বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২

জামবাটি থেকে উছলে পড়া মাড়ভাত



জামবাটি থেকে উছলে পড়া মাড়ভাত
-----------------------------------------------

কথায় কথায় একদিন অসিত আমাকে বলছিল------মাহাতরা
সত্যি সত্যিই খুব গরিব। ঘরে শুধু ধানচাল থাকলে হয় না। টাকা পয়সা লাগেই।

অসিতের এই এত কম বয়সে এই বোধ আমাকে অবাক করেছিল।
আরো বলেছিল আমাকে , লেখাপড়া করতে গেলে আজকাল অনেক টাকা লাগে তা আমার বাবার নেই।

অসিতের কাছ থেকে এইসব কথাবার্তা শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি বিষণ্ণ হয়ে গেছলাম।

আমি তো কারোর ভরসার জায়গা হতে পারি না। ভালোবাসার জায়গা হলে হতেও পারি। এবং সেই ভালোবাসা বন্ধুতার।

আমাদের অসমবয়সী বন্ধুত্বের দিকে অনেকে আঙুল তুললেও
আমার কিছু বলার নেই। কারণ,
আমি জানি বন্ধুত্বের কোনো বয়স নেই। আর তাই অসিত মিলন কিরাত সহজেই আমার বন্ধু হয়ে যায়।

অসিতদের গ্রাম সুজানডি আমি কবে গেছলাম? সুজানডি গেলেও
অসিতদের বাড়ি যাইনি।

একটা ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে-----অসিতদের ঘরের চালায়
একটা লাউলত উঠছে।চালার মাঝে দেখাও যাচ্ছে একটা শিশু লাউ।
ওদের উঠোনে লাফাচ্ছে মুরগি ছানা। কোলাহল করতে করতে
হাঁসগুলি চলে যায় দুয়ার ছাড়িয়ে
রাস্তায়।
ওরা বাঁধের দিকে যাবে।
গোয়াল থেকে চলে যাচ্ছে গাই-গরু-বাছুর।ছাগল--ভেড়ার দল ও চলে যায় মাঠের দিকে।

রাঁধনা শালে কেউ নেই।হাঁড়িতে
ফুটছে চাল।

আমি ডাকছি-----অসিত অসিত
ভাতের গন্ধে আমার খিদে পেয়ে গেছে। তোর মাকে বল, আমাকে যেন খেতে দেয়।

আমার আঁকা ছবি এই অব্দি।
তারপর জানি না। তারপর জানিনা, অসিতের বাড়ি কবে যাবো।

অসিত আমাকে যদি নিয়েও যায়
তারপর যদি মাঝ রাস্তাতে ছেড়ে দেয়?
আমি একা একা কোথায় যাবো?

পিচাশিতে শ্রীনাথ আছে। যেতে পারবো তাদের বাড়ি? অথবা আরেকটা কাজ করতেই পারি,
কাঁসাই নদীতে নেমে বালির ঘর
গড়বো।

ডাকাকেঁদু এখনো যেতে পারিনি।
পিঁড়রা গেলেও মিলনদের ঘরে
এক মুঠো খেতে পারলাম কই?

তাদের সঙ্গ আমার মন ভরে দেয় অবশ্যই। আর মন ভরলে তো কিছুই চাইনা।

আপেল গাছের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ নেই। কালোআলো ছেলেরাই আমার আপেল আঙুর
পেয়ারা। আমার কুল।কুসুম।কচড়া।
ওদের হাসি আমার কাছে জামবাটি থেকে উছলে পড়া মাড়ভাত।

অসিত চুপচাপ। কিছুই না বলে আমার দিকে চেয়ে আছে।

আমিও ওর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে একটা অশথ পাতা কুড়িয়ে বাঁশি বাজাই।

অশথ পাতা কোত্থেকে উড়ে এসেছে? গাছটি কোথায়?
অসিত কোত্থেকে উড়ে এসেছে?
বীজটি কোথায়?

অসিতের বাবার সঙ্গে আলাপ করবো। তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চেয়ে ফেলবো----
অসিতদের ঘরের এক মুঠো ধান।

প্রতিটি ধান অসিত। প্রতিটি ধান
অসিতের শ্বাস-প্রশ্বাস। আমার সঙ্গে থাকবে।

অসিতের শ্বাস-প্রশ্বাস ধরে ধরে
অসিতের কাছেই আমি ঘুরে বেড়াবো।


-------২১ আষাঢ় ১৪২৯
------৬----৭----২০২২
-----নির্মল হালদার





















ছবি : সংগৃহীত













কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ