এই ক্ষয় হয়ে যাওয়া সময়ে
----------------------------------
রাত হয়ে গেছে।
কোনো কোনো ঘরে আলো জ্বললেও নিঝুম লাগছে চারপাশ।।
আকাশে মেঘের চলাফেরা। বৃষ্টি না হলেও বাতাসের শীতলতা।
এই মুহূর্তে আমি চাইছি না, ছেলেটি চলে যাক আমার বাড়ি থেকে। রাত অনেক হয়ে গেছে।
ছেলেটির মেস-বাড়ি অনেকটাই দূরে।
না গেলেই ভালো হবে। চিন্তা করছি আরও, ছেলেটি খাবে কোথায়? মেস--বাড়িতে রাতের খাবার রাখতে বলা হয়েছে তো?
এইসব সাত পাঁচ ভাবছি যখন,
ছেলেটি বললো, সে যাবেই। যত রাতই হোক অসুবিধে নেই।
আমি ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন। তাকে বললাম, তুই না গেলেই ভালো হবে। সে শুনবে না।
চলে যাওয়ার জন্য যখন দরজার কাছে, আমি জানতে চাইলাম, তোর টাকা লাগবে? সে বললো---হ্যাঁ।
আমি তাকে একশো টাকার একটি নোট দিতে গেলে সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে----
আমাকে দশ টাকা দাও।
আমি সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইলাম,
দশ টাকায় কি হবে রে?
ডিমের ভুজিয়া।
ছেলেটির আরেকটি গল্প-------
ছেলেটি দরিদ্র ও মেধাবী।
হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে সে
পুরুলিয়া শহরে এসেছে পড়াশোনা করার জন্য।
মেস-বাড়ির খরচ, টিউশনি খরচ, নিজের হাত খরচ করতে অনেকটাই টাকা লাগে। পরিবার থেকে কোনো টাকা পায় না সে।
ছেলেটি মাধ্যমিকে তাদের গ্রামের স্কুলে প্রথম হয়েছিল। কারো কারো নজরে এসেছিল সে । তখনই কোনো সংস্থা তাকে জানিয়েছিল, সে যদি কলেজে পড়তে চায়, খুব সামান্য হলেও তারা তাকে স্কলারশিপ দেবে।
তো স্কলারশিপ বাবদ এক হাজার টাকা পেয়ে থাকে প্রতি মাসে। এই এক হাজারে কোনো ভাবেই চলে না তার।
আমাকে বললো টিউশনি জোগাড় করতে। আমি এ বিষয়ে অত্যন্ত অসামাজিক। আমি তাকে বললাম, দেখি অন্য কোনো ভাবে যদি টাকা জোগাড় করে দিতে পারি-----।
আমার এক বন্ধুনিকে বলতেই,
সে ৫০০ টাকা দিতে রাজি। কিন্তু টাকা তো লাগবে আরো। কাকে বলবো কাকে বলা যায় ভাবতে ভাবতে আরেক বন্ধুনিকে সমস্ত জানিয়ে সাহায্যের কথা বললাম। এই বন্ধুনিও আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললো, সে এক হাজার টাকা প্রতি মাসে দু বছর দেবে।
এদিকে আরও দুটি ছেলে আমাকে বলেছে সাহায্যের জন্য।
এই দুজনও দরিদ্র মেধাবী। গ্ৰামের ছেলে।
শহরে থেকে লেখাপড়া করে।
সাহায্য করতে পারে ক্ষমতাও রাখে এরকম অনেক নাম মাথায় ঘুরলেও আমি আর কারোর কাছে আর্জি জানাই না।
সেই ছেলেটিকে বললাম, তুই তো
৫০০ টাকা বলেছিলি। শুরু করেছিস পেতে------তাহলে বাকি এক হাজার টাকা তোর দুই বন্ধুকে দিয়ে দিলে ভালো হয়। সে তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেল।
অথচ সে বলতেই পারতো --------
তুমি তো আমার জন্য টাকা চেয়েছিলে। আমি দেবোনা কাউকে।
আজকের দিনে এরকম ছেলে দেখা যায় না। যখন আমরা নিজের স্বার্থটুকু ছাড়া আর অন্য কিছু বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করি না, তখন এই ছেলেটি একটি দৃষ্টান্ত।
চেয়েছিলাম তো ওই ছেলেটির জন্য দুজনের কাছে দেড় হাজার টাকা। এখন সেই টাকা তিন জনে ভাগ করে নেবে।
ক জন ভাগ করে খায়?
চায়ের দোকানে চা-বিস্কুট খেতে গেলে কখনো কখনো চেয়ে থাকে দু একটি কুকুর।
ক'জন পেরেছি কুকুরকে বিস্কুট দিতে?
নানা হতাশা দুঃখ বিষাদের মাঝে
ওই ছেলেটি আজকের দিনে আমার মুখের সামনে হ্যারিকেন নিয়ে আসে।
------২২ আষাঢ় ১৪২৯
-----৭----৭----২০২২
-----নির্মল হালদার
ছবি : কল্পোত্তম




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন