অরণি বসু মানেই সকাল সন্ধ্যার শুভেচ্ছা। সেই যৌবনে আমার মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, অরণিদা আমাদের বাড়ির ছোড়দা। যে আমার দুষ্টুমিতে আছে। ভালবাসাতেও আছে।
৭০ দশকের প্রথমদিকে কবিতা চর্চায় যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে অরণি বসু একজন। আর তাই, অরণিদা। পার্থদা। নিশীথদা।
রণজিৎদা ইত্যাদি।
অরণিদা বরাবর আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। এবং আড়াল থেকেই লালন করেন
নিজের কবিতার চেয়ে বেশি
অন্যান্যদের কবিতা।
অরণিদার "উলুখড় "কাগজে
আমার কবিতা দেখা গেছে বারবার।
" উলুখড় " মাঝখানে অনেক দিনের বিরতি দিয়ে যখন প্রকাশিত হলো তখন আমার গদ্য।
বই মেলার মাঠে আমাকে ডেকে বললেন----তোমার দিদিদের নিয়ে লেখা চাই।
তার আগে অরণিদার সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। নিয়মিত যে চিঠির আদানপ্রদান হয়েছে
এমনটা নয়। সম্প্রতিকালে মোবাইলের রমরমা হলেও ধারাবাহিক যোগাযোগ নেই।
অথচ আমার অন্তরে অরণি বসু।
আমি যে তার কবিতা প্রতিদিন পড়ছি এই ঘটনা তো ঘটে না।
অবশ্য কার ই বা কবিতা পড়ি?
রোজ?
অরণিদা শেষ কবে ফোন করেছেন আমার মনে নেই। আর আমি শেষ কবে ফোন করেছি,
মনে নেই।
খুব প্রয়োজন ছাড়া আমি কখনো ফোন করিনি তাকে। প্রয়োজন বলতে------অরণিদা কেমন আছেন?
অরণিদা আমাকে গদ্য লেখার জন্য -------বিশেষ করে স্মৃতিকথা লেখার জন্য অনেকবার বলেছেন। পূর্বে প্রকাশিত গদ্য গুলি নিয়ে বই করতেও বলেছেন।
এরকম বন্ধুপ্রতিম দাদা আজকের দিনে বিরল।
যখন এই সময় জটিল থেকে জটিলতর ধাঁধায় ঘুরছে। যখন
এই সময় সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে উঠছে-----তখন
অরণিদা নিজের চেনা বৃত্তের
কল্যাণে এগিয়ে আসছে।
যৌবনের সেই শুরুর দিকে তাকে কেউ বলেছিলেন, এবার একটা বই করো। উনি উত্তরে জানিয়েছিলেন-------একটা বইয়ের চেয়ে বেশি দরকারি আমার ঘরে একটা টিউ কল।
আগে পরিবার তারপরে কবিতার বই।
এই হলো অরণিদা।তাকে ঘরের
ছোড়দা বলতেই হবে। যে মুদিখানা থেকে ডাক্তার-খানা সহজেই যেতে পারে।
কোনো বিজ্ঞাপন না করেই।
মণীন্দ্র গুপ্ত দেবারতি মিত্রর সঙ্গে
তার সখ্য এই কারণেই যে তাদের
সুখ দুঃখে ও সম্পাদনার কাজে,
বইয়ের কাজে অরণিদা পাশে থেকেছেন। সব সময়।
বড় কাগজের ধারেকাছে যেমন
গেলেন না তেমনি ছোট কাগজের
কলহ কোলাহলেও অরণিদা নেই।
আজও নেই।
৭০ দশক থেকে লেখালেখি শুরু করেও তার কবিতার বই মাত্র ছ'টি। কারণ, তার অনীহা। এবং লেখেনও কম।
সৈকত কে নিয়ে বনগাঁ থেকে
একটি সংকলন হবে। সহযোগিতা করতে এগিয়ে গেছেন অরণিদা।
তার সংগ্রহে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও কবিতার বই। এই মানুষের সান্নিধ্যে আসাও এক ধরনের সৎকর্ম।
কিন্তু আমরা তো সৎকর্ম থেকে
দূরেই থাকি। এই কারণেই নিজের ব্যথা বেদনা নিজের ভেতরেই
গুমরে গুমরে মরে।
বাংলা কবিতাও শিকড় ছিন্ন হয়ে
যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উঠেছে আজ। আজ অরণিদার মত মানুষের প্রয়োজন খুব। যারা
কবিতার পাশে আছে , মানুষের পাশেও আছে।
পৃথ্বী বসুর মতো নবীন এক সম্পাদক এবং কবিকেও সহযোগিতা করে থাকেন অরণিদা।এই অরণিদাকে সংবর্ধিত করেনি কেউ। পুরস্কৃত করেনি কেউ।
এই দেশে রাজার ঘরে রাজা পুরস্কৃত হয়। এখানে নীরব থাকতে হয়। অথবা পথে পথে সোচ্চার হলে মাওবাদী নামে চিহ্নিত হতে হয়।
এই দুর্ভাগা দেশে যারা আড়ালে আড়ালে শিল্পচর্চা করছেন, উর্বরা করছেন বাংলার ভূমি তাদের প্রতি আমার কুর্নিশ।
অরণিদা ,
আপনার জন্য ব্যয় করার মত
আমার বেশি কিছু নেই,
মার্জনা অবশ্যই করবেন। এবং
আপনার মুখের দিকে চেয়ে আজও ভুলে যাবো না---------আমার এক ছোড়দা আছে, যে নিভৃত নীরব এক কবি।
--------৩০ বৈশাখ ১৪২৯
-------১৪-----৫-----২০২২
-------নির্মল হালদার
----------------------------------------
অরণি বসুর কবিতার বই------
শুভেচ্ছা সফর
লঘু মুহূর্ত
ভাঙ্গা অক্ষরে রামধনু
খেলা চলে
চ্যুত পল্লবের হাসি
শ্রেষ্ঠ কবিতা
----------------------
গদ্যের বই :
নির্জন মোমবাতি, একজন
ছবি : সন্দীপ কুমার









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন