আমার ছোট্ট বন্ধু পালক।
বাজারে গেলেই আমার সঙ্গে।
নানা রকম বায়না।
হাঁটতে না পারলে, কোলে নাও।
আমি পেরে উঠি বা না উঠি
আমি তাকে কোলে তুলি।
এক এক সময় মনে হয়, পালককে কাঁধে চড়িয়ে মেলা দেখাতে নিয়ে যাব।
মেলাতো যাই।
ঘরের নিকটে রাস মেলা।
কার্তিক অগ্রহায়ণ।
সকাল হলেই পালক আমাকে বলবে----ডোডো দাদু আজ রাস মেলাতে আমাকে হেলিকপ্টার কিনে দেবে।
আমি জানতে চাই-----হেলিকপ্টার কেন?
সে বলে----খেলবো।
পরের দিন সকালে ----ডোডো দাদু
আমাকে বন্দুক কিনে দেবে আজ।
আমি জানতে চাই----বন্দুক কেন? আমার খুব ভয় করে।
পালক বলে----আমরা তো খেলব।
আমি তখন বলি---খেলতে খেলতে আমাকে মারবে না তো?
সে চুপ থাকে।
সবজি বাজারে যাই।
পালকের হাত ধরেছি।
যাদের আমি মাসি মাসি বলি, তাদের কাছে দাঁড় করিয়ে পালকের সঙ্গে পরিচয়।
পালকের তো দিদিমা নেই। ঠাকুমা নেই। পিসি নেই মাসি নেই। তাই, বাজারের সবজি বিক্রেতাদের কাছে নিয়ে এসে, কেউ কাকু কেউ জেঠু। কেউ দিদা। কেউ ঠাকুমা।
কেউ কেউ পিসি মাসি।
একটা সম্পর্কের সেতু তৈরি।
মা-বাবার বাইরেও আরো যে কত সম্পর্ক আছে পালক জানুক।
যে মহিলা পেয়ারা বিক্রি করছে, সে পালকের হাতে ধরিয়ে দেয় একটি পেয়ারা।
পালক খুব খুশি হয়।
কোনো কোনো সবজি বিক্রেতাকে সেই দাম দেবে।
আমি তার হাতে ধরিয়ে দিই দামের টাকা।
এবার হয়তো দেখেছে, কোনো
মনোহারি দোকানে পুতুল ঝুলছে।
তাকে কিনে দিতেই হবে।
অনেক বুঝিয়ে সুুঝিয়ে তাকে ঘরে নিয়ে আসি।
সেই পালক আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে। সে এখন পাঁচ বছর চার মাসের এক শিশু।
সকাল হলেই স্কুলে যায়।
বাড়িতে এসে মেজাজ ফুরফুরে থাকলে ছবি আঁকে। এবং যখন তখন আমার কাছে এসে বায়না করবে-----আমাকে ওয়াটার কালার কিনে দাও। আমাকে পেন্সিল কিনে দাও। আমাকে রাবার কিনে দাও।
না কিনে দিলেই কান্না।
যেকোনো কান্না সইতে পারা কঠিন। তারপরে আবার শিশুর কান্না। তাকে অনেক সময় গল্প কথা শোনাবার চেষ্টা করেছি।
সে শোনে। মন দিয়ে শোনে। কিন্তু
একটি শিশুকে গল্প শোনাবার মত আমার ধৈর্যে কুলোয় না। এ কারণেই, তাকে শোনানো হয়নি পঙ্খীরাজের গল্প। রাক্ষস রাক্ষসীর গল্প।
অথবা পাখিদের গল্প।
আর যদি শোনাতে চাই সে শুনবে বলে মনে হয় না। তার মা বাবা তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে মোবাইল।
মোবাইল থেকে খেলা খেলে।
হার-জিতের খেলা।
আমি দেখতে পাই, আমার আলো আঁধারের গলিতে আমি এক্কাদোক্কা খেলছি। চোর পুলিশ খেলছি।
আমি ধুলো খেলা খেলছি রাস্তায়।
পালক বড় হয়ে উঠছে ক্রমশ।
আমার ঘরে হঠাৎ হঠাৎ ঢুকে পড়ে। আলমারি খুলে খুঁজে বেড়ায় তার মনোমত সামগ্রী।
নতুন কলম দেখলেই সে নিয়ে পালাবেই।
আমি বারণ করি না।
কখনো কোনো দিন আমার জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসে। সিঁড়ির গেটের বাইরে থেকে ডাকবে---ডোডো দাদু ডোডো দাদু ------
প্রথম যেদিন নিয়ে এসেছিল
আমি ঘরে ঢুকে কেঁদে ফেলেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল----পালক আমার পিতা।
সকালে যখন বাজার করতে যাই,
পালক ঘরে থাকলে তার কাছে জেনে নিই, তার জন্য কী আনতে হবে?
আজ যেমন বললো----কিছু আনতে হবে না।
আমি এক মুহূর্তের জন্য মুষড়ে
গেলাম। পালকের জন্য সকালবেলা কেক চকলেট লজেন্স নিয়ে আসা আমার প্রতিদিনের অভ্যেস।
আমি বারবার জানতে চাই---
বলো কী নিয়ে আসবো বলো?
সেও বারবার " না " করে যায়।
পালক ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।
তাকে একদিন বলেছিলাম---
তোমার জন্য নিয়ে আসবো রাজকন্যা।
তবে কি আর আনতে হবে না?
পালক আমার পিতা।
পিতার জন্য কিছু নিয়ে আসতে নেই? পিতার কাছে কিছু চাইতে নেই?
পালকের কাছে দিয়ে যেতেই হবে একটি শাল গাছ।
তার পছন্দ না হলে একটি শিমুল গাছ। তাও পছন্দ না হলে একটি করে আমজামের গাছ।
কবে দেবো কবে?
বেলা---১--৩৮
-----১৩ ভাদ্র ১৪২৯
-----৩০---৮----২০২২
------নির্মল হালদার


























