বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

শালুকের লাল রঙ



শালুকের লাল রঙ
------------------------

লাল শালুক হাতে কিশোরী কি বলছে কে জানে!  

আমি চেয়ে আছি শুধু। 

অনেক অনেক দিন আগে ফুটে ওঠা পদ্মের দিকে চেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, পদ্মের উপরে শয়ন করবো।

পদ্মের গৌরবে পদ্ম পাপড়ি মেলবে। পদ্ম যদি আমাকে অগ্রাহ্য করে , তবে পদ্ম পাতায় শুয়ে পড়বো।

আমার কানে কানে মৌমাছিরা এসে কথা বলবে।

এই এখন এই কিশোরী বলতে চাইছে, সে পুকুর থেকে শালুক তুলে বাজারে যাবে।

বাজারে শালুক ফুল বিক্রি হয়ে থাকে।

কে কেনে? কারা কেনে?

পুজোতে লাগেনা  শালুক ফুল।

তবুও শালুক বিক্রি হয়। আর আমাদের কিশোরীও দুটো পয়সা পেয়ে যাবে।

কিশোরীর মা বলে, বাঁধে বাঁধে এত শালুক ফুটে -----হ্যাঁলো মীনা শালুক তুলে বাজারে যেতে পারিস না?তোর দাদা তো ঘরের কোনো কাজে লাগলো না। ছাগল ভেড়ি ঘুরাতে বললে , মুখ ঘুরায় পালায়।
কুলির মুড়াতে মোবাইল ঘাঁটে।তোর বাপে  কতদিক দেখব লো!

শালুক বিকে  দুটা টাকা আনলেও উপকারে লাগে।

কিশোরী মীনা নামমাত্র স্কুলে যায়।
পেট ভরে যায় মিড ডে মিলে। ঘরে কোনোদিন বইয়ের পাতা উল্টে দেখেনা।

আজ ভোরেই উঠেছে সে।
শালুক কাড়তে হবেই। বাজারে যেতে হবেই।

চুনারডি থেকে মিশন মোড়। এখান থেকেই বাসে উঠে চকবাজারের কালী মন্দির।

মীনা এই প্রথম বাজারে যাচ্ছে।
আগে কোনো দিন কোনো কিছুই বিক্রি করেনি। একবার মায়ের সঙ্গে মুলুন বিক্রি করতে বাজারে এসেছিল। আজ তাকে একা একা
গামছায় পেতে বিক্রি করতে হবে। শালুক ফুল।

একজন এসে মীনার কাছে জানতে চায়-----পদ্মফুল নাইরে?
মীনা ঘাড় নাড়ে। বাজারে একা একা বসে তার লজ্জাও লাগছে।
কিন্তু লজ্জা করলে হবেনা। মা বলে দিয়েছে ৫ টাকায় দুটো ফুল।

বেল পাতা জবা টগর গাঁদা ফুলের মাঝে শালুক ফুলের কদর নাই।
শালুকের বিক্রি ভাদুর সময়।
শালুক ফুলে ভাদুকে সাজায় গ্রামের মেয়েরা।

এখনতো আষাঢ় মাস।

এক মহিলা এসে দুটো শালুক কিনতে চাইলো দু টাকায়। মীনা দিলো না।  যদিও এখনো অব্দি একটি শালুকও কেউ কিনে নিয়ে যায়নি।
অনেকেই আসছে দেখে দেখে চলে যাচ্ছে।

মীনার পেট গুড় গুড় করে । খিদে পেয়েছে। তার কাছে বাস ভাড়ার টাকা টুকু আছে।

একটা লোক মীনার কাছে বসে ফুলগুলি নড়াচাড়া করে। এটা সেটা কথা বলে। আর মীনার উদ্ভিন্ন যৌবনের দিকে বুকের দিকে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর মীনা টের পেয়ে উঠে দাঁড়ায়। এবং লোকটিকে বলতে বাধ্য হয়, তুমিতো লিবে নাই বাবু। তুমি এখান থেকে যাও।

প্রতিদিন ফুল বিক্রি করতে আসা এক মহিলা এসে মীনাকে বলে----
হ্যাঁ বিটি আর কৎ ক্ষণ রইবি বসে? সব ফুল গুলান আমাকে দিয়ে যা কুড়ি টাকায়।

মীনা ভাবে ফুলগুলার দাম ৫০ টাকা হবেই, মা বলে দিয়েছে। এখন যদি ২০ টাকায় দিয়ে যায় মা গাল দিবেক।

ফুলতো বিক্রিও হচ্ছে না। কী করবে সে? মীনার চিন্তা জটিল হয়ে পড়ে।

আমি শালুক ফুলের প্রেমিক হলেও শালুক কিনতে পারবো না। আমি দুটো শালুক নিতে পারি।
আমাদের ভরা কলসির গলায় বেঁধে দেবো।
বেশ লাগবে দেখতে।

মীনাকেও উদ্ধার করতে হবে।

এদিক ওদিক চেয়ে দেখি, আমার এক বন্ধু ফুল কিনছে। খুব বড় মনের মানুষ না হলেও, তার একটা হৃদয় আছে মেলামেশা করতে গিয়ে জেনেছি। তাকে গিয়ে বললাম-----সুবু তোকে আজ ২০ টাকা খরচ করতেই হবে। সে কারণ জিজ্ঞেস করতে বললাম, তোকে শালুক ফুল নিতে হবে। প্রথমে সে না না করলেও আমার সব কথা শুনে, ২০ টাকায় দশটা শালুক ফুল নিয়ে নিলো।

মীনার মুখে মৃদু হাসি।

আর সুবু আমাকে বললো, এভাবে কতজনের আর উপকার করবে?
আমি হাসতে হাসতে বললাম-----
শালুক ফুল ফুটে আঁধার রাতে----
তার মূল্য দিতে হবে না! 

ভালোবাসতেও হবে।


------২৮ আষাঢ় ১৪২৯
-------১৩----৭-----২০২২
------নির্মল হালদার







ছবি : অভিজিৎ মাজী



















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ