মানুষকে ছুঁয়ে মানুষের গান
---------------------------------------
একা মানুষের গান সমস্ত মানুষের গান হয়ে উঠছে। একা মানুষের দীপ্ত কণ্ঠস্বর সমস্ত মানুষের কণ্ঠে ঢেউ তুলছে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান
কখনো মাটির বানী থেকে আকাশের বাণী। এবং মানুষকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান ধুলো ওড়ায়। হাওয়া ওড়ায়।
রক্তে রক্তের স্পন্দন।
তিনি যখন গাইছেন----------
লড়াই করো লড়াই করো----
তখন জেগে উঠছে ঘুমিয়ে থাকা প্রাণ। অথবা নড়েচড়ে উঠছে শিরদাঁড়া।
তাঁর কন্ঠেইতো----
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
প্রিয়, ফুল খেলবার সময় নয় অদ্য----
৪০ দশকে লেখা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই কবিতাটি
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে
নতুন এক বার্তা বহন করে।
মানুষ যখন চারদিকের নীতিহীনতা আদর্শ হীনতায় নিজেকে নিয়ে মশগুল, তখন
প্রতুলদার সঙ্গে আমিও গলা মেলাই----প্রিয় , ফুল খেলবার সময় নয় অদ্য।
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা।
অনেক অনেক দিন হয়ে গেল
প্রতুলদার সঙ্গে দেখা হয়নি।
কবে আলাপ হয়েছিল? কোথায়?
প্রতুলদা তখন ইউ বি আইয়ের কলকাতার প্রধান দপ্তরে।
আমি চলে গেছি।
তিনি প্রাণখোলা মানুষ। হৈ হৈ করে আহ্বান করলেন। শুরু হয়ে গেল আড্ডা। তারই ফাঁকে তিনি খোঁজ করেছেন-----আমি কোথায় খাবো?
অনেকদিন হয়েছে প্রতুলদার অফিস ক্যান্টিনে দুপুরের আহার করেছি। সামনে তিনি বসে থেকেছেন। কোনো অসুবিধে যেন না হয়। তিনি কথাও বলে যাচ্ছেন। যেনবা ভাতের সঙ্গে সুস্বাদু এক একটি পদ।
তাঁর রঙ্গ রসিকতাও সুরে সুরে জড়ানো।
ওজনে কম যায় না।
গেয়ে উঠছেন নতুন গান। অথবা
শোনাচ্ছেন গানের কথা।
পুরুলিয়াতে একবার তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। অনেক গান করেছিলেন।
আফসোস হয় রেকর্ড করে রাখা হয়নি।
কয়েকবার সৈকতের সৃজন উৎসবে এসেছেন। সৃজন উৎসব নিয়ে গানও বেঁধেছেন প্রতুলদা।
গানের পাশাপাশি তিনি ছড়া রচনা করেন। প্রায় নিয়মিত। আমার সঙ্গে যোগাযোগটাই শুধু অনিয়মিত।
মানুষটার সঙ্গে কথা বললে, একটা আকাশ দেখা যায়। নিজের দুঃখ কষ্ট বেদনার উপশম হয়। কেননা তাঁর কথাই তো তাঁর সুর।
লতিয়ে লতিয়ে ওঠে।
শুশ্রূষা জাগায়।
কখনো কখনো মরচে পড়া অনুভূতিতে ঘা মারে। তখনই
হাওয়া এসে ঘরে ঢুকে আমাকে বলে :
আমি বাংলার গান গাই
আমি বাংলায় গান গাই
বিশ্ব বাঙালির সঙ্গে আমিও
গেয়ে উঠি :
আমি বাংলার গান গাই
আমি বাংলায় গান গাই
কেবল হাতের তালি হয়ে ওঠে তাল বাদ্য। সঙ্গে মানুষের কন্ঠ প্রতুলদাকে সহযোগিতা করে।
রবীন্দ্রসঙ্গীতেও প্রতুলদা একক একটি কণ্ঠস্বর। যা অনেকের কাছেই অচেনা। অজানা অবশ্যই।
তাঁকে দিয়ে একবার রবীন্দ্র সংগীত বিষয়ে আমি একটি প্রবন্ধ লিখিয়েছিলাম।
তিনি বিষ্ণু দে সুভাষ মুখোপাধ্যায় অরুণ মিত্র বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় অমিতাভ দাশগুপ্ত শঙ্খ ঘোষ ইত্যাদি কবিদের কবিতায় সুরারোপ করেছেন।
আরো সুরারোপ করেছেন সমীর রায় সাগর চক্রবর্তী পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় নারায়ণ মুখোপাধ্যায় এবং নির্মল হালদারের কবিতায়।
যে বার বই মেলায় আগুন লাগলো
পুড়ে ছাই হয়ে গেছলো আমার নতুন কবিতার বই।
আমাকে নিয়ে গান বেঁধেছিলেন প্রতুলদা।
তাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি
অনেক অনুবাদ কবিতারও সুর।
প্রতুলদা যখন সমীর রায়ের কবিতা থেকে ---আলু বেচো ছোলা বেচো, বেচো মটর দানা
করতে করতে শেষে বলছেন---
কলম বেচোনা---। তখন জনম দুঃখী মাকে মনে পড়ে।
আমার মা আমাকে একটি কলম এনে দিয়েছিল।
-------২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-------১৭----৫----২০২২
------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন