মেরুদন্ডই কবিতা রচনা করে
------------------------------------
বনগাঁ। সীমান্ত শহর।
ঘটনার পর ঘটনা থাকে এই শহরে। ঘটনার পর ঘটনা ঘটে যায় প্রতিদিন। এই শহরে। এবং এই শহরেই বিভাস রায়চৌধুরী।
কবি বিভাস রায়চৌধুরী।
উদ্বাস্তু শিবির থেকে উঠে আসা একজন
কবি বিভাস রায়চৌধুরী।
নানা রকম অসহায়তা, দারিদ্রর সঙ্গে লড়াই করতে করতে বিভাসের কবিতা জীবন। বিভাসের বনগাঁ নাট্য চর্চা কেন্দ্র।
বনগাঁ থেকে লোকাল ট্রেনে শিয়ালদা কলকাতা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি। জীবিকার জন্য লড়াই। অস্তিত্বের জন্য লড়াই।
বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে
বিভাস সকলের লড়াইয়ের অংশীদার হয়ে ওঠে। সংগঠক হয়ে ওঠে।
প্রতি মাসের পত্রিকা "কবিতা আশ্রম" এখন একটি প্রতিষ্ঠান। একটি প্রকাশন।
এই "কবিতা আশ্রম" বাংলা কবিতার বিচিত্র মুখে আলো ফেলতে ফেলতে শহর থেকে গ্রাম।
কত অচেনাকে চিনতে চিনতে কত রকম কবিতার সঙ্গে পরিচয়।
এই পরিচয়ের দায়িত্বে কবিতা আশ্রম। আড়ালে থাকা বিভাস রায়চৌধুরী।
স্পষ্ট কথা বলতে ভালোবাসে সে।
প্রচার সর্বস্ব জায়গায় আপোষ না করেও হেঁটে যাওয়া যায় অনেক দূর, প্রমান বিভাস রায়চৌধুরী।
গ্রাম বাংলার তরুণদের দাঁড়াবার জায়গা "কবিতা আশ্রম"।
যা সম্ভব হয়েছে বিভাসের জন্য।
আমার সঙ্গে বিভাসের কত দিনের আলাপ? আমি কতবার গেছি বনগাঁ? তার সঙ্গে ফোনে কতবার কথা বলি?
নিয়মিত কোনো সংযোগ নেই।
তবে আমি জানি, তার তরফ থেকে আমার প্রতি ভালবাসা আছে । ধারাবাহিক।
যখনই ফোনে কথা হয় কোনো না কোনোভাবে রসিকতা চলে আসে।
দুজনেই হাসাহাসি করি। মনে হয় এই তো আত্মীয়তা।
এই আত্মীয়তার জোরেই ধানের চারা ফেলা হয়। স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ধান রোয়া হচ্ছে। ধান হবেও। ধান কাটার শব্দে সবাই এগিয়ে যাবে নবান্নের দিকে।
বিভাস রায়চৌধুরী ৯০ দশকের কবি না চিরকালীন কবি, এই তর্ক বিতর্ক তাত্ত্বিকদের জন্য থাকুক।
আমি শুধু বলতে পারি, আমি জানিও সে খিদের কথাও বলতে পারে। সে শুধু অন্ত্যমিলের কথা বলে খিদেকে ভুলিয়ে দেয় না।
কেন না, সে জানে বিড়ি বাঁধা শ্রমিকের দুরবস্থা। সে জানে, উদ্বাস্তু কলোনির মেঘ ও রৌদ্র।
পঁচিশে বৈশাখের জন্মদিন জানে বলেই, বিভাস লিখতে পেরেছে, বাইশে শ্রাবণের মৃত্যু।
সে এও জানে, নানা দিকে নানা গাছ থাকলেও একটি চন্ডালিকা গাছ অপাংক্তেয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার ধারে। যে পথিকের আঁজলায় ভরে দিতে পারে জল।
তৃষ্ণার জল।
তৃষ্ণা যে কত ভয়াবহ একজন সংবেদনশীল মানুষ জানে। কবি যে জানবেই, আমি অন্তত জোর গলায় বলতে পারি না।
আগে তো মানুষ তারপরে কবি।
বিভাস রায়চৌধুরী প্রথমে একজন মানুষ। সে জানে মরীচিকার খেলা। মরীচিকার সঙ্গে লড়াইও জানে। সে সচেতন। আত্মমর্যাদাকে নিজের জায়গায় রেখে এগিয়ে যেতে পারে। এগিয়ে যায় নিজের সৃষ্টির দিকে।
আমার মুঠিতে "লাজুক ভাতের দানা "। আমি তৃপ্তির সঙ্গে আমার দুপুর কাটাই। শুধু কি একটা দুপর?
অনেক দিনরাত্রি চলে যায়
বিভাসের লেখার সঙ্গে। তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের কাছে আমিও রেখে যাই আমার ধ্বনি-------
বাংলা কবিতা এগিয়ে চলুক তার নিজস্ব পথে।
কোনো মিডিয়ার নির্দেশে নয়।
কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির নির্দেশে নয়। কবিতার পথ আপোষহীন পথ।
আপোষহীনতা বেঁচে থাকার একমাত্র মেরুদন্ড।আর মেরুদণ্ডই কবিতা রচনা করে।
বিভাসকেও রচনা করে।
------১৮ আষাঢ় ১৪২৯
------৩---৭---২০২২
-----নির্মল হালদার
ছবি : সংগৃহীত






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন