রবিবার, ১৫ মে, ২০২২

তাল গাছের হৃদয়




তাল গাছের হৃদয়
----------------------

ওই যে একলা তালগাছ------
আমাকে ডাকছে।
ওই যে তাল গাছের সারি------
আমাকে ডাকছে।

তালগাছের তো ছায়া নেই।

তালগাছের হৃদয়?

আছে আছে। আছে বলেই তো
তালগাছে মন বাঁধতে হয়। ছোট্ট
হাঁড়ির মত মন। বাঁধতে বাঁধতেই
দিন মাস বছর।

বছরের পর বছর কেটে যাবে।
কেটে যাবেই। তবেই তো বিন্দু বিন্দু রস।


সহজ রস। সহজিয়া মন।

যদিও
তালগাছের চেহারা কঠিন খুব।
মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সবসময়।

কোনোদিন কোথাও  ঝুঁকবে না।

তাল গাছের পাশে শাল গাছ মানায় না। সখি হয়ে খেজুর গাছ থাকতে পারে। থাকেও।

রুখু মাটি থেকে প্রাণশক্তি টেনে টেনে দাঁড়িয়ে থাকে। রোদে রোদে। ঝড়-বৃষ্টিতে।

এই তো আমাকে আবার ডাকছে।

একলা তালগাছ। সারি সারি তালগাছ------আমাকে ডাকছে।

ছায়া নেই।

ধূ-ধূ করছে নির্জনতা।  

কখনো কখনো নির্জনতাও
বিষ হয়ে ওঠে। আমার ভয় করে।

কখনো কখনো মানুষও নির্জন হয়ে দাঁড়ায়। তখন তার কাছে যেতেও ভয় করে আমার।

নির্জনতাও গিলে ফেলে।

আমি আমার ভয় থেকে ছুটতে থাকি পিছন দিকে। অথচ পিছন দিকে কেউ নেই।
আলো নেই অন্ধকারও নেই। শুধু
ভয় আর ভয়।

তালগাছের ছায়া নেই অথচ তাল গাছের পাতা থেকে পাখা।

হাতপাখা।

বাংলার কুটির শিল্প।

তালগাছের হাওয়া মালুম হয় না।
তাল পাখার হাওয়া মালুম করতে পারি বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠতে।

ওই যে তাল গাছের পিছনে লাল হয়ে উঠেছে আকাশ , এইযে তালগাছের ঋজুতা  ----------প্রকৃতির এক রূপ , আমাকে নাস্তানাবুদ করে। আমি 
এখানেও ভয় পেয়ে ছুটতে থাকি।

কোথায় যাবো?

গাছে এসেছে ফল। পেকে উঠতে উঠতে ভাদ্র মাস। তার আগে বর্ষার জলে সারা বছরের স্নান করবে তালগাছ।

তাল গাছের সঙ্গে আমিও কি স্নান করবো? স্নানেও আমার আতঙ্ক।
স্নানে স্বপ্ন ধুয়ে যায়।

তাল কুড়াতে হয় পাড়তে হয় না।

যে কোনো ফল মাটি থেকে কুড়ালে মাটির গন্ধটা  পাওয়া যাবে। জন্মের গন্ধটা পাওয়া যাবে। অনেক কান্নার রস পাওয়া যাবে।

কান্নার রস তালের রস।

জন্ম-জন্মান্তরের রস।

একবার ডুবলে  হৃদয় দেখা যাবে।

ওই যে  ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে আছে
একটা তালগাছ , তার সঙ্গে আমার আগেও দেখা হয়েছে। নতুন করে আবার এই এখানে।

আমার কাছে এক আঁজলা জল 
না চেয়েও দাঁড়িয়ে আছে বন্ধুর মত। এই সেই বন্ধু প্রত্যাশা করে না।
ঈশ্বরের কাছেও নিবেদন করতে হয়। নত হতে হয়। কিন্তু গাছের কাছে কোনো নিবেদন না করেও
গাছ আপন হয়ে ওঠে।

ভালোবাসা হয়ে ওঠে।

ভালোবাসা, তাল গাছের মাথায়
সূর্য ওঠা ভোর।


--------৩১ বৈশাখ ১৪২৯
------১৫-----৫-----২০২২
------নির্মল হালদার















ছবি : অভিজিৎ মাজী













কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ