মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০২২

সুবোধের পলেস্তরা



সুবোধের পলেস্তরা
------------------------

আমার বাড়ির পাশের এক বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল।
কাজ করছিল অনেক লেবার।
আমি আমার স্বভাব মত সবার সঙ্গে পরিচয় করি।
তারমধ্যে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই, সুবোধের সঙ্গে। গৌরাঙ্গর সঙ্গে।
মিঠুনের সঙ্গে।

সুবোধ আর মিঠুন " কুশটাঁড় " এ
থাকে। গৌরাঙ্গ থাকে মনিপুর গ্রামে।
সবাই দিনমজুরির কাজ করে।
সুবোধ অবশ্য রাজমিস্ত্রি।ইঁটের পরে ইঁট সাজিয়ে ইমারত তৈরি করে। সে অবশ্য নিজে কুঁড়ে ঘরেই। কোনো সন্তান নেই, স্বামী স্ত্রী একা একা দিন  গুজরান করে। এক কথায় খাটে খায়।
মাহাত সম্প্রদায়ের হলেও সুবোধের ধান জমি নেই। পৈতৃক যেটুকু ধান জমি আছে সুবোধের দুই ভাই ভোগ করে। এ বিষয়ে সুবোধ লাঠালাঠি না করে মুখ বুজে সহ্য করে যায়।

দৈনিক কাজ করে যেটুকু পায়
সংসারটা চলে। কাজ থেকে ফেরার সময় বিকেলের বাজারে সস্তার সবজি কিনে ঘরে যায়।

এসব তো  সুবোধের মূল কাহিনী।

এ বাদে সুবোধ   প্রতিদিন সকালবেলা আমার ঘরে । আমার ঘরে এক আধটু কাজ করে নিজের কাজে যায়।

আমি তাকে চা--জলখাবারের সামান্য পয়সা দিয়ে থাকি।
সেইটা কথা নয়, কথা হলো তার
সংবেদনশীল মনের।

প্রতিদিন রাত্রে সকালেও আমি তাকে ফোন করি। কোনো গভীর কথা নয়, দু একটা মামুলি কথা -----কি করছো সুবোধ? খাওয়া দাওয়া হয়েছে? অথবা তোমাদের গ্রামে চাষবাস শুরু হলো?

আমার ফোন না পেলে সুবোধ নিজেই ফোন করে। কখনো কোনোদিন আমাকে ফোনে না পেলে সে ভাবে আমি অসুস্থ।

দিনকাল জটিল হয়ে গেলেও
সুবোধ আছে। কখনো কখনো রাত্রি বেলায় সুবোধ আমার কাছে জানতে চায় আমি খেয়েছি কিনা।

আমার চারপাশে তো অনেক বন্ধু। আত্মীয়। ক'জন আর আমার খোঁজ করে। এখানে অবশ্যই তপন পাত্রর কথা বাদ দিয়েই বলছি। কেন না, তপন আমার খোঁজ করে নিয়মিত। দুপুরবেলা তো করবেই। আমি খেয়েছি কিনা, প্রতিদিন জানতে চায়।

আত্মিক সম্পর্ক থাকলেই যোগাযোগ থাকবে, টান থাকবে,
একদম ভুল।

সুবোধের চাহিদার কথা , আমার কাছে প্রত্যাশার কথা আমি জানি না। তবে শীতের সময় তাকে একটা কম্বল দিয়ে থাকি।

আমার ঘরে ব্যবহার না করা একটা টেবিল ফ্যান ছিল। সুবোধ দেখেছে , ফ্যানটা ঘরের এক কোণে পড়ে থাকে।
একদিন সে মুখ ফুটে বললো, ফ্যানটা আমাকে দিবে?

পাখার হাওয়া।

তাকে কতটুকু দিতে পেরেছি আমার গায়ের হাওয়া? ফ্যানটা তাকে দিয়ে দিলেও আমার মনের হাওয়া তাকে কতটুকু দিতে পেরেছি?

আমার ঘরে এসে যদি দেখে দরজা ভেজানো আছে, সে দরজা খুলে বসবে না। আমি এসে দেখলাম সুবোধ দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বলেওছি অনেকবার-----
আমি না থাকলে দরজা খুলে বসবে। সে শোনে না।

সুবোধের চাষ বাড়ি নেই। ফলে,
শাকসবজি ফলে না। কিন্তু ঘরের উঠোনে লেবু গাছের লেবু দুটো হলেও নিয়ে আসবে। আমার মন ভরে ওঠে।
মনে হয়, সুবোধ আমার জন্যেই
গাছে ফলিয়েছে লেবু। কাগজি লেবু। সেই লেবুর রস ভাতে 
নিংড়ালে আমি সুবোধের হৃদয়ের সুবাস পাই।

সুবোধ আরেকটা কথা আমাকে বলে-----জলটা বেশি খাও। বেশি খাও। 
সে জলের গুণ জানে। আরো জানে, বালি সিমেন্ট ইঁটে ঘর উঠলেও ভালোবাসা থেকে ভালোবাসায় মানুষ উঠে দাঁড়ায়।

সুবোধের কর্ণিক আমাকেও পলেস্তরা করে।


-----২৭ আষাঢ় ১৪২৯
------১২----৭----২০২২
------নির্মল হালদার







ছবি : বাপি কর্মকার


















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ