সোমবার, ৪ জুলাই, ২০২২

ধুতরা ফুলের কাছে



ধুতরা ফুলের কাছে
------------------------

কার কাছে যে যাই?

গোলাপ আমার পছন্দ নয়। জবা পছন্দ হলেও জবার সঙ্গে দেখতে পাই লাল টকটকে জিভ।

আমার ভয় করে।

কল্কে ফুলের কাছে যেতে পারি।

কোথায় যে আছে দেখতে পাইনে।

অনেক অনেক দিন আগে আমার নিকটে ছিল একটা কল্কে গাছ একটা টগর গাছ।
অপরাজিতাও ছিল আমার কাছে। আজও আছে সকালবেলায়।

গাঁদা ফুল আমার খুব প্রিয়। কাছে যেতে পারি না। কদম ফুলের কাছেই বা কবে গেলাম!

অনেক সময় ছাতিম ফুলের গন্ধ
আমাকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে যায়। অথচ ছাতিম ফুলের কাছে যেতে পারি না।

কার কাছেই বা যাই?

খুব ইচ্ছে করে কালীদার সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটাই। মনে মনে সাধ জাগে , অনির্বাণের সঙ্গে কথা বলি। পুরনো অনির্বানের সঙ্গে আজকের অনির্বাণ কতটা তফাৎ দেখতে ইচ্ছে করে।

ফুল কী পাল্টায়?

আমার সেই ছোটবেলার পানা ফুল কেমন আছে? পেয়ারার ফুলগুলি দুলে উঠছে কোথাও
আমি যাবোনা?

স্বপন চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বললে মনে কোথাও একটা শান্তি আসে।
কবে যাবো কাছে?

নিকটে যাবার বেলা বয়ে যায়।

গৌ চৌয়ের সঙ্গে শেষ কবে আড্ডা দিয়েছি আজ আর মনে নেই।

স্মৃতিরা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। শাল ফুলের মুখ মনে পড়ছে না।

শাল ফুল ছড়ানো রাস্তা আমার মনে পড়ছে না।

ফুল কী সমস্ত ফুলকে মনে রাখে?

রজনীগন্ধা কোনোদিন যাবেনা
পুটুশ ফুলের কাছে। জারুল কি যাবে নয়নতারার কাছে?

প্রসূনের সঙ্গে ভোজন করতে যেতে হবেই। সঙ্গে অবশ্যই চাই তপনদার রসিকতা।

মনে পড়ছে অমিতাভ মন্ডলকে। এই এত বছরে তার কাছে পাইনা ধারাবাহিক কোনো কথা।
অনেক কাল পরে হেমন্তের দেখা পেলেও কি আর কথা হয়! কেবল দুই প্রান্তে জেগে থাকে নীরব উষ্ণতা।

একটা সময় ছিল পার্থ দার সঙ্গে দিন কাটিয়েছি। আজকাল তো একরামের সাড়াশব্দ পাইনা।

পার্থ দেব কে মনে পড়ে?

বলতে পারি, সুজিতের ঘরে আমি ছিলাম অহরহ। সেই সুজিতের কাছে যেতে ইচ্ছে করে।অরণিদা, অরণিদা মনের কাছে থাকলেও
হাওড়া অনেক দূর।

সিউড়িও ছ-সাত ঘন্টার রাস্তা। বাবলি দি ও প্রভাত দার কাছে যেতেই পারবোনা।

একটা চড়ুই পাখি এসে আমাকে প্রতিদিন বলে, পিঠে বসে যাও।
যেখানে যেতে চাও নিয়ে যাবো।
একবার বললাম, লাল্টুর কাছে নিয়ে যাবে?
সে না করে দিলো।

এক সময় তো ঝুপ্পির কাছে কথায় কথায় ফুটিয়েছি চন্দ্রমল্লিকা।
অর্পিতার সঙ্গে কবে দেখা হয়েছে? পুপুর সঙ্গে কথা চালাচালিও নেই।

নীরবতা এক রকমের আতঙ্ক। বাবলা গাছের মতো। হলুদ ফুল ফোটালেও ছুঁতে পারিনা। এত কাঁটা।

মানুষও ফুল। নানা রঙের ফুল।
কেউ রাস্তার ধারে। কেউ পুকুর পাড়ে। কেউ মাঠে। অনেকে আছে নদীর কাছে থাকতেই ভালবাসে।

কেউ পাহাড়ি ফুল। কেউ জংলি ফুল। কার কাছে যাই? প্রতিটি গ্রামও ফুটে ওঠা ফুল।

ঘাস ফুলের কাছে কে আর নতজানু হই! শালুক ফুলের প্রেমে পড়লেও পদ্মফুল দেখলেই মনে হয় ,অষ্টমীর পুজো।

পর্ণার সঙ্গে কথা বিনিময় হলেও কাছে যাওয়া হয় না। এই এক জন্মে এই আক্ষেপ কার কাছেই বা রাখবো!
ঘেঁটু ফুলের বাজার দর নেই।
কাছে যেতে পারলেই সৌন্দর্য।

সৌন্দর্যের সীমা পরিসীমা নেই।

বাপি কাছে থাকলেও তার কাছে পৌছোতে পারিনা।

পুকুরের মৃদু ঢেউ নবজাতকের হাসি। কাছে যাই। আদর করতে ইচ্ছে করে। কোলে তুলতে সাহস পাইনা।

সৌম্য অনেক দূর থেকেও অনেক কাছে থাকে। অথচ মুখোমুখি হইনা।

এসব কি নির্দিষ্ট?

শিউলি ফুলের টুপটাপ আমার কাছে বিষণ্ণতা নিয়ে এলেও আমি যাই শিউলির কাছে।

শিউলি তো পারিজাত। স্বর্গেও ফোটে।

আমি স্বর্গে যাবোনা।

আমি পালকের কাছে থেকে যাবো। অতনু সজলের কাছে থেকে যাবো।

অতনু সজলের কাছে মাধবীলতা নেই। শুধু ঝিলমের কাছে। শুধু কান্নার কাছে।

কান্না কি ফুল ফোটায়?

কান্নার কাছে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারিনা। সেই ইপিল কোথায়? অনির্বাণ দাস?

অপূর্ব সাহা যে কী করে? সন্দীপ কুমার? দুলিয়ার সঙ্গে উচ্ছ্বলতা থাকে। আমি কবে আর পেলাম?
রামানুজ পুঁথি পড়লেও পলাশ গাছটি চেনে।

পলাশ রঙের প্রতিমা ঘুরে বেড়ালেও কাছে আসবেনা। ধুতরা
ফুল অবহেলা করলেও আমার সঙ্গে আছে।
আমিও সঙ্গে আছি। সঙ্গে সঙ্গে আছি। এ তো আমার ঘর দুয়ারের ফুল। ধুতরা ফলের কাছে আমি দাঁড়াই না। ফলের ভিতরে বীজ, বীজ নয়। ও যে বিষ।

বেলি ফুলের সুবাস গ্রীষ্ম বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে আমি ছুটে যাই।


------১৯ আষাঢ় ১৪২৯
------৪---৭---২০২২
------নির্মল হালদার













ছবি : বাপি কর্মকার










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ