রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২

পর্যটন বাণিজ্য



পর্যটন বাণিজ্য
-----------------------

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে পর্যটন শিল্পে পুরুলিয়া জেলা জায়গা পেয়ে গেছে। পুরুলিয়ার মানুষের কাছে সুসংবাদ হলেও পুরুলিয়ার জনগণের কোনো লাভ নেই।

পুরুলিয়ার কোনো সাধারণ নাগরিক অযোধ্যা বেড়াতে যাবো বললে, দু একদিন ছুটি কাটিয়ে আসবার চিন্তা করলে, তাকে অযোধ্যা থেকে ফিরে আসতে হবেই। কারণ, সরকারি সহায়তায় যে সমস্ত হোটেল লজ রিসর্ট অযোধ্যার মাথায় গজিয়ে উঠেছে সেইসব জায়গায় থাকা সম্ভব হবে না। ভাড়া অনেক।প্রতিদিনের ভাড়া অনেক। তারপরে খাওয়া-দাওয়ার খরচ আলাদা।

আমার অনেক আত্মীয় বন্ধু অযোধ্যায় থাকার জন্য গিয়েও ফিরে এসেছে। তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, প্রতিদিন মাথা পিছু খরচ শুধু থাকার জন্য ২০০০ টাকা।

অধিকাংশ হোটেলগুলি তৈরি করেছে বহিরাগতরা। যাদের সঙ্গে পুরুলিয়ার শিকড়ের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ আমরা শুনি , গণমাধ্যমে প্রচার হয়েও থাকে, আমাদের সরকার হোম স্টে করার জন্য গ্রামের মানুষদের সহযোগিতা করছে। 

তা যদি হতো, গ্রামের মানুষ দু এক পয়সা লাভের মুখ দেখতে পেতো অবশ্যই। কিন্তু তার বদলে ছবিটা অন্যরকম। স্পষ্ট হয়ে গেছে, হোটেল ব্যবসায়ীরা টুরিস্টদের (যাদের হাতে পয়সা আছে অনেক) কথা চিন্তা করে কেবলমাত্র ব্যবসা করছে। পাশাপাশি হোটেল ব্যবসা থেকে নোংরা হচ্ছে চারপাশ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

অযোধ্যা জঙ্গলের ভিতরেও (এখনো যেটুকু জঙ্গল বেঁচে আছে) বনভোজন, টুরিস্টদের খানাপিনা থেকেও  নোংরা হয়ে যাচ্ছে অযোধ্যা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি।

পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে সভা সমিতি হলেও কাগজে কাগজে লেখালেখি হলেও বোকা বাক্স থেকেও গাল ভরা বাণী উচ্চারণ হলেও সচেতনতার কোনো চিহ্ন দেখতে পাই না  কোথাও।

দুঃখের বিষয়, ফুটিয়ারি জলাধারের পাড় ঘেঁষে সুউচ্চ
বাড়ি বা রিসর্ট সম্প্রতিকালেই তৈরি হয়েছে। একটা হোটেল নয় সারি সারি অনেক হোটেল ফুটিয়ারির সৌন্দর্যে তৈরি করেছে ক্ষত। দ্বারকেশ্বর নদীর কাছাকাছিও গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্পের আরেক বাণিজ্য কেন্দ্র।

কেউ বেড়াতে গেলে সেই রিসর্টে যদি খাওয়া-দাওয়ার কথা ভাবে, তাহলে তাকে মাথাপিছু সাড়ে ৩০০ টাকা দিতে হবে।

এই রিসর্ট করেছে একজন বহিরাগত। বহিরাগত সুভদ্র মানুষটি একবারও চিন্তা করে দেখেননি, পুরুলিয়া একটি গরিব জেলা। এখানের মানুষও বেড়াতে আসতে পারে। দেখতে পারে, কতটা উন্নতি হল পুরুলিয়ার। 

শুধু পুরুলিয়ার কথা বলছি কেন, পশ্চিম বঙ্গের যে কোনো জেলা থেকেই যে কোনো মানুষ বেড়াতে আসতেই পারে এবং এসে হোটেলের ভাড়া বা খরচ দেখে পালিয়ে যেতেও সময় লাগবে না তাদের এ বিষয়ে কি হোটেল মালিকরা চিন্তা করেছেন? হোটেল মালিকরা শুধু চিন্তা করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাওয়ালা টুরিস্টদের বিনোদন। সেই বিনোদনের আরেকটি অংশ, আদিবাসীদের নাচ গান টুরিস্টদের দেখিয়ে লাভজনক বাণিজ্য।

পর্যটন শিল্পের নামে যে ধরনের বাণিজ্য তার সঙ্গে রাজনীতির খেলা যা চলছে, পুরুলিয়ার জনগণ একদিন ধরে ফেলবেই। উৎখাত করবেই,  কুৎসিত ব্যবসা।

এ বিষয়ে সরকার কতটা এগিয়ে আসবে আমাদের জানা নেই। আমরা জানি, মাটির বাড়ি দেখিয়ে খড়ের চালা দেখিয়ে, পলাশ ফুল দেখিয়ে, ছো টুসু দেখিয়ে টুরিস্টদের ডেকে এনে লোভের বাণিজ্য । যা পুরুলিয়ার জনগণের কাছে অশ্লীল থেকে অশ্লীলতম। এক শোষণ ছাড়া কিছুই নয়।


-----নির্মল হালদার 
-----১৬---১০---২০২২




পর্যটন বাণিজ্য---২

পুরুলিয়ার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীও হোটেলের কারবার করছে। সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই ব্যবসায়ীরাও পুরুলিয়ার মানুষের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তা করে না। পুরুলিয়ার মানুষও যেতে পারে বেড়াতে, ব্যবসায়ীদের মাথায় থাকে না। তারা পুরুলিয়ার বাইরের টুরিস্টদের কথাই চিন্তা করে বেশি। যারা এলে মুনাফা হয় অনেক।

এক্ষেত্রে পুরুলিয়ার বাইরে থেকে যারা ব্যবসা করতে এসেছে, তারা যেমন দোষী, তেমনিভাবে পুরুলিয়ার ব্যবসায়ীরাও একই দোষে দোষী।

দুপুরে ভাত খেতে হলে মাথাপিছু খরচ যদি সাড়ে তিনশো টাকা হয়, পাশাপাশি ১০০ টাকা খরচেও একজন খেতে পারবে এই ব্যবস্থাও থাকা দরকার।

হোটেলে একটা ঘরের জন্যে যদি ২০০০ টাকা লাগে, পাশাপাশি কেন থাকবে না ৮০০ টাকায় একটা ঘর?

যাদের পয়সা আছে তাদেরই কেবল বেড়াবার মতো মন আছে, এই ধারণা যদি হয় ব্যবসায়ীদের, তবে তা ভুল।

আমার এক বন্ধু পুষ্পেন সরকার তার দুর্গাপুরের বন্ধুদের নিয়ে অযোধ্যা বেড়াবার জন্য পরিকল্পনা করেও আসতে পারেনি। শুধুমাত্র অনেক বেশি খরচের ভয়ে। একইভাবে পঞ্চকোট বেড়াবার কথা মনে এলে, একজন সাধারন মানুষকে ভাবতে হয়, পকেটে কত টাকা আছে।

সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র গুলি যদি বড়লোকদের জন্য হয়, তাহলে পুরুলিয়ার মানুষ  , যে কোনো জায়গার যে কোনো সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে বেড়ানো থেকে।

একজন সাধারণ চাকুরে, একজন সাধারণ ব্যবসায়ীর ইচ্ছে হতেই পারে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাবে পুরুলিয়ার কোথাও। তারপর খোঁজ খবর করে দেখতে পায়, হোটেল, খাওয়া দাওয়া, বেড়ানো সমস্ত নাগালের বাইরে। এ বিষয়ে প্রশাসন নীরব।

পুরুলিয়ার মানুষ হয়েও পুরুলিয়াতে বেড়াতে হলে
আরেক জটিলতা, গাড়ি। শহর পুরুলিয়াতে গাড়ি আছে দেদার তার ভাড়াও দেদার। আমার ভাইপো তার পরিবার নিয়ে শীত এলেই অযোধ্যা যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এবং প্রতিবছরই তাদের বেড়াবার মতো একটি মন ভেঙে পড়ে হুড়মুড় করে। হতাশা থেকে তার ছেলেমেয়েদের মুখও কালো হয়ে যায়।
শুধু অযোধ্যা নয় গড় পঞ্চকোট বড়ন্তি রঞ্জনডি যেতে হলে দশবার ভাবতে হবে, টাকার জন্য। সম্প্রতি পুরুলিয়ার পর্যটন মানচিত্রে পাহাড়পুর নামে একটি কেন্দ্র চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে পুরুলিয়ার পর্যটন যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, ভয় করছে , কোনোদিন হয়তো তিলাবনি পাহাড় কেটে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। ভয় করছে, সিঁদুর পুরের পাহাড় কেটে পর্যটন কেন্দ্র হলে সিঁদুর পুরের নির্জন সৌন্দর্যের ক্ষতি হয়ে যাবে সম্পূর্ণ। এরই মধ্যে একদল মুনাফাখোর
তিলাবনি  পাহাড় কেটে দামি পাথর খোঁজার পরিকল্পনা করছিল। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের ফলে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

টুরিস্টদের কাছে বাগমুন্ডির কাছে পাখি পাহাড় একটি দ্রষ্টব্য স্থান। বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন এক চিত্রকর প্রশাসনিক সহায়তায়  একটি পাহাড় খোদাই করে পাখি পাহাড় করতে চেয়েছিল। শেষ অব্দি তা না হয়ে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে কিছু ক্ষত। সেই ক্ষত থেকে রক্তপাত। নিঃশব্দে। যে শোনার শুনতে পায়।

জয়চন্ডী পাহাড়ের দিকে চোখ পড়লেই দেখতে পাওয়া যায়, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বিভিন্ন রকম কটেজ। আমাদের শহরের বন্ধু নাট্য কর্মী সুদিন অধিকারীর ভাষায়-----টুরিস্টরা কটেজ থেকে হাত বাড়িয়ে পাহাড় ছোঁবে। তাদের মনোবাসনার কথা চিন্তা করেই, সরকারের এই পরিকল্পনা। যা কুৎসিত।

আমার আগের প্রতিবেদনে হোমস্টের কথা বলেছি, সেও এখন দালাল চক্রের আওতায়।

পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত জায়গা গুলি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ও বিখ্যাত সে সমস্ত জায়গার আদিবাসীদের ঘর নিয়ে হোমস্টের নামে রমরমিয়ে চলছে দালাল চক্রের ব্যবসা। 

ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে নিশ্চয়ই। ব্যবসা -বাণিজ্য আমাদের জীবনেরই এক দিক। বাঁচার এক রাস্তা। সেই ব্যবসা বাণিজ্য মানুষের ক্ষতি করে নয়। কেননা,
মানুষকে ডিঙিয়ে  কোনো কিছুই গড়ে উঠতে পারে না।

পুরুলিয়া শুধু মহুয়ার দেশ নয়। পুরুলিয়া শুধু পলাশের দেশ নয়। পুরুলিয়া শুধু ছো--টুসু--ভাদুর দেশ নয়। পুরুলিয়া মানে মানুষের দেশ। সেইসব মানুষদের জানার জন্য কজন টুরিস্ট আসেন, আমার জানা নেই।

আমার আরেক বন্ধু বিবেক সেন বলছিল, কতশত বছর ধরে এই দেশের তীর্থস্থান গুলি, দ্রষ্টব্য স্থানগুলি  নষ্ট হয়ে গেছে শুধুমাত্র সরকারি পরিকল্পনার অভাবে।

নষ্ট হবে না, আমাদের সরকার যদি পর্যটন কেন্দ্র থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে হোটেল ও রিসর্ট করার আইনি ব্যবস্থা করে। তাহলে, পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলির ক্ষতি হবে না। টুরিস্টরা দেখেই চলে যাবে নিজের নিজের হোটেলে।

ছবিটা একদম উল্টো, অযোধ্যার মাথার উপরেই সারি সারি ছোট বড় হোটেল। গড় পঞ্চকোট শেষ হয়ে আসছে। জয়চন্ডী পাহাড়ে আর পাহাড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ হবে বলে মনে হয় না। 

মুনাফাখোর যারা তারা বন বিভাগের জমিও দখল করে হোটেল ব্যবসা ফাঁদার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সব সময়। যেভাবে ফুটিয়ারিও শেষ হয়ে গেল।

প্রশাসনিক মদতে   আমার দেশের অনেক জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শেষ হয়ে যাবেই, তার কু লক্ষণ
দেখতে পাচ্ছি সর্বত্র।

-----১ লা কার্তিক ১৪২৯
----১৯---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার











সোমজিৎকে লেখা পত্র



দুপুরের স্তব্ধতা - ৬
----------------------------

সোমজিৎ
তোমার চিঠি আমাকে খুশি করেছে খুব। এরকম চিঠি আরো লিখবে, এই আশা।

আমার কাছেও আশা করে ছাতিম গাছ । আমি যেন তার ছায়া জড়িয়ে প্রতিদিন তাকে ভালবাসতে পারি।

কোনো কোনোদিন ভুলে গেলে
আবহকে ডেকে নিয়ে ছাতিমের কাছে যাই। রাত হলেও যাই।
তখন ছাতিমের ছায়া আরো বেশি রহস্যময়।

আবহ বলছিল---ছাতিমতলাতেই বসতে হবে কেন? অন্য গাছের তলায় বসলে আমরা কি তৃপ্তি পাবোনা?

আমি নীরব ছিলাম।

ছাতিম তলা থেকে আমি এক নিঃশ্বাস শুনতে পাই। যা আবহ
শুনতে পাবে না।

আবহের কথা তোমাকে বলা হয়নি। সে শান্তিনিকেতনে পড়তে এসে পাশ করে শান্তিনিকেতনেই থেকে গেছে। এখন সে ঘর ভাড়া করে থাকে ভুবন ডাঙ্গার পিছন দিকে। আর্থিক রোজগার বলতে,
ছেলে পড়ানো। সেই টাকাও যে সব সময় পায় এমনটা নয়। তার আরেকটা মারাত্মক নেশা, সাঁওতাল ছেলেমেয়েদের ডেকে ডেকে , লেখাপড়া শেখানো।

আবহর ছবি আঁকা মানে ছেলে মেয়েদের আঁকা শেখানো। নিজের জন্য অন্যকে দেখানোর জন্য সে আর ছবি আঁকে না।

আমি একবার তাকে কয়েকটা পোস্ট কার্ড দিয়েছিলাম ছবি এঁকে দেবার জন্য। এক মাস পরেও সে আমাকে শূন্য পোস্টকার্ড ফেরৎ
দিয়েছিল।

আমি তাকে আবার পোস্ট কার্ড গুলি দিয়ে বলেছিলাম--তোর কাছেই থাক। হয়তো কখনো
কোনো রাত্রিবেলায় কারোর উদ্দেশ্যে উড়িয়ে দিবি।
আমি দেখতে না পেলেও শুনতে পাবো উড়ে যাওয়ার শব্দ।

আবহর করুণ সুন্দর মুখ দেখলেই
তুমিও বিষণ্ণ হয়ে উঠবে। দেখো----

ইতি----
নির্মল হালদার
৬ আশ্বিন ১৪২৯
২৩---৯---২০২২
শুক্রবার
দুপুর--২--৮





পদ্ম ফুটছে শালুক ফুটছে---৮
--------------------------------------------

সোমজিৎ
শারোদৎসবের দিনে প্রথম আলাপ তুলিকার সঙ্গে। সে সেই প্রথম এসেছে বিশ্বভারতীতে।

তার গায়ের রঙ কালো। আমি প্রথম দিনেই তাকে বলেছিলাম,
তুইতো কৃষ্ণ কলি।
সে হাসতে হাসতে গানটা আমাকে শুনিয়ে ছিল দু' কলি।

প্রথম আলাপ। অথচ তার মধ্যে
কোনো আড়ষ্টতা ছিল না। আমরা
শারোদৎসবে না থেকে চলে গেছলাম চেনা চত্বরের বাইরে।

আমাদের গায়ে এসে পড়ছিল
শারদীয় আকাশের আলো।
আমি ছুঁতে গিয়ে কৃষ্ণকলির
হাত ধরেছিলাম।

সে চাইলো, বাদাম খেতে।

সেদিন কত রাত হয়েছিল মনে নেই। সে শুধু বলছিল, আর নয় আর নয়। হোস্টেলের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
আমি তাকে বলতে পারিনি,
আমার যে দুয়ার খুলে গেছে-----

ইতি---
নির্মল হালদার
৮ আশ্বিন ১৪২৯
মহালয়া
২৫---৯---২০২২
রবিবার
সকাল---৮--১৭













রামানুজকে লেখা পত্র



এসো হাওয়া,আসন পেতেছি----১৭
--------------------------------------------------
রামানুজ
আজ এই পুরুলিয়া জেলাতে
জিতা ষষ্ঠি।জিতা ষষ্ঠি কি এবং কেন এই প্রশ্ন যখন জেগে উঠলো,
উত্তর খুঁজতে খুঁজতে জেনেছি,
জিমুত বাহন থেকে মানভূম তথা পুরুলিয়ার ভাষায় জিতা।
জিতা ষষ্ঠী বা অষ্টমী।

তোমাকে আর কি বলবো, তুমি তো জানো, আমাদের এই বঙ্গে অথবা পুরুলিয়াতে বারো মাস
নানাভাবে নানা রূপে শস্যের বন্দনা করা হয়। নিম্নবর্গের মানুষ যেমন করে থাকে তেমনি বাঙালি মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তরাও করে থাকে।
আমি এখানে লোক ইতিহাস বলতে চাইছি না। বরং বলতে চাই,
গ্রামের এক বুড়ি মা রাস্তার ধারে বিক্রি করছে মাটির শেয়াল শকুনি।
এই জিতা ষষ্ঠীতে ব্রত উদযাপন শেষ হবে শেয়াল শকুনি জলে ভাসিয়ে।

আমার মনে পড়ছে, ছোটবেলায়
মা-জেঠি--খুড়িরা ছোটদের বলতো---তোরা যা শিয়াল শকুনি বানাবি---

আমরা ছোটরা খুব উৎসাহের সঙ্গে মাটি জোগাড় করে শিয়াল শকুনি গড়ে তুলেছি।

আজ তবে ছোটরা কি নেই?

যা ছিল একসময় খুশির খেলার মত পুতুল, সেই পুতুল আজ বাজারে।
তা আসুক। আমি চাইছি বুড়িমা
শেয়াল শকুনি বিক্রি করে দুটো পয়সা ঘরে নিয়ে যাক।

আজ বাজার থেকে তুমি ঘরে নিয়ে যাবে কি?

আমাদের বাজারে এখানে
শশা ১০০ টাকা কেজি। কারণ
এই জিতা ষষ্ঠিতে শশা লাগে।

এই দিনে আমি যদি শসার বীজ হয়ে উঠি?

ইতি----
৩১ ভাদ্র ১৪২৯
১৭--৯--২০২২
শনিবার
সকাল--৮--৫৮
নির্মল হালদার





এসো হাওয়া,আসন পেতেছি --৫৭

রামানুজ
আমার চিঠিতে ইতিহাস নেই। পুরাণ নেই। গ্রীকের ইতিহাস
ফরাসিদের ইতিহাস নিজের দেশের ইতিহাসও আমার চিঠিতে নেই। পাবেও না কখনো।

কারণ, আমি কিছুই জানিনা।

বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় যে সমস্ত শিল্প আন্দোলন হয়েছে, তাও আমার অজানা।
আমার কাছে এ বঙ্গের হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে, আমি বলতে পারবোনা।

আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা, অনুভব অনুভূতির কথা তোমাকে শোনাতে চেয়েছি। তোমাকে শোনাতে চাইছি। এইসব কথাবার্তা তোমার কাছে কখনো যদি বিরক্তিকর ঠেকে, আমাকে জানিও।

আমার সব সময় ভয় করে, আমি কারোর বিরক্তির কারণ হয়ে উঠছি না তো? কারোর কাজ নষ্ট করছি না তো?

আমার স্মৃতি কথাতে তুমি পেয়েছো লালটু ও অবনীকে। কয়েকদিন হলো, তাদেরও মনে পড়ছে খুব। এই বয়সে যদি আরেকবার দেখা হতো তাদের সঙ্গে, আমরা নিশ্চয়ই স্কুল বেলার
কাছে চলে যেতাম।

কিন্তু তারা নেই। আমার কাছে শুধু হাহাকার।

পার্বতীদি ও মাধবীদি সম্পর্কে
আর দু একটা কথা বলতে পারি,
তারা দুজনেই বিয়ে থা করেননি।
পরে কি হয়েছে না হয়েছে, আমি আর খবর রাখিনি।
দুজনেই খুব আন্তরিক ছিলেন। দুজনেই ছাত্রীদের কাছে বন্ধু হয়েই থাকতেন।

তারা কলেজে থাকতে থাকতেই,
ক্ষমতায় এলো বাম সরকার। তখন ওই মহিলা কলেজে কোনো
ছাত্র ইউনিয়ন ছিল না।
ছোট ছোট বাম নেতার লক্ষ্য পড়লো, মাধবীদির দিকে। তার সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়লো প্রচার,
তিনি কংগ্রেস মুখী। ফলে, বামেরা
তার সম্পর্কে ছড়াতে লাগলো কুৎসা।

তারপর তারপর তিনি তো চলে গেলেন পুরুলিয়া ছেড়ে। কলকাতার অন্য এক কলেজে।

এই দেশ এই বঙ্গ কে তুমিও চেনো। এখানে প্রকৃত মানুষের ঠাঁই নেই।

আমাকেও তো মাটি কামড়ে থাকতে হয়।


----নির্মল হালদার
----২৩ আশ্বিন ১৪২৯
-----১০---১০---২০২২
----সোমবার-----বিকেল--৫



আরও পড়ুন 








কাব্যকে লেখা পত্র




অপরাজিতার আকাশে-----৩
------------------------------------------

কাব্য
আজ মনে হচ্ছে, প্রতিদিন ভালোবাসাও শিখতে হয়। যেমন
এই শরতে আকাশের কাছেও
পাঠ নিয়ে থাকি, ভালোবাসাকে
কী করে বড় করতে হয়।

তোর কাছেও শিখতে হবে , কেমন করে ফোটাবো রামধনুর সাত রঙ।
মাঠে মাঠে শিশির না পেলে, তোর কাছে চাইবো চোখের জল।

তোর চোখের জলে সূর্যের কণা।

তোর চোখের জলে আনন্দ রশ্মি।

আমি চুপি চুপি দেখেছি।

ভালোবাসার কাছে শব্দ করতে নেই। ভালোবাসা পছন্দ করে নীরবতা।

তুই তো দেখেছিস, আম জাম
গাছে গাছে নীরব থেকে প্রেম ভালবাসা জানিয়ে থাকে।

আমার কান্না কখনো কখনো শব্দ করে খুব বেশি, এ কারণেই হয়তো
ভালোবাসা জুটলো না আজও।

ইতি----
৩০ ভাদ্র ১৪২৯
১৬---৯---২০২২
শুক্রবার
বেলা--১২--১০
নির্মল হালদার





 
গোধূলির দিকে। গোধূলি মায়ার দিকে----৫
-------------------------------------------------------------

কাব্য
তোর ঘরের জানালা থেকে
অনেকগুলো গাছ দেখা যাচ্ছে।
তারা নিশ্চয়ই তোর বন্ধু।

বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলিস তো সময়ে-অসময়ে? ওরাই তো প্রকৃত বন্ধু। তোর কাছে কোনো প্রত্যাশা না করে তোকে ভালোবেসে যাবে।

আলো ও আঁধারে।

ল্যাপটপের বোতামে আঙুল থাকে
তোর। আমি চাইছি, গাছের গায়ে গায়ে তোর আঙুলের স্পর্শ থাকুক।

দুজনেরই জেগে থাকা আমি দেখতে পাবো নিশ্চিত।

তোর জানালার বাইরে যে রাস্তা গুলি চলে গেছে , তাদের সঙ্গে কথা বলবি। পেয়ে যাবি নিশ্চয়ই
নতুন নতুন ঠিকানা।

প্রেমের আধার।

সেই আধারে ধরা থাকবে তোর হৃদয়।

তোর হৃদয়ের রঙে বীরভূমের মাটি আরো লাল হয়ে উঠবে।
প্রতিদিন ‌

ইতি---
৩০ ভাদ্র ১৪২৯
১৬---৯---২০২২
শুক্রবার
বিকেল--৫--৪১
নির্মল হালদার





ভাদ্র শেষ হয়ে গেল---৬
----------------------------

কাব্য
প্রেমের শেষ নেই। চন্দ্র সূর্যের মতো অন্তরে অন্তরে জ্বলতে থাকে।

ভালোবাসতে থাকে কখনো কাঠবিড়ালির মত। কখনো
কাকের মত। কখনো বা শালিক
চড়ুইয়ের মত।

টিয়া পাখির ঠোঁটের রঙেও
আমরা আমাদের প্রেম প্রতিষ্ঠিত করি। আমরা তাল খেজুরের গলায় বাঁধি হাঁড়ি।

প্রেম চাই।

প্রেম চাই বলেও প্রশ্ন জাগে,
আমাদের সমাজ-বাস্তবতায়
প্রেম আছে তো?

মানুষেরই অত্যাচারে প্রকৃতি ধ্বংস হতে হতে ফুরিয়ে এলো। প্রযুক্তির
পীড়নে পাখিরাও ক্রমশ শেষ। নদী পাহাড় জঙ্গল ও শেষের মুখে।

সেদিন তোদের বাড়িতে অনেক গাছপালা দেখে খুশিতে ভরে উঠেছে সবাই।

এরকম একটা বাড়ি তে শান্তির হাওয়া বইতে থাকে।

তুই নিজেও তো শান্ত এক ছেলে।
যে রাজার চিঠির অপেক্ষা না করে অসংখ্য চিঠি লিখে রাখে
তার মুখের অভিব্যক্তিতে।

তোর চোখের তলার লুকানো বিষাদে আমি কবিতা লিখতে চাই।

লিখতে দিবি তো?

ইতি---
৩১ ভাদ্র ১৪২৯
১৭---৯---২০২২
শনিবার
বেলা--১০--৩৩
নির্মল হালদার





আশ্বিনে বৃষ্টির শব্দ---১২
-----------------------------------

কাব্য
দ্বিপ্রাহরিক আহার হয়েছে নিশ্চয়ই। কম্পিউটার তো
মায়ের মত ভাত ডাল করতে পারবে না।
তোর চোখ মুখ শুকনো দেখালেও বলবে না-- কীরে আজ কী হয়েছে?

কী হয়েছে আমাকেও বলবি না তুই। শাদা শঙ্খর মত হেসে বলবি,
কই কিছু নাতো!

আমি চারদিকে হাৎড়ে বেড়াবো,
কোথায় তোর মন? কোথায় আহার?

আহ্লাদ আছে কি তোর? নিজের জন্য বিনোদন?
প্রেম-ভালোবাসা করেও বিনোদন করা যায়, আমার এ কথা মানবি তো তুই?

কাকে ভালবাসিস?

ভালোবাসার জন্য কাতর হয়ে আছে ছোট বড় পাথর। কাদামাটি। গুল্মলতা। আগাছাও।

আমিও আগাছা এই সমাজে।
জল দেবেনা কেউ।

তোর কাছে জল পাবার আশায়
তোর কাছেই পায়ের শব্দ করছি।

ইতি--
৩ আশ্বিন ১৪২৯
২০--৯--২০২২
মঙ্গলবার
বেলা--৩--১৩
নির্মল হালদার








হরিতকি গর্ভের আলোয়

হরিতকি গর্ভের আলোয়
-------------------------------------




প্রেম
--------

কার সাহসে মেঘ পাড়বো
মেঘ চাষী তো আমার সঙ্গে নেই।
আমার সঙ্গে বাথান মুটরুডি
চিপিদা টাঙিদা
গ্রামের পর গ্রাম আমার সঙ্গে থাকলেও
কার সাহসে বাদাম উপড়াবো?

বাদাম চাষী তো আমার সঙ্গে নেই।

-----৩০ আশ্বিন ১৪২৯
-----১৭---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




সকাল বেলা
-------------------

সারারাতের পিপাসা

সূর্য এসে নিবারণ করে সকালের শিশিরে

বেলা হলে পুকুরে নামে নদীতে নামে
স্নানও করে।
স্নান করতে করতে ছুঁয়ে ফেলে
জলের তলে পড়ে থাকা পাথর,

মাছের গা।

সূর্যের পরশে জ্যান্ত হয়ে ওঠে নদীর কল্লোল।

-----৩১ আশ্বিন ১৪২৯
-----১৮---১০---২০২২
----নির্মল হালদার




ঝিঙে ফুল
----------------

ঝিঙে ফুলের হলুদ ছিটকে পড়ে মাটিতে

আজ ১ লা কার্তিক
হেমন্তের শুরু
ধান পেকে উঠছে ক্রমশ

ওই ধান আমার ঘরে না এলেও
ধান পাকা হাওয়া আসবে
তুমিও আসবে রজনী

আবছা হয়ে যাবে ধানক্ষেতের সবুজ

আমি অন্ধকার হাৎড়ে খুঁজে বেড়াবো
জোনাকির ওড়াউড়ি।

২:

ঝিঙে ফুলের হলুদ আমার অঙ্গে অঙ্গে

আমিও লতায় পাতায়

সারারাত আমার কাছে ছিল নক্ষত্রের নিবিড়তা
সকালবেলা শিশিরের ছ্যাঁকা,

জেগে উঠেছি।

আমাকে খুঁজতে আসবে অবনীর মা

পাতার আড়াল থেকে আমি বলে উঠবো,
এইতো আমি এইতো----

রঙের কাঙাল।

-----১ লা কার্তিক ১৪২৯
-----১৯---১০--২০২২
-----নির্মল হালদার




মালা
--------

প্রতিটি শিশির ফোঁটা গেঁথে ফেলি

প্রতিটি শিশির ফোঁটা হয়ে ওঠে
শান্ত একটি মালা

সমর্পনেই খুঁজে পেয়েছে বন্ধন মুক্তি।

-----২ কার্তিক ১৪২৯
------২০---১০---২০২২
------নির্মল হালদার




এই সকাল
----------------
উড়তে উড়তে ফড়িংয়ের পায়ে লাগলো শিশির
সূর্যের কিরণ এসে পায়ে পায়ে ওড়ে।
সরষে ফুলের রেণু গরুর পায়ে পায়ে
শিঙেও লটকে গেছে।

কে পাঠালো এই সকাল?

আমি তো লিখিনি চিঠি আজকাল আর

আমার প্রেমের প্রস্তাব, নীরবে

চাঁদের কাছে শেষ রাতে।




লিখন
----------

তুমি না এসে
আমাকে পাঠালে চাঁদ
শেষ রাতে

চাঁদের গায়ে কী লিখবো?

আমি তো কানের লতিতে লিখতে চাই
একবিন্দু বৃষ্টি

আমার অস্থিরতা।

-----৩ কার্তিক ১৪২৯
-----২১---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




কাক
--------

বাসন মাজার শব্দ হলে উড়ে আসে কাক
এঁঠোকাঁটা পড়ে থাকলে কাকের আহার।
ও বড় বউ ও ছোট বউ
কাক আমাদের কুটুম না হলেও
কাকও একটা পাখি,

ভোরের মুখ।

এই মুখের দিকে চেয়ে ফুটে উঠছে,

লঙ্কা ফুল।

------৪ কার্তিক ১৪২৯
-----২২---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার



 
এক নারীর একগুচ্ছ চুল থেকে
একটি চুল আলাদা করতেই,
একটি কালো রেখা।

যেন বা চিত্রকরের একটা টান।
পেন্সিলের টান।

এই রেখার দিকে চেয়ে
কবি রচনা করলেন একটি বিষাদের কবিতা।

হেমন্ত ঋতুর কবিতা।

-----৫ কার্তিক ১৪২৯
-----২৩---১০---২০২২
-----রাত্রি-৭---১২
-----নির্মল হালদার




নন্দিনী
-----------

হেমন্তের হিম ঝরা অন্ধকারেও মাছের খেলা

জলে জলে।

আমিও ঢেউ থেকে ঢেউ

আমিও আঁচল ছুঁতে চাই পাড় ছুঁতে চাই
আমি ডেকে উঠি: নন্দিনী নন্দিনী-----

আমার প্রতিটি ডাক হয়ে ওঠে নক্ষত্র।

---৬ কার্তিক ১৪২৯
----২৪---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




দৃশ্যের ভেতরে আরো দৃশ্য
---------------------------------------

বক এসে দাঁড়ালো নদীর পাড়ে

সূর্য এসে দাঁড়ালো নদীর পাড়ে

সূর্য তো স্নান করবে মাছ করবে শিকার

আর আমি বাবলা গাছে খুঁজবো রক্তের দাগ
বাবলা কাঁটা বিঁধেছিল আমার আঙুল
অথচ একটাও ফুল পাইনি

অবনীকে পেয়েছিলাম
চোর কাঁটার মত দাঁড়িয়ে ছিল,

নির্বাক।

-----৭ কার্তিক ১৪২৯
-----২৫---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




দ্বিপ্রহর
------------

রামানুজ একটা মন্দির পাঠালো
তার ঘন্টা ধ্বনিও শুনতে পেলাম
এই দুপুরে-----

পায়রার খিদেও শুনতে পাই।

খিদেও দেবতা এক
তার ভজনাও করি, পায়রাদের কাছে নিয়ে যাই
এক বাটি মুড়ি

দ্বিপ্রহরের রোদ স্তব্ধ হয়ে আসে।




ভালোবাসায় বেঁচে থাকা
------------------------------------

সারাদিন একটা ইশারা

একটি ইশারায় হাঁসের কোলাহল
মুরগির ডাক বাঁশ বনের হাওয়া
রাস্তা আসে রাস্তা যায়

সারাদিন একটি ইশারা

একটি ইশারায় পানকৌড়ির ডুব
গুগলি--শামুক পদ্ম বনের ডাক
মৌমাছি আসছে।

আজও রোদ আসছে

রোদ ঢুকে পড়ছে ঘরে ঘরে

গায়ের ঘাম নুনের জলে রোদ ভিজবে

আমাকে ভালোবেসে।

-----৮ কার্তিক ১৪২৯
-----২৬---১০--২০২২
-----নির্মল হালদার



 
সংসার
-----------

সংসার বলতে একটা ঘর
একটা জলের কলসি
জানালার ফাঁকফোকরে একটু আকাশ
একটা দুয়ারও আছে,

তুমি দাঁড়ালে হৃদয় দিব রাঁধিয়া।

-----৮ কার্তিক ১৪২৯
----২৬---১০---২০২২
----নির্মল হালদার




লাল-হলুদ গাঁদার আলিঙ্গনে
গোলমাল ক 'রোনা , চুপ করো।
লাল- হলুদ গাঁদার আলিঙ্গনে
সাত রঙের কিরণ

গোলমাল ক 'রোনা ,চুপ করো

রঙে রঙে বাতাসও ছুটছে

রঙিন ছুটছে

এসময় কথা ব'লোনা, এ সময়
লাল--হলুদ গাঁদার আলিঙ্গনে
ধুলোর সঙ্গে ধুলো হয়ে
আমিও চুপ

মিলনের মধু ঝরছে।

-----১০ কার্তিক ১৪২৯
----২৮--১০--২০২২
----নির্মল হালদার


                      আরও পড়ুন 








হরিতকি গর্ভের আলোয়

হরিতকি গর্ভের আলোয়
---------------------------------












ধূলি ধূসর
--------------

ওগো ও অবনীর মা
অনেক রাস্তা ঘুরে ঘুরেও
আমাকে দেখলে না।
কত গাছপালা দেখলে
আগাছাও দেখলে।

কথাও তো দেখলে
শালিকের সঙ্গে শালিকের।

তুমি চেয়ে দেখছিলে কাজল লতা পাখি
তোমার প্রিয় পাখি।

থেৎলে যাওয়া পায়ের ছাপ দেখতে দেখতেও
তুমি হেঁটে যাও,

তুমি শুনতে পাও না
তোমার পায়ের তলা থেকে ধূলি ধূসর স্বরে
তোমাকে ডাকছি, ডেকেই চলেছি,

অনন্তকাল।

----৩০ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৬---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার



স্বর
-----

গাছ মানেই তো সবুজ কণ্ঠস্বর
নদী মানেই তো বহমান, সুরেলা সুর।
আমি কাকে ধারণ করবো
তুমিও কার গলায় কথা বলবে
স্থির করে নাও।

আমি একবার শঙ্খ হয়েছিলাম
তুমি ফুঁ দাওনি।
তুমি নাড়াচাড়া করবে এই আশায়
তোমার নখে নখে মেঘ হয়েছি কতবার
তুমি নজর করোনি মেঘের ভাষা বৃষ্টির ভাষা।

সাপের কাছে আমি যাই না

আমি যাচ্ছি পাহাড়ের কাছে, যদি পাই
নীরবতার পাঠ।

-----৩১ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৭---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




অবিরাম
-------------

যে কোনো রাস্তার সঙ্গে কথা বলবো

যে কোনো  রাস্তাই ঘরে ফেরার রাস্তা

পশু পাখি কীট পতঙ্গেরও ঘর আছে

যে কোনো হৃদয় বাতাসের বাসা
যে কোনো হৃদয়ের সামনে দাঁড়াবো
কথা বলবো অবিরাম

ভালোবাসাবাসির বিরাম তো নেই।

-----২ আশ্বিন ১৪২৯
-----১৯---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




কথা
-------

আগে কথা বলবে আকাশ

তারপর কথা বলবে পাখি
তারপর গাছপালা
তারপর অবনীর মা

তারপর সকাল শুরু করে কথা বলতে

আমার কথা তার কথা

গরুর শিঙে লেগে থাকা মাটির কথা

মাটিরও জন্ম হয়েছিল

দশ মাস দশ দিন কার গর্ভে ছিল?

-----৩ আশ্বিন ১৪২৯
-----২০---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




চিহ্ন
-------

আকাশে রাত জাগা তারার দাগ
দেখতে দেখতে দেখি, অবনীর মায়ের শাড়িতে
হলুদের দাগ। মেঝেতে পায়ের দাগ

শুধু বাতাসে নেই পাখির পায়ের চিহ্ন।

---৪ আশ্বিন ১৪২৯
---২১---৯--২০২২
----নির্মল হালদার




 ১:

ফুলের কাছে ফলের কাছে
আলোর কাছে অন্ধকারের কাছে
আমার কাছেও

হাওয়া স্পর্শ রেখে যায়।

২:

ফুলে হাত দেবার আগে
একবার দেখে নাও, ফুলে ফুলে
কার স্পর্শ জেগে আছে।

৩:

এই ভোরে
কী কী ফুল চয়ন করবে
আমাকে না বললেও
আমাকে যে বলতে হবে,
জবা ফুল তুলতে যেও না।

জবা ফুলের ভিতরেই ফুটে উঠছে সূর্য।

----৭ আশ্বিন ১৪২৯
----২৪---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




তুলসি
---------

যে গাছই লাগাই তুলসি গাছ হয়ে ওঠে

ছোট ছোট হাওয়া ছোট ছোট খুশি
আমাকে ছুঁয়ে চলে যায় বাতাসে

বাতাস, সে তো অনেক উঁচু

পাখিরা নাগাল পায়, আমাকেও পেড়ে দেয়
বাতাসের রেণু।




লালন
---------

সকালের চা আমাকে দিতে দেরি করলেও
তুলসি গাছে জল দিতে দেরি করে না
অবনীর মা

তুলসী গাছের ছোট ছায়া
লালন করতে করতে
আমাকেও লালন করে অবনীর মা।

----- ৮ আশ্বিন ১৪২৯
মহালয়া
২৫---৯---২০২২
রবিবার
নির্মল হালদার




চোখ
--------

ডাক্তার বললেন,
আপনার চোখ শুকিয়ে যাচ্ছে।

শুকিয়ে যাচ্ছে!

ভয় আমাকে আঁকড়ে ধরলো।

আমার চোখের জল শুকিয়ে গেলে,
কাকেই বা কী দেবো?

চোখের জল ছাড়া আমার যে কিছুই নেই।




ফল ওয়ালা
------------------

আমার শাহরুখ
আপেল আঙুর লেবু কলা বিক্রি করে।
আমার শাহরুখ আমাকে জানায়,
ফলের বাগান আছে কোথাও

আমি যেতে পারবো না কখনো।

২:

ঘরে একটা গামছা নতুন গামছা

কাকে দেবো?
শাহরুখকে দিলে পছন্দ করবে?

রামানুজের ঠাকুমা বলে গেছে,
কাউকে গামছা দিলে তার পরমায়ু বাড়ে।

-----১০ আশ্বিন ১৪২৯
-----২৭---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




রাস্তা
-------

একটা রাস্তা থেকেই বাথান ডাকে বাপি ডাকে

আমি কার কাছে যাবো?

বাথান একটি গ্রাম বাপি আমার বন্ধু

যেদিকেই যাবো একটাই রাস্তা

চাষাড়ে পায়ের কথা বলে ফাটা পায়ের কথা বলে।




পদবি
---------

যে কোনো একটি গ্রাম আমার পদবী
একটি গ্রাম নিয়েই আমার হেঁটে যাওয়া
গ্রাম থেকেই আমার তাপ-উত্তাপ


আমার নিঃশ্বাস

আমার নিঃসর্গ।

আমি নির্মল পিঁড়রা হলে
তুমি বাদশা চাকিরবন
আমার রাস্তার সঙ্গে তোমার রাস্তা,

একইসঙ্গে ধুলামাটি

আমাদের রচনা করে।

----১১ আশ্বিন ১৪২৯
----২৮--৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




দুঃখ বেদনা
-----------------
এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে বক

অপেক্ষা করছে বক

ওই অপেক্ষা ছুঁতে না-পারার দুঃখ
জলে ভাসাই।
বকও দু ঠোঁটে তুলে উড়তে উড়তে

অনেক দূর।

-----১২ আশ্বিন ১৪২৯
-----২৯---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার




নিবেদন
------------
নয়নে লুকানো আছে
যেন নজর না-পড়ে।যেন
বাতাসে ছড়িয়ে না পড়ে।

আমার গোপন সুগন্ধ আমারই
যেন আমার চোখের জলে
না-পড়ে। যেন

পড়ে না যায়।

----১৩ আশ্বিন ১৪২৯
----৩০---৯---২০২২
----দেবী পক্ষের পঞ্চমী তিথি
-----নির্মল হালদার




মায়া
-------

কান্নাও এক ভোর

অনেক কান্নার পরে একটি ভোর

এই ভোরের কাছে যে আসবে ফুল কুড়াতে
সেই পাবে চোখের জলে ভেজা মাটি
যে মাটি থেকে গড়ে ওঠে মায়া

মায়া এক প্রতিমা।

----১৪ আশ্বিন ১৪২৯
দুর্গা ষষ্ঠী
-----১---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




নিসর্গ প্রকৃতি
-------------------

ফুল তুলতে তুলতে বেলা হয়ে গেল

কার ফুল তুলতে তুলতে বেলা হয়ে গেল?

কে আছে কোথায়?

আমার অন্তর তো আমি গোপন করি, শুধু
আলো আঁধারে নিসর্গ প্রকৃতি

চন্দ্র সূর্যের আরতি।




কাজ
--------

আমার যে অনেক কাজ

ডালে ডালে লটকে আছে শিশির
আমার আঁজলায়  আমি ধরবো।
ফুলের মুখে পোকার চলাফেরা
আমাকে যে বলতে হবে, তোমার জায়গায় তুমি
যাও যাও

আমার যে অনেক কাজ।

আমার কাঁধেই যে সূর্য
আমাকে যেতে হবে অনেক দূর
নতুন করে জ্বর এলে,

দেখাশোনা করবে কে?

----১৮ আশ্বিন ১৪২৯
বিজয়া দশমী
-----৫--১০--২০২২
-----নির্মল হালদার




বাসা
-------
পাখির চোখের কোণে যে আলো বাসা বাঁধে
সেইতো ভোর
সেই তো আমাকে ডাকে

আমি যাই

পাখির সঙ্গে আম বন জাম বন

বট ফলের লাল রঙ সূর্যের কিরণে মেশাই

আমিও পাখির সঙ্গে কাঠ কুটো জড়ো করি

বাসা বাঁধি দিন ও রাত্রির।




শালুক
----------

এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকা শালুকের পাশে
আমিও দাঁড়িয়ে আছি, আমাদের দিকে চেয়ে
ভোরের আলো ফুটবো ফুটবো করে

আমরাই তো প্রেম

আমাদের জলেই স্নান করবে সূর্য

তোরা কে আসবি আয়
জলকেলি করবি সূর্যের সঙ্গে
চুপি চুপি শালুক পাতায় রেখে যাবি

আলো আঁধারের বিরহ।

-----১৯ আশ্বিন ১৪২৯
একাদশী
-----৬---১০---২০২২
----নির্মল হালদার




বাকল
----------
কে কে নতুন জামা কাপড় পরলো
উৎসব শেষেও আমার কাছে খবর নেই।
আমি তো চেয়েছিলাম, খড়ের সঙ্গে খড়ের বুনন,
ঘাসের সঙ্গে ঘাসের বুনন,

আমার পরিধান।

আর অবনীর মা?

আজও গাছের বাকল পরে দাঁড়িয়ে আছে
গাছের চারার সঙ্গে।

-----২০ আশ্বিন ১৪২৯
----৭---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




এক
------

এক ফোঁটা শিশিরে আমার স্নান
এক ফোঁটা আলো আমার আহার

এসো মৌমাছিরা, ধূলা আর ধূলিতে  ভেজাও
পাখার হাওয়া

এসো প্রজাপতি, আমার গায়ে ছেটাও
রঙের খুশি

এসো গো লব কুশের মা, আমার কপালে দাও
একবিন্দু মাটি।

----২৩ আশ্বিন ১৪২৯
----১০---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




সকালের পায়রা
-------------------------

ঘুম থেকে উঠেই পায়রাদের মুড়ি দিয়ে থাকি
এই গল্প পুরোনো হলেও এই গল্প নতুন
ঘুম থেকে উঠেই পায়রাদের মুড়ি দিয়ে থাকি

প্রতিদিন।

প্রতিদিন পায়রাদের পাখার হাওয়া নতুন

নিত্য নতুন খিদে।

আমিও মুড়ির সঙ্গে মেশাই কখনো ভোর
কখনো সকাল কখনো রোদ
কখনো আমার অভিমান

আমাকে কবে দেবে আকাশের কণা।

----২৪ আশ্বিন ১৪২৯
-----১১---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার





ইশারা
----------

কার ইশারায় সকাল এসেছে?

প্রথমেই আকাশ
তারপর পাখি
তারপর গাছপালা
তারপরেই,
মাটি থেকে ফসলের রব

তারপর 
কণ্ঠস্বর থেকে কণ্ঠস্বর
আমাদের বেঁচে থাকা,

আমাদের ইশারা করে।




নুন
-----

আকাশও একটা জিভ
পৃথিবী মেলে দিয়েছে।
নুন কম পড়লে,
সেই জিভ থেকে নুন পাড়ে
আমাদের সংসার

আমাদের নেই নেই সংসারে
ভালোবাসা কম পড়লে
জিভ থেকে ঝরে পড়ে
নুনের জল।

-----২৫ আশ্বিন ১৪২৯
-----১২---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার




মর্ম বেদনা
---------------

ভোরের শিশির চেয়ে আছে শুকতারার দিকে

ও শিশির শোনো,
আশ্বিনের আকাশেও মেঘ আসে মেঘ যায়
শুকতারার মুখেও পড়ে মেঘের ছায়া

ও শিশির শোনো, শুকতারার মর্ম বেদনা।





কুশল
---------

নদীতে বান এলে পাড় ভেঙ্গে যায়
সেতুও ভেঙ্গে যায়

সম্পর্ক থাকে সম্পর্কের ঠিকানায়

শুকতারা ওঠে।

আমার সঙ্গে কথা বলতেই,

শুকতারা ওঠে।

আমিও জানাই আমার কুশল,

সারাদিন পায়রাদের পাখার ঝাপটানি।

----২৬ আশ্বিন ১৪২৯
----১৩---১০--২০২২
-----নির্মল হালদার




ওম
------

সেলাই করতে করতে সন্ধে

ফুটে উঠবে তারা ফুল

আমার কাঁথা

গায়ে জড়ালেই আমার শীত গ্রীষ্ম কেটে যাবে।

২:

ছেঁড়া শাড়ির পাড় থেকে সুতো টেনে টেনে
কত আর সেলাই করবে?
তারা ফুলতো আছেই  
প্রেমের মতো স্নেহের মতো,
গভীর উষ্ণতায়।

কত আর ফোটাবে ফুল?

ছোটবেলা থেকে বড় বেলা একটাই কাঁথা,

একটা আকাশ।

-----২৭ আশ্বিন ১৪২৯
----১৪---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার





সলতে
----------

পিলসুজে ঠাঁই পেলে
একটা প্রদীপ প্রদীপ হয়ে ওঠে।

কে পিলসুজ কে প্রদীপ?

খোঁজ করতে করতে এই ভোর, ভোরের বৃষ্টি
আবছা অন্ধকার

একটা প্রদীপ জ্বালাবো

লম্বা লম্বা বৃষ্টির ফোঁটা প্রদীপের সলতে
আমার মাথায়

আমি জ্বালাবো।




ঠাঁই
------

একটা গাছের ডালে এক ফোঁটা বৃষ্টি তুমি
আমাকে দিলে না ঠাঁই।
আমি শুকনো হাওয়া,
চেয়ে থাকি তোমার দিকে।

-----২৮ আশ্বিন ১৪২৯
----১৫---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার









কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ