন, শুধু কবিতা পড়লে হবে না। তরুণ কবির বই কিনতে হবে।

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত ক'জন আছেন আজ? যিনি  "কবি" তকমাটা ফেলে দিয়ে মিছিলে হেঁটেছেন?

মানুষের জন্য হেঁটেছেন?

বিপুল তো সেই মিছিলকে প্রসারিত করে দু'হাতে ডেকেছেন সবাইকে। মিছিলের মুখ হয়ে উঠেছে সমাজ-সংসারের মুখ।

দুঃখের আঁধার রাতে যে মুখ থেকে আলো পাই। আনন্দ বেদনার মতো আলো পাই।

বিপুল ও স্বপ্না মানবতাবাদী
কাজের জন্য পুরস্কার পেলেও
আমি তাদের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছি আমি তাদের বন্ধু।

বন্ধুতার সুবাদে তারা বারবার ছুটে এসেছেন পুরুলিয়া। গান করেছেন হৃদয় খুলে।

একবার তো আমার কাছের এক তরুণের প্রাইভেট স্কুলে তাদের নিয়ে গেছলাম-------- সুজানডি।
সেইবার তাদের নিয়ে গেছলাম
পিঁড়রা। চাকিরবন। লোহারশোল
ইত্যাদি অনেক অজ গাঁ।

মনে মনে বলতে চেয়েছিলাম------
পুরুলিয়ার গ্রাম না দেখলে পুরুলিয়ার মানুষ দেখা যাবে না।
পুরুলিয়ার ভূ-প্রকৃতি, চাষবাস দেখা যাবে না। রুখু মাটির রূপ দেখা যাবে না।

সেইবার সুজানডির স্কুলেই খাওয়া-দাওয়া করেছিলাম সবাই।
অন্য একটা গ্রামের চায়ের দোকানে কিছুক্ষণ আড্ডা হয়েছিল নানা জনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে।

মাটিতে পা রেখে চলতেই হয়।

বিপুলের কবিতার বই ১১ টি ।

নিয়মিত কবিতা চর্চায় থাকেন।
নিজেদের গানের মধ্যে থাকেন।
পাখি ও পাতা থেকে সুর খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলে চলে যান। মরুভূমির দেশেও চলে গেছেন।

একবার স্বপ্নার মা-বাবার সন্তোষপুরের বাড়িতে পোস্ত মেশানো কচু বাটা খেয়েছিলাম। এবং শুঁটকি মাছের রান্না।
সেই আন্তরিকতা আমাদের শিল্পের চেয়েও অনেক উঁচু।

দীর্ঘ দীর্ঘ দিন বিপুল ও স্বপ্নার
সন্তোষপুরের বাড়িতে যাওয়া হয় না। কিন্তু মনে মনে তাদের কাছেই থাকি। আড্ডা হয়। 

আজ ১ লা জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ 
ইংরেজি--১৬ মে ২০২২
সোমবার  ----আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা।

অসংখ্য আদিবাসী মানুষের সঙ্গে
আমি আশা করতে পারি কোনো
একজন কবি অযোধ্যায় চলেছে 
শিকার উৎসবে।

কোনো জন্তু-জানোয়ার নেই
আছে শুধু পাহাড়। জঙ্গল। মহুল 
ও  হাঁড়িয়া। আছে বিপুলের মত কবির স্বপ্ন।

আছে অজস্র মানুষের পায়ের শব্দ। তার তাপ। তার উজ্জ্বলতা।
আছে মানুষের গায়ে গা লাগিয়ে
বেঁচে থাকার সেই উচ্চারণ------

একাকী নই যে আমি, একা কেউ নয়।



-------১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
------১৬----৫----২০২২
------নির্মল হালদার




















ছবি : সন্দীপ কুমার
















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ