তোদের সরল রাস্তাটি
---------------------------
অভাব অনটন অসহায়তা থাকার পরেও পুরুলিয়ার গ্রাম গুলি খুবই সুন্দর। যেমন সুন্দর মিলন।
মিলনের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল পিঁড়রাতে। পিঁড়রা কাঁসাই পারের এক জনপদ। এখানের মানুষ বছরে একবার ধানের চাষ করলেও ১২ মাস সবজির চাষ করে।
পিঁড়রার মানুষের কাছে কাঁসাই হলো কলতলা। বাসন মাজা কাপড় কাচা স্নান প্রাতঃকৃত্য। তা বাদেও গরু-কাড়া ধোওয়ানো ইত্যাদি ইত্যাদি।
স্বপন যাবেন নাকি পিঁড়রা চাকিরবন? একইসঙ্গে হয়ে যাবে রবীন্দ্রনাথ মাহাতর বাড়ি সুজানডি।
মিলনদের বাড়িতেও নিয়ে যাব।
মিলনতো বন্ধু হয়ে গেছে আমার।
একবার মিলনের ঠাকুমাকে বললাম----আজ তোমাদের ঘরে খাওয়া দাওয়া করবো। সেও বললো, ঠিক আছে ঠিক আছে।
মিলনের ঠাকুমার সঙ্গে পরিচয় করেছি। তার মা বাবার সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়নি।
মিলনের দাদা কখনো কখনো কাজের শহরে যায়। বেশিরভাগ দিন ঘরেই থাকে। তাকেও দেখিনি।
এখন তো ভুট্টার মরশুম।
স্বপন, ভুট্টা পোড়া খাবেন?
কোনো কোনো পরিবারে গোটা গোটা ভুট্টা সেদ্ধ খাওয়া হয়ে থাকে।
আমার স্কুল বেলাতে তুলিনের এক বাড়িতে ভুট্টা খাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। তখন আমার ভুট্টা সেদ্ধ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।
মিলন নিশ্চয়ই আপনাকে ভুট্টা পোড়া কিংবা সেদ্ধ খাওয়াবে নিশ্চয়ই।
ভুট্টার দানায় দানায় কত দুধ।
কচি ভুট্টা দেখলেই আপনি দেখতে পাবেন দুধের আভাস।
শরৎকালের মেঘের মতো।
এই বর্ষাকালেই ভুট্টার ফলন।
এরপরেই তো শরৎ। শরতের পূর্বাভাস ভুট্টা থেকেই টের পাওয়া যায়। যেমন, মিলনের মুখ থেকেই টের পাই, কাঁসাই নদীর লাবণ্য।
সারাবছর জল না থাকলেও কাঁসাই আমাদের একমাত্র নদী। পুরুলিয়ার মানুষের সুখ দুঃখের সাক্ষী হয়ে দিনরাত্রি আছে।
পুরুলিয়া ছেড়ে কোথাও তো গেলাম না আর। কোথাও তো নেই আর মিলন কিরাত অসিত বাপি অবিন। নেই নেই দুলালি মাহাতানের আঁচল। কচড়ার মত সুস্বাদু ফল।
মিলনদের ঘরের চালাতে দেখতে পাইনি ডিংলার লত। উঠানে কি আছে সজনে গাছ?
মিলন আমাকে প্রজাপতি না দেখালেও বুয়ান গাছের মাথায় ফড়িংকে উড়তে দেখেছি।
গরু ছাগল ভেড়া নিয়ে মিলন মাঠে না গেলেও আমি দেখেছি, তরুণ রাখাল।
কালের রাখাল সে নাইবা হলো কোনো কিশোরীর কাছে সে একমাত্র রাখাল। চুলের চূড়ায় বেঁধেছে মেঘ রাশি রাশি।
বাঁশিও তার নাইবা থাকুক, সে কথায় কথায় ঝুমুর গাইতে পারে।
হ্যাঁ রে মিলন, তোদের গাঁয়ে ঝুমুরিয়া আছে তো? তুই নিজে স্বপনের কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত শুনবি?
তোর মোবাইলের রিংটোনে তো রবীন্দ্রনাথের গান বাজে। আর অন্তরে কী বাজে কোথায়, কখনো খোঁজ করিস নি।
তোদের গ্রামের শুরুতেই কোন্ গাছের হাওয়া বয়? লোহারশোলের সাপধরা লোকদের দেখলে তোর ভয় করে না?
মিলন, তুই একদিন কাঁসাই থেকে মাছ ধরছিলি । আমি তোর পিছন দিক থেকে হেঁটে হেঁটে মুটরুডি।
তুই আমাকে দেখতেই পেলি না। তবে নদী থেকে তোদের ঘর যাওয়ার রাস্তাটি আমাকে দেখতে পেয়েই জানতে চাইছিল------
আমি কেমন আছি?
আমি তো ভালো আছি মিলন।
আমি ভালো থাকবোই। তোকেও ভালো থাকতে থাকতে আমাকে দিতে হবে তোদের সরল রাস্তাটি।
আসছে জন্মে তোদের গ্রামেই তো আসবো।।
------২২ আষাঢ় ১৪২৯
------৭---৭----২০২২
------নির্মল হালদার
ছবি : সংগৃহীত









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন