হাতের তালুতে লাটিম ঘুরবে
-----------------------------------
চিপিদা থেকে সাইকেলে পুরুলিয়া শহরে এসে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কাজ।
রাজমিস্ত্রিই ঠিকাদার। মালিক দৈনিক মজুরি আড়াইশো টাকা দিলেও ঠিকাদার কুড়ি টাকা কেটে রাখে।
হাতে রইল ২৩০ টাকা।
কি হবে রে ভাই?
চাল নিবি না নুন নিবি? ছেলাছুলিদের জন্য ছেলাভুলাও নিতে হয়।
সাইকেল চালাতে চালাতে জাদু দেখছিল, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে এলেও চাষ আবাদের কাজ শুরু হয়নি।
বৃষ্টি নেই।
একটা ধান জমিতে গোবরের সার
গরুর গাড়ি থেকে ফেলা হচ্ছে। আরেকটা ধান জমি থেকে ঘাস ছিঁড়ছে এক মহিলা।
বৃষ্টি না হলেও ছিটকাছিটকি জলে
মাঠে মাঠে ঘাস। ফড়িংয়ের নাচানাচি। বৃষ্টির পোকারাও উড়ছে।
মেঘ উড়ছে।
জাদুর সাইকেল উড়ছে। আজ দেরি হয়ে গেছে। ঠিকাদার চ্যাঁচামেচি করবে।
কাল সন্ধ্যেবেলা মদটা টুকু বেশি হয়ে গেছে। ঘুম ভাঙতে ভাঙছিল না। বউ এসে ঠেলা দিতে ধড়পড় করে উঠে পড়েছে।
এই এক নেশা হয়েছে, কাজ থেকে ফেরার সময় একটা বোতল চাই।
বাংলা মদের দোকান রাস্তার ধারেই। সাইকেলটা সোজা মদের ভাটিতে ঢুকে পড়ে। ঘরে ফিরে কোনো ভাবে দু'মুঠা খেয়ে শুয়ে পড়ে।
বউ কি করছে ছেলেপুলেরা ঘুমিয়ে গেল নাকি, জাদু খোঁজ করে না। চলে যায় বিছানাতে।
বউয়ের শুকনো চোখ ভিজে ওঠে।
বউয়ের মনে হয় সে বোধহয় যন্ত্র হয়ে গেছে। স্বামীর সঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয় না। কেবল পাশে শোয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তার।
তার বাপ দেখে শুনে বিহা দিয়েছিল। আজ মনে হয়, কেটেকুটে কাঁসাইয়ের জলে ভাসিয়ে দিতে পারতো।
সারাদিন তো জাদুর কাজ। বউয়ের সঙ্গে কখন আর কথা বলবে! একেক দিন বেহেড মাতাল হয়ে ঘরে ফেরে জাদু।
তার বাপ এত বড় ছেলেকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারতে বাধ্য হয়েছিল। মা বলেছিল, জাদুরে মদে মদে তোর বুকটা যে ঝাঁঝরা হয়ে গেল।
জাদুর বউ ললিতা গোপনে কাঁদে।
ছেলে-মেয়ে দুটো মায়ের দিকে চেয়ে থাকে।
একদিন তো সাইকেল থেকে পড়ে গেছলো জাদু। ফেটে গেছলো মাথা। রাস্তার লোক কাজের লোক যারা তাকে চেনে পৌঁছে দিয়েছিল ঘরে।
সেই রাতে ঘরের কেউ কিছু খায়নি। জাদুর ছেলেমেয়ে দুটো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছলো।
ঝিঁঝিঁ পোকারাও কেঁদেছিল।
ডিবরিতেও তেল ছিল না।
চার দিক অন্ধকার। আকাশের স্তব্ধতায় ললিতার ভয় ভয় করছিল। সে বাইরে এসে সজনে গাছ ধরে ফুঁপিয়ে ওঠে।
সে অনেকবার ভেবেছে বাপের ঘর চলে যাবে। তারপরে ভেবেছে, বাপের ঘর তো পরের ঘর। এই শ্বশুরের ভিটাতেই স্বামীর ঘরেই ছেলে মেয়েকে মানুষ করবে।
ললিতা স্কুলে পড়তে পড়তে সেলাই মেশিনের কাজ শিখেছিল।
সেই কাজের কথা মনে রেখে সে ঋণ করে একটা সেলাই মেশিন কিনে ফেললো।
গাঁয়ের বউ -বিটিদের সায়া ব্লাউজ করলেও দু'চারটে পয়সা। তার স্বামী খরচ খরচা না দিলেও ললিতা কোনোভাবে সংসারটাকে টেনে নিয়ে যাবে।
তার ছেলেটা হাতের তালুতে লাটিম ঘোরাবে।
------২৭ আষাঢ় ১৪২৯
------১১---৭---২০২২
-----নির্মল হালদার
ছবি : কল্পোত্তম













কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন